যে কাজ কেউ করেনা,সে কাজ আমরা করি। লাশের দাফন-সৎকার করাই আমাদের কাজ।ঝড়- বৃষ্টি, বজ্রপাত ও কাদা- পানি উপেক্ষা করে লাশের দাফন-সৎকার করে আসছেন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবী।
মো. সিফাত উল্লাহ মজুমদার (২৫)। তিনি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আহবায়ক। তাঁর বাড়ি উপজেলা সদরের কলাদী এলাকায়। গত দুমাসেরও বেশি সময় ধরে বাধা-বিপদ উপেক্ষা করে তিনি ও তার সাত স্বেচ্ছাসেবী বন্ধু চাঁদপুর জেলার হাজীগন্জ,ফরিদগন্জ,চাঁদপুর সদর এবং মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার করোনায় ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া লাশের দাফন করেছেন।
গত ১২ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের লাশ দাফন করেছেন। সৎকার করেন হিন্দু ও খৃষ্টান ধর্মালম্বীর লাশেরও ।
সিফাতের সংগঠনের বাকি সাত সেচ্ছাসেবী হলেন মো. জিসান, মো. ইসহাক, মো. হুমায়ুন, মো. আশিক, মো. ইরাম, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. রশিদ। এঁদের বাড়ি উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায়। মো. সিফাত উল্লাহ মজুমদার বলেন, তাঁর সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ২০ জন। করোনাকালে কাজ করছেন আটজন। গত এপ্রিল থেকে গত (১২ জুন) শুক্রবার পর্যন্ত সংক্রমণের ঝুঁকি এবং বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তাঁরা করোনায় ও উপসর্গে মৃত ৬১ জনের লাশের দাফন-সৎকার করছেন। ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই), মাস্ক ও গ্লাভ্স পড়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে একাজ করছেন। ভয়-সংকোচ ছাড়াই করছেন এটি।
সিফাত আরও বলেন, ‘এসব লাশের কাছেও আসতে চান না কেউ। পরিবারের লোকেরাও দূরে থাকেন। এ অমানবিকতা দেখে সেবামূলক কাজটি করছি। মন থেকেই করছি। মৃত মানুষদের শেষযাত্রার সঙ্গী হতে পারাই বড় কথা। কষ্ট হলেও এতে ভালোই লাগে। অধিকাংশ দাফনই হয়েছে রাতের বেলায়। দাফন করতে গিয়ে সম্প্রতি আমাদের সংগঠনের এক সদস্য করোনায় মারাও যান। তবু সরে আসিনি।’
সংগঠনের সদস্য মো. ইসহাক (২৭) ও মো. হুমায়ুন (২৬) বলেন, ‘লোকজনের বাধা-আপত্তি ছাড়া অধিকাংশ লাশেরই দাফন-সৎকার করা যায় না। দূরের নির্জন জায়গায়ও দাফন-সৎকার করতে হয়। এলাকাবাসীর গালাগাল শুনতে হয়। তোপের মুখেও পড়ি। তবু দমি না। কাজটি ঠিকমতো করেই ছাড়ি।’
অপর সদস্য মো. আশিক ও মো. ইরাম বলেন, ‘লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা করি না। যে কাজ কেউই করতে চায় না আমরা সেটিই করি। এতেই ভালো লাগে। আমাদের বিশ্বাস, করোনার কাছে মানুষ হারবে না।’ প্রায় একই কথা বললেন সংগঠনটির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান ও মো. বশিরও।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা হক বলেন, ‘করোনার এই দুঃসময়ে ওই স্বেচ্ছাসেবকেরা যেভাবে জীবনবাজি রেখে স্বেচ্ছাশ্রমে করোনায় বা করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া লোকদের লাশের দাফন-সৎকার করছেন তা নিবেদিত মনেরই পরিচায়ক। মাঠপর্যায়ে তাঁরা সত্যিকারের করোনাযোদ্ধা।’তাঁদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদক : মাহফুজ মল্লিক, ১৩ জুন ২০২০