করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় ঈদের ছুটির সময় কাউকে ঢাকা না ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা অমান্য করে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের বাড়ি রওনা হচ্ছেন। জেলায় জেলায় বাড়ছে করোনার সংক্রমন।
বুধবারও ঢাকা ছাড়ার পথগুলো ঘুরে অনেক মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। তাঁরা মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেট কার, ট্রাক, অ্যাম্বুল্যান্সসহ বিভিন্ন বাহনে চেপে তল্লাশি চৌকিতে গিয়ে অজুহাত দিচ্ছেন। কেউ কেউ ব্যাগ ছাড়াই খালি হাতে তল্লাশি এলাকা হেঁটে পার হয়ে দূরে গিয়ে গাড়িতে উঠছেন। তবে পথে পথে তল্লাশি চৌকিতে আটকে যাচ্ছেন তাঁরা। গতকাল দুপুর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঢাকা না ছাড়তে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পুলিশ। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, কেউ হেঁটেও গ্রামের বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে ঈদ পর্যন্ত রাস্তায়ই রাখা হবে এবং কোথাও যেতে দেওয়া হবে না।
গতকাল ঢাকার যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলীসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে পুলিশের তল্লাশি দেখা গেছে। তবে ওই সব এলাকা বেশির ভাগ মানুষই হেঁটে পর হয়ে যাচ্ছেন। অনেকে সবজির গাড়ি বা জরুরি পরিবহনের গাড়িতে চেপে পার হচ্ছেন। তল্লাশিকালে সবাই জরুরি কাজে নিকটবর্তী এলাকায় যাওয়ার কথা বলছেন। তবে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের চালকরা বলছেন, তাঁরা মাওয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ট্রিপই বেশি পাচ্ছেন।
আব্দুল্লাহপুরের ফিলিং স্টেশনের কাছে রফিকুল ইসলাম নামে সিরাজগঞ্জের এক তরুণ ভাড়ায় মোটরসাইকেল খুঁজছিলেন। দুই হাজার টাকার চুক্তির পর তাঁকে হেঁটে এগোতে বলেন এক চালক। মামুন নামে ওই চালক বলেন, মঙ্গলবারও তিনি পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী নিয়ে গেছেন। একই চিত্র দেখা গেছে গাবতলীতে। পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদ থাকলেও কাছাকাছি জায়গায় যাওয়ার কথা বলে অনেকে হেঁটে পার হচ্ছেন। কাছেই দাঁড়ানো ছোট পরিবহনগুলো যাত্রীদের তুলে নিচ্ছে। সাতক্ষীরার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে পিকআপে ৫০০ টাকার চুক্তিতে ফেরিঘাটে যাচ্ছিলেন বলে জানান। গাবতলীতে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল সুফি মিয়া বলেন, ‘আমরা তল্লাশি করছি। যাতে ঢাকা থেকে গাড়ি বাইরে না যায়।’
বাবুবাজার থেকে মাওয়াগামী সড়কেও একই অবস্থা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যে যেভাবে পারছে, সেভাবেই ঢাকা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। বাবুবাজার ব্রিজের নিচে কথা হয় ফারজানা সুমি নামে এক গৃহিণীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। কিন্তু এখন শুনছি অনেককেই ফিরে আসতে হচ্ছে। যাওয়া যাচ্ছে না, পুলিশ নাকি বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিচ্ছে। তাই আবার বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। বিকেল সোয়া ২টায় দেখা যায়, ব্রিজের দক্ষিণ অংশে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি। প্রাইভেট কার, ট্রাক, পণ্যবাহী পিকআপ দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ সদস্যরা জানান, রাজধানীতে ঢুকতে ও বের হতে কড়াকড়ির কারণে চেকপোস্টে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনীয় সেবার গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক মানুষ প্রাইভেট কারে ঢাকা ছাড়তে চাইছে। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজন ছাড়া যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে আমাদের গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানি উত্তাল হয়ে ওঠে। এতে নৌ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় গতকাল দুপুর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকায় এ সময় উভয় ঘাটে আটকা পড়ে বিভিন্ন পণ্যবোঝাই শতাধিক ট্রাক। এর আগে ওই নৌপথে শুধু রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্সসহ জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারে সীমিত আকারে মাত্র দুটি ফেরি চালু ছিল। বিআইডাব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই নৌপথে কোনো ফেরি চলাচল করবে না।’
গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলা পুলিশ আয়োজিত দুস্থদের ঈদসামগ্রী বিতরণে অংশ নিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে কাউকে অন্য জেলায় যেতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি বাইরের কোনো জেলা থেকেও কাউকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ জেনেশুনে কাউকে মৃত্যুর মুখে পড়তে দেবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে ঈদের অজুহাতে কেউ রাস্তায় বের হলে তাঁকে আটকে দেওয়া হবে এবং ঈদ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে হবে। কারো কোনো অজুহাতকে পুলিশ প্রশ্রয় দেবে না।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পুলিশ সুপার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট ব্যবহার করে ঈদে কেউ যাতায়াত করতে পারবেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। শিমুলিয়া ঘাটে মানুষেকে ভিড় না করার অনুরোধ রইল।’
বুধবার বিকেল ৩টায় শিমুলিয়া ঘাট পরিদর্শনে গিয়ে এমনটা জানালেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আবদুল মোমেন পিপিএম।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,২১ মে ২০২০