সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার গল্প ‘শরীফ থেকে শরীফা’ প্রসঙ্গে নেতিবাচক বক্তব্য প্রদান করায় এবং জনসম্মুখে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শিক্ষক মাহতাব এবং বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রোববার (২১ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে আর ক্লাস নিতে না যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসিফ মাহতাব।
চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ বিভাগও। তবে তারা কারণটা পরিষ্কার করেনি।
রোববার রাতে নিজের ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। তিনি জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তিনিও আর ক্লাসে ফিরবেন না।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে আসিফ মাহতাব লিখেছেন, আজ আমি ব্র্যাকে রেগুলার ক্লাস নিয়েছি। আমাকে (রাত ১১টা) এইমাত্র ফোন করে জানানো হয়েছে, আমি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস নিতে না যাই। আমি জানি না, হঠাৎ কেন তারা এই সিদ্ধান্ত নিলো। আমাকে কোনো কারণ জানানো হয়নি।
গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক গল্প পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ জানান শিক্ষক আসিফ মাহতাব। তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার সামনে ওই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসিফ মাহতাবের এমন কর্মকাণ্ডের কারণেই তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাতিয়া ফাহমিদ বলেন, তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে। কেন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। সেখানে বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।
এদিকে, রোববার রাতে শিক্ষক আসিফ মাহতাবের সঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার ফোনালাপের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কল রেকর্ডে শোনা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই কর্মকর্তা শিক্ষক আসিফকে আগামীকাল (সোমবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাওয়ার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তটি জানাচ্ছেন।
তখন শিক্ষক আসিফ এ কলের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিপরীত পাশে থাকা ব্যক্তির কাছে অফিসিয়াল বার্তার কথা জানতে চান। তিনি বলেন, আগামীকাল আমার ক্লাস আছে। সেক্ষেত্রে আমাকে এটার সত্যতা নিশ্চিত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিপরীত দিক থেকে বলতে শোনা যায়, একচুয়ালি আমি এ সেকশনেই আছি। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমাকে আপনার এ তথ্য জানানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি আপনাকে সে তথ্যটাই জানিয়ে দিলাম। যদি অফিসিয়াল কোনো নোটিশ থাকে, পরে সেটি শেয়ার করব।
বিষয়টি নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছে, ওই স্ট্যাটাস তাদেরও নজরে এসেছে। তবে তাকে ক্লাসে না যাওয়ার জন্য যে নির্দেশনার কথা স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি তারা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেনি।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ২৩ জানুয়রি ২০২৪