চাঁদপুরে শহরে এমনিতেই দিনের বেলা যানজট আর প্রচণ্ড তাপে অতিষ্ঠ জনজীবন। প্রয়োজন না হলে কেউ ঘর থেকে বের হতে চান না। এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সিইআই পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের লাগামহীন মাইক ব্যবহারে গোড়ামিতে বিড়ম্বনা একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিন প্রতিষ্ঠানটির ঘরো একটি কর্মসূচিতে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার জুড়ে ৮-১০টি মাইক বিকট আওয়াজে ব্যবহার করায় কর্মদিসবের বেশিরভাগ সময় চাঁদপুর কুমিল্লা মহাসড়কের আশে-পাশের মানুষগুলো বিড়ম্বনায় ফেলে দেয়।
ভোক্তভুগী ক’জন জানান, ‘এমনিতেই যানজটে অতিষ্ঠ জনজীবন এর মধ্যে মাইকের শব্দ দূষণ, এ যেনো মরার ওপর খাড়ার গা’
প্রচারণার কাজে চাঁদপুর শহরে মাইক ব্যবহারের ঐতিহ্য এখনো রয়েছে, তবে সেটি ঘুরে ঘুরে শব্দ করায় কেউ তেমন বিরক্ত হন না।
কিন্তু মাইক যদি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়ে সেটিকে বিকট শব্দ দিয়ে ব্যবহার করা হয় এবং সেটি মাইক যদি হয় হসাপিটাল, বিচারলয় ও যানবাহনের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের কানের গোড়ায় হয় তাহলে তো আর সেটি দূষণের মধ্যে থাকে না দোষণীয়ের মধ্যে চলে যায়।
শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় অবস্থিত সিইআই পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রতি বছর তাদের ঘরোয়া ও নিজস্ব কর্মসূচিতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইক বসিয়ে শব্দদূষণ করে থাকনে।
প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও প্রতিষ্ঠানটি তাদের কৃতি শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ অনুষ্ঠানে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে জজ কোট-ডিসি অফিসের সামনে থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মোট ৮ থেকে ১০টি মাইক ব্যবহার করেছেন।
এর মধ্যে একটি চাঁদপুর জজ কোর্টের ঠিক সামনে, দ্বিতীয়টি চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে, তৃতীয়টি চাঁদপুর মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সামনে, চতুর্থটি আরেকটি সড়ক ও জনপথ ভবনের একটু পরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসানো হয়। এতে করে জজ কোর্টে কর্মরত ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ, হাসপাতালের রোগী, বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা মানুষজন বিপাকে পড়ে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির ২০ গজ দুরে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জজ কোর্ট প্রাঙ্গন। এরপর রয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, বেলভিউ হসপিটাল ও চক্ষু হাসপাতাল। পত্রিকার অফিসসহ অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন শতশত রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। এদের প্রচারণার টার্গেট যেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ‘মাইকের এ ধরণের ব্যবহার প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রচারণার অংশ মনে করা হচ্ছে। শব্দ দূষণ হচ্ছে কি না, তা স্বীকার করতে নারাজ অধ্যক্ষ।
একটি অনুষ্ঠানের জন্য শহরে এতগুলো মাইকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন সচেতনমহলের।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একাধিক সূত্রে জানায়, এ ধরণের শব্দ দূষণে মানুষকে নানাবিদ সমস্যায় পড়তে হবে, তেমনি এদের দেখানো পথ অন্যরা অনুসরণ করবে। শব্দ দূষণে মানুষের উচ্চ রক্ত চাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, মাথা ঘোরা, মনোসংযোগ কমে যাওয়ার মতো নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম অনেকটা এড়িয়ে গিয়ে জানান, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটি জেলা শহরের একমাত্র প্রাইভেট পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, এখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। জেলা বিভিন্ন্ অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রী এখানে পড়ে।’ ইত্যাদি…
অনেকবার জানতে প্রশ্ন করা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বারবার এড়িয়ে গেছেন অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো টেনে তুলতে চেষ্টা করেন।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির নাম চাঁদপুরে কচুয়ায় অবস্থিত চাঁদপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের (সরকারি) নামের সাথে মিল থাকায় শিক্ষাপ্রেমি মানুষজনের কাছে রয়েছে বিতর্ক। একই ক্যাটাগরির প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান আর সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম এক হয় কিভাবে?
এদিকে মাইকের অনুমতি নেয়ার নিয়ম থাকলেও তা না করে যে যার ইচ্ছে মতো করে শহরে উচ্চস্বরে মাইক ব্যবহার করে রীতিমতো জন উপদ্রুপের সৃষ্টি করেছে।
শহরবাসীর বক্তব্যে জানা যায়, শুধু ধর্মীয় এবং মৃত্যু সংবাদ প্রচার এবং বিশেষ কিছু প্রচার ছাড়া অনুমতি না নিয়ে যখন তখন এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে মাইক ব্যবহার করছে যে কোনো মহল। অনুমতি নিলেও নিয়ম মেনে মাইক ব্যবহার করছে না কেউ।
চঁদপুর টাইমস রিপোর্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৫:০০ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৬, মঙ্গলবার
ই-শ/ডিএইচ