সারাদিন রোজা রাখার পর তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত যেন মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টি। তীব্র গরমে দিন শেষে ইফতারে এমন স্বস্তির পরশ পেতে চায় সব রোজাদারই। কিন্তু এবার রমজানে ইচ্ছে থাকলেও কিনতে পারছে না ইফতারের নিত্য অনুষঙ্গ লেবু।
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে রমজানের শুরুতে আকাশ ছুঁয়েছে লেবুর দাম। পাইকারি মোকামে হালি ৬০ টাকা থাকলেও খুচরা বাজারে তা ছুঁয়েছে ১০০ টাকায়। উপজেলার ছেঙ্গারচর, নতুন বাজার, কালিপুর, কালির বাজার, মোহনপুর কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়। আড়তদাররা বলছেন, লেবুর ফলন স্মরণকালের সর্বনিম্ন হওয়ায় এবার সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড ছুঁয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ছেংগারচর তরকারি ব্যবসায়ী মমিন মিয়া বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই লেবুর বাজার চড়া। তবে আজকের বাজারে দামটা এক শ ছুঁয়েছে। এবার লেবুর ফলন খুব কম হয়েছে। সরবরাহও কম। তাই দাম চড়া। এখানে বিক্রেতাদের কিছু করার নেই। চাহিদা আর সরবরাহের কথা বিবেচনায় দামের এই চড়া ভাব আরও বেশ কিছুদিন থাকবে।
একই প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়া বলেন, শীতের শেষদিকে লেবুর বাজার একটু চড়াই থাকে। রমজান মাস, তাই লেবুর দাম বেড়েছে। এবার অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি। ফলন কম হওয়ায় দামে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সরেজমিন নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি লেবু প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। এক ডজন কিনলে ২৫০ টাকা রাখা হলেও হালি বিক্রি হচ্ছে ঠিক ১০০ টাকায়। তবে কাগজি লেবু তুলনামূলক কিছুটা কম। এর হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
সফিকুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে হালি ৭০-৮০ টাকায় আনি। অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে তাই ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিও কমেছে সমান হারে।
শুধু লেবু নয় ইফতারের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান শসা, গাজর, পুদিনা-ধনে পাতাও আছে দাম বৃদ্ধির তালিকায়।এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মধ্য ও নিম্নবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে। সেখানে রোজায় ছোটখাটো এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি অস্বস্তিতে ফেলেছে সাধারণ ক্রেতাকে। নগরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় সাইজের প্রতিটি লেবু কিনতে দিতে হবে ২০-২৫ টাকা, এছাড়া ছোট সাইজের লেবু হলে দাম পড়বে ১২-১৫ টাকা এবং মাঝারি সাইজের প্রতিটি লেবুর দাম ১৬-১৮ টাকা। অর্থাৎ বড় সাইজের এক হালি লেবু কিনতে হলে খরচ করতে হবে ১০০ টাকা। তাছাড়া ইফতারের আরেকটি উপাদান শসার দাম বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। যা সপ্তাহখানেক আগেও ছিল ৪০-৫০ টাকা।
ধনেপাতা ২৫০ গ্রামের দাম ৩০ টাকা, ২০০ গ্রাম পুদিনা পাতার দাম পড়বে ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি কিনতে খরচ করতে হবে ৬০ টাকা।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, রমজান এলেই একটি সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে ওঠে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি। তার ওপর ছোটখাট পণ্যগুলোর দাম বৃদ্ধি নতুন করে ভাবনার কারণ। মানুষ এতটাই অসহায়, চাইলেও ভালোভাবে ইফতার করতে পারবে না। সরকারের উচিত বাজারে মনিটরিং বাড়ানো। বিক্রেতারা বলছেন, ‘আমরা ইচ্ছে করে দাম বাড়াতে পারি না। অতিরিক্ত দামে কিনে আনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করি। আমাদের কিছু করার থাকে না’।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ৪ এপ্রিল ২০২২