চাঁদপুরে বিভিন্ন স্থানে ময়লার ডাস্টবিন-স্টেশন, শহরের সৌন্দর্য ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে

চাঁদপুর শহরে প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের ব্যবহার্য বর্জ্যের পরিমাণ। এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সামলাতে পৌরসভা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করেছে বড় বড় ময়লার ডাস্টবিন ও ময়লার স্টেশন। কিন্তু এই উদ্যোগের সুফল যতটা নয়, ভোগান্তি যেন তার চেয়েও বেশি।

শহরের নতুন বাজার সিএসডি গোডাউনের সামনে একটি বড় ডাস্টবিন, ছায়াবাণী চাররাস্তার মোড়ে একটি, ঘোষপাড়া পোলের পশ্চিম পাশে একটি এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, সাবেক স্ট্যান্টরোডের পৌর ঈদগাহ মাঠের কোনায় আরও একটি ময়লার স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। সবগুলো মিলিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেই এসব ডাস্টবিনের অবস্থান। পৌরসভার উদ্দেশ্য ছিল সহজে বর্জ্য ফেলা, দ্রুত সরিয়ে নেওয়া এবং শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। দিনের পর দিন এসব স্থানে জমে থাকে পচা-বাসি ময়লা। প্লাস্টিক, কাগজ, খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিনের স্তূপে ঢেকে যায় পুরো রাস্তা। সামান্য বৃষ্টি হলে এই ময়লা থেকে নির্গত হয় দুর্গন্ধময় পানি, যা রাস্তার ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ তৈরি হয়। দোকানপাট ও আশপাশের বাসাবাড়ির মানুষও ভুগছেন নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব ময়লার স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগ জীবাণু। উড়তে থাকে মাছি, ডাস্টবিনে পড়ে থাকা ময়লা ঘেটে খাবার খুঁজে কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন পশু পাখি। তাতেও ময়লার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। শহরের মধ্যে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ শুধু নান্দনিকতাই নষ্ট করছে না, জনস্বাস্থ্যের জন্যও হয়ে উঠছে মারাত্মক হুমকি।

শহরবাসীর প্রশ্ন, জেলার সুনামধন্য একটি পৌরসভার শহরে নিয়মিত ময়লা অপসারণের মতো জরুরি ও মৌলিক কাজ কেন হয় না? বিশেষ করে নতুন বাজার, ছায়াবাণী, ঘোষপাড়া বা স্ট্যান্টরোডের মতো ব্যস্ত এলাকায় দিনরাত হাজারো মানুষের চলাচল। অথচ ময়লার দুর্গন্ধ ও কাদাজলে নাকাল হতে হচ্ছে প্রতিদিন শহরবাসির।

শহরবাসি মনে করছেন, বিভিন্নস্থানে এমন বড় বড় ময়লার ডাস্টবিন বা স্টেশন স্থাপন না করে, পরিছন্নকর্মীরা যখন পৌরসভার ভ্যানগাড়ি নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করেন। তখন সেগুলো শহরের এসব ডাস্টবিনে না ফেলে সরাসরি স্বর্ণখোলা রোডের ময়লার নির্দিষ্টস্থানে নিয়ে ফেললেই আর শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়না এবং দুর্গন্ধও ছড়ায়না।

এদিকে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের অভিযোগ, এই ময়লা গুলো এসব বড় ডাস্টবিনে না ফেলে তারা সরাসরি শহরের স্বর্ণখোলা রোড এলাকায় নিয়ে ফেলতে আগ্রহী। কিন্তু পা দিয়ে চালানো ভ্যান গাড়িতে এত দূর ময়লা টানা অত্যন্ত কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই তাদের দাবি, পৌরসভা যদি এই ভ্যান গাড়িগুলোতে মোটর লাগিয়ে মোটরচালিত ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে তারা সহজেই ও দ্রুত সময়ে ময়লাগুলো সরাসরি স্বর্ণাখোলা এলাকায় ফেলে আসতে পারবে। এতে শহরের রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলোতে দীর্ঘ সময় ময়লা জমে থাকার সমস্যাও অনেকাংশে কমে যাবে।

এ সমস্যার সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা ও তদারকি জরুরি। প্রতিটি ডাস্টবিন থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ময়লা সরিয়ে নেওয়া, পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়ি ও জনবল নিশ্চিত করা, ডাস্টবিনের চারপাশে সুরক্ষা দেওয়াল বা ছাউনি দেওয়া এবং সম্ভব হলে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা এখন সময়ের দাবি। তবে মূল বিষয় হচ্ছে পৌরসভার ময়লা টানার ভ্যান গাড়ি গুলোকে মোটরচালিত করে তুললেই এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে। তখন আর এসব ময়লার ডাস্টবিন বা স্টেশন স্থাপনের কোন প্রয়োজনীতা পড়বেনা।

একটি শহর শুধু উন্নয়ন প্রকল্পে সুন্দর হয় না, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশই একে সত্যিকারের বাসযোগ্য করে তোলে। চাঁদপুরের মতো নদীমাতৃক শহরের সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে, এখনই সময়, দায়িত্বশীল ও টেকসই উদ্যোগের মাধ্যমে চাঁদপুর শহরকে ময়লা-জঞ্জালমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরীতে রূপান্তর করার।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, শহরে এভাবে উম্মুক্ত অবস্থায় বর্জ্য ফালালোর কোন নিয়ম বা সুযোগ নেই। শহরে জুড়ে যে ময়লার ভাগার রয়েছে সেগুলো আসলে আইনগত বিধি সম্মত নয়। এটি চরম ভাবে পরিবেশ দূষিত করছে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষেরই ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ১৮ জুলাই ২০২৫