শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের বেহাল দশা, বিকল হচ্ছে গাড়ি

শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের বেহাল দশা। শরীয়তপুর মনোহর বাজার থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত খানাখন্দের ভরে গেছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। রাস্তা মেরামতের দাবিতে ভেদরগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ হলেও মেলেনি প্রতিকার।

একসময় এ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর দিয়ে খুলনা-চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার কয়েক হাজার ভারি যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করত। এখন মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে হাঁটু সমান গর্তের কারণে যানবাহন উল্টে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে পুকুরের মত হয়ে পড়ছে সড়ক।

মাঝেমধ্যে মালবাহী ট্রাক বিকল হয়ে সড়কের দুপাশে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া সড়কগুলোর অনেক স্থানে কালো পিচের কোনো চিহ্ন নেই। পিচঢালা উঠে লাল ইটের কণা বেরিয়ে পড়েছে। রোদ উঠলেই ছড়াচ্ছে অসহনীয় ধুলিকণা। ২০১৪ সালের শেষ দিকে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার কাজ করা হলেও এখন দীর্ঘ ছয় বছর ধরে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে দুটি গুচ্ছ প্রকল্পের মাধ্যমে সদরের মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জের নারায়নপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সংস্কারে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই বছরের ৩০ জুন ১৫ কিলোমিটার সংস্কার শেষ করেছিল। ওই সময়ে নারায়নপুর থেকে আলুর বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের জন্য একজন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়, কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আর কাজটি করতে ইচ্ছুক ছিল না।

পুনরায় দরপত্র দিয়ে ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২৬ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেই ঠিকাদারও জানুয়ারি পর্যন্ত সড়কের ৩০ শতাংশ কাজ করেই লাপাত্তা হয়ে যায়। তখন তারা সড়কের ওই অংশের ছোট-বড় গর্তগুলো বালু ও ইট দিয়ে ভরাট করে দিয়েছিল। এরপর এখন পর্যন্ত রাস্তাটির কোনো নির্মাণ কাজ হয়নি। ফলে ছোটবড় গর্তে ভরে গেছে। মাঝে মধ্যে গাড়ি সচল রাখার জন্য শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের বিশেষ বরাদ্দ থেকে ইট পাথর বালু দিয়ে কোনোরকম মেরামতে চলছে যান।

সরেজমিনে দেখা যায়, শরীয়তপুর জেলা মনোহর বাজার, বুড়িরহাট ভেদরগঞ্জ বাজার, নারানপুর, মোল্যারহাট, কাশেমপুর, বালারবাজার থেকে ইব্রাহীমপুর ঘাট পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। বিভিন্ন জায়গায় গর্ত হয়ে আছে। জমে আছে হাঁটু সমান পানি।

খুলনা থেকে চট্টগ্রামগামী লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স চালক সালাউদ্দিন বলেন, ‘এভাবে কি ডেডবডি নেওয়া যায়। এ রাস্তায় আর আসবো না। শরীয়তপুর থেকে এ পর্যন্ত সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা। পদ্মা সেতু হয়েই তো আমার ভালো হতো। আর রাস্তার এ পর্যন্ত মনে হয় ১০০ জায়গায় গর্ত পেয়েছি। এরপর আবার গর্তগুলোতে পানি জমে আছে। রাস্তাটি সংস্কার করা খুবি জরুরি।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সড়কটি দিয়ে এক বছর আগেও হাজার হাজার ট্রাক, বাস যেত। এখন সড়ক ভাঙা। বিভিন্ন স্থানে গর্তর কারণে গাড়ি একেবারেই চলতে দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে গাড়ির বিভিন্ন লোহার সরঞ্জাম ভেঙে যায়। দু-তিন দিন গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে থাকে। মালামাল নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক সময় কাঁচামাল নিয়ে গাড়ি নষ্ট হলে মাল পচে যায়।

মৃধাকান্দি এলাকা গিয়ে দেখা যায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক দুদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। গাড়িটির হেলপার রবিউল মাল বলেন, আমরা খুলনা থেকে রড নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছি। আগে থেকেই এ রুটেই চলাচল করছি। তবে দীর্ঘ ছয়বছর ধরে আমাদের গাড়িটি অনেকবার ফেঁসে গেছে। আজও কাশেমপুর পার হয়ে মুধাকান্দিতে এসে স্লিপার ভেঙে গেছে। চালক গাড়ির মাল কিনতে গেছে ঢাকায়। আমি বসে আছি। কবে গন্তব্যে ফিরে যাব কে যানে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, শরীয়তপুর-চাঁদপুর চার লেনের সড়কের কাজ চলমান আছে। তাই পুরোনো সড়কটিতে মেরামতের কোনো বরাদ্দ আসছে না। এ কারণে সড়কটির বেহাল দশায় পড়ে আছে দীর্ঘ সময় ধরে। তবে আমাদের সড়ক বিভাগের বিশেষ বরাদ্দ থেকে মাঝে মধ্যে ইট পাথর বালু দিয়ে সড়কের গর্তগুলা ভরাট করা হয়। চারলেন সড়কের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। চারলেন রাস্তার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আপাতত দুইলেন রাস্তার কাজ সম্পন্ন হবে। এখন যদি কোথাও নতুন করে সড়কটি ভেঙে গর্ত তৈরি হয়, তাহলে আবারো মেরামত করা হবে। (জাগো নিউজ)

Share