নির্ধারিত নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে শপথ নেবেন মৌলভীবাজার-২ থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান।
এর মধ্যে সুলতান মনসুর গণফোরামের প্রার্থী হলেও নির্বাচিত হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে। অপরদিকে সিলেট-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার প্রার্থিতা হাইকোর্ট বাতিল করলে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে সমর্থন দেয় বিএনপি।
রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচিত এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দু’জন শপথ নেবো। তবে তাড়াহুড়োর কিছু নাই। এখনও সময় আছে। ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নিলেই হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে সুলতান মনসুর বলেন, আমি অসুস্থ, হাতে ফ্র্যাকচার। ব্যান্ডেজ লাগানো। সুস্থ হতে এখনও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। শপথের তো এখনও বেশ সময় আছে। বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও সিদ্ধান্ত নেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে তো সবাই আলাদা আলাদা দল। আমাদের সিদ্ধান্ত ‘অবশ্যই পজেটিভ’ হবে।
ধানের শীষ প্রতীকে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আইনি কোনো সমস্যা হবে কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এটা কোনো সমস্যা হবে না। বিএনপি যদি সংসদে যেত, আর আমি যদি তাদের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট দিতাম সেক্ষেত্রে সমস্যা হতো। এখন যেহেতু বিএনপি সংসদে যাচ্ছে না। তাই আমার শপথে কোনো সমস্যা হবে না। আমি তো গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি।
সুলতান মনসুর বলেন, আমার এলাকার জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে সংসদে কথা বলার জন্য। তাদের জন্য কাজ করতেই আমাকে সংসদে যেতে হবে।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ) আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে জয় পান ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি।
ইতোপূর্বে ধানের শীষ প্রতীকের কোনো প্রার্থী ওই আসনে কখনও বিজয়ী হতে পারেননি। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে যখন বিএনপি সরকার গঠন করেছিল তখনও এ আসনে জামানত হারায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী।
এবার এই আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হাড্ডাহাডি লড়াই করে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ ত্যাগী দলটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে সুলতান মনসুর নৌকা প্রতীক নিয়ে একই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের নেতা মোকাব্বির খান বলেন, আমাদের দলের (গণফোরাম) প্রেসিডেন্ট চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি আজ (রোববার) রাতে দেশে ফিরবেন। তিনি আসার পর আমাদের দলীয় ফোরামের বৈঠক হবে। সেখানে শপথের বিষয়েও আলোচনা হবে।
‘তবে এ বিষয়ে (শপথ) আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। ফোরামের সিদ্ধান্তও ইতিবাচকই হবে বলে আশা করি।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভাঙনের সৃষ্টি হবে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। তবে বিএনপি কী করবে সেটা তাদের ব্যাপার।’
এদিকে বিএনপির প্রার্থীরা শপথ নেবেন না বলে গত শনিবার (২৬ জানুয়ারি) আবারও জানিয়ে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নয়াপল্টন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি, ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচনই হয়নি। এই নির্বাচনের ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। সুতরাং শপথ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ একই দিন জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘শপথ নিয়ে আপনারা বেইমানি করবেন না।’
গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিএনপির ৬জন ও গণফোরামের দুজন প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অপরদিকে খালেদা জিয়ার বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোর্শেদ মিল্টনের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় ওই আসনে বিএনপি সমর্থন দিয়েছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে।
তিনি বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত হলেও পরে বলেন,‘আমাকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে কি না জানি না।’ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে গত ৩ জানুয়ারি শপথ নেন বাবলু।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে সরকারের প্রতি কারচুপির অভিযোগ তুলে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথ নেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে পুনরায় নির্বাচনের দাবি করে আসছে।(বাংলানিউজ)
২৮ জানুয়ারি,২০১৯