রাজনীতি

বিএনপির পালে নির্বাচনী হাওয়া, শঙ্কায় আ.লীগ

ক্ষমতার মেয়াদ যত ফুরিয়ে আসছে ততই চতুর্মুখী সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির পালে বইছে নির্বাচনী হাওয়া, সেই হাওয়ায় অনেকটা ফুরফুরে বিএনপি।

নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে ঈদের পর বড় আন্দোলনে যেতে চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি।

আওয়ামী লীগের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীদের কোনো কোনো জায়গায় বিজয় হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে কোনো ছাড় দিতে চায় না বিএনপি।

একেবারে নির্দলীয় না হলেও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারবে এমন দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘উজ্জীবিত বিএনপি’। ঈদের পরপরই বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে চায়। এর আগে রমজানজুড়ে ‘গণসম্পৃক্ততা’ বাড়ানোর কাজ করবে দলটি।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি এ পর্যন্ত রাজপথে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেও আগামী দিনে তারা শক্ত আন্দোলনের কথাই ভাবছেন। দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ মনোভাবের কথা জানা গেছে।

ইতোমধ্যেই চলতি মাসের শেষ থেকে রমজানজুড়ে দলের নেতারা বিভিন্ন জেলা সফর শুরু করেছেন। সেখানে তারা এ বিষয়গুলো তুলে ধরবেন জনগণের কাছে। নিজেদের দাবির প্রতি ‘গণসম্পৃক্ততা’ বাড়াবেন। দলের নেতাদের এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে। আর ঈদের পর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা আছে বিএনপির মধ্যে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে চলছে শঙ্কা, ক্ষমতার মেয়াদ যত ফুরিয়ে আসছে ততই চতুর্মুখি সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে বিশেষ করে সম্প্রতি দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতাকর্মীদেরকে সতর্ক করে দেয়া বক্তৃতা-বিবৃতির পর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতার পালাবদল হলে নিজেদের ভবিষ্যত পরিণাম কী হতে পারে তারা এখন এনিয়ে ভয়-আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

জানা যায়, কঠিন সঙ্কটের মধ্যেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন কাজী বসিরের গোলাপ বাগানে জন্ম হয়েছিল দলটির। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বের একক দাবীদার দলটি প্রথম সঙ্কটের মুখোমুখি হয় ১৯৭৫ সালে। ৭২ থেকে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত শেখ মুজিবের শাসনকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুঃশাসন হিসেবেই আখ্যা দিয়ে থাকেন।

১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হবার পরই প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ব্যাপক দলীয়করণ করেছিল। ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই আয়োজন পুর্ণাঙ্গ রূপ নেয়।

এদিকে, আওয়ামী লীগ যে প্রশাসনকে কিভাবে দলীয়করণ করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সম্পর্কে ইউএনডিপির রিপোর্টে। সে রিপোর্টে আওয়ামী দলীয়করণ নীতির ফলে প্রশাসনে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, তার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিনা পরীক্ষায় তার দলের অযোগ্য লোকদেরকে ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ভিন্ন মতের লোকদেরকে দমনে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে।

এরপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হেঁটেছে। আওয়ামী লীগের শাসনের শুরুতেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় এক নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত হয় ৫৮ জন দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তা।

আর মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারীদের বিচার নিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। বিরোধীদলের পক্ষ থেকেও বার বার বলা হয়েছে তারাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। তবে বিচার হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সাড়ে আট বছরের শাসনও বিভিন্নভাবে সমালোচিত হচ্ছে। আর সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য থেকেই সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনা করে শেষ মুহূর্তে এসে চরম সঙ্কটের মুখোমুখি ক্ষমতাসীনরা, এমনটিই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াতের লোকজন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। এটা নিয়ে ভয় ও আতঙ্কও রয়েছে তাদের। তাই যে কোনো মূল্যে দলকে ক্ষমতায় রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় কোন্দল ও অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় বেজায় ক্ষুব্ধ দলীয় হাইকমান্ড। এরই মধ্যে দলের জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন দলীয় হাইকমান্ড। তারা যে কোনো মূল্যে নির্বাচনের আগে এই কোন্দল মেটাতে চায়।

অন্যদিকে বিএনপিতেও দলীয় কোন্দল কম নেই। তারাও দলকে গুছিয়ে নিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।(প্রাইমনিউজবিডি.কম)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময়১০:২০ পি.এম, ০১ মে ২০১৭,সোমবার
ই.জু

Share