লাগামহীন বাজারে চরম অস্বস্তিতে ক্রেতারা

বাজারে এসে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা। পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে কোনটা থেকে কোনটা কিনবেন তা ভাবতেই যেন দিন শেষ

তেল-চিনি, আটা-ময়দার দাম বেশি। মাছ ও ডিম-দুধের দামও বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। এরমধ্যে আবার লাগাম ছিঁড়ে গেছে কাঁচা মরিচ আদা ও টমেটোর দামের।

সব মিলিয়ে বাজারে চরম অস্বস্তিতে সাধারণ ক্রেতারা। বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষরা সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা ঠিকমতো পূরণ করতে পারছেন না। অনেককেই বাজার থেকে ফিরতে হচ্ছে ব্যাগের তলানিতে কিছু পণ্য নিয়ে।

শুক্রবার (৭ জুলাই) রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ-মাংস, শাক-সবজিসহ সবকিছুর দামই বাড়তি। ঈদ শেষে গ্রাম থেকে ফিরে অনেকেই এসেছেন বাজারে, যাদের অধিকাংশই অস্বস্তির কথা বলেছেন।

রামপুরা বাজারে এনামুল হোসেন নামের একজন বলেন, ঈদের আগে রেখে যাওয়া কাঁচা মরিচগুলো ফ্রিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য এক পোয়া কাঁচা মরিচ কিনতে হলো ১২০ টাকা দিয়ে। আদা-রসুন কিনতে গেছে ২০০ টাকা। আর টমেটোর দাম চাচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এই যদি হয় অবস্থা, ঢাকায় আমরা যারা স্বল্প আয়ের মানুষ রয়েছি, তাদের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, কোরবানির পর মাংস খেতে চাচ্ছে না বাচ্চারা। একটা মাছ কিনতে গেলে পাঁচ-ছয়শ টাকা লাগে। শাক-সবজির দাম বেশি, তেলের দাম বেশি, চাল-চিনির দামও বেশি। আমরা আসলে যাবো কোথায়?

বাজারের ব্যাগ দেখিয়ে এনামুল হোসেন বলেন, দেড় হাজার টাকার বেশি বাজার করে ফেলেছি। এখনো অনেক কিছু কেনা বাকি। তবে ব্যাগের এক কোণা ভরছে না এই টাকায়।

ঈদের পর মাছের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে দামও। প্রতি কেজি রুই কাতলা মাছ ৩৩০-৩৬০ টাকা, পাঙাশ-তেলাপিয়া ও সিলভার কাপ ২২০-২৫০ টাকা, পাবদা গুলশা টাংরা জাতীয় মাছ ৫৫০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এক কেজি বা ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০-২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা আফাজ উদ্দিন বলেন, ঈদের পর এখন মাছের বাজারে ক্রেতার ভিড় বেশি। তাই চাহিদা বেড়েছে। আড়ত থেকে বেশি দামে মাছ কিনতে হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

তিনি বলেন, ঈদের আগেও মাছের দাম বেশি ছিল। এবছর বাজারে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না থাকায় অন্যান্য মাছের দামও বেশি চলছে।

এদিকে গরু, খাসির মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে ডিমের। গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাসি ১২০০ টাকা, ব্রয়লার ২০০-২২৫ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি দরে। এক ডজন নিলে রাখা হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা।

একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সব ধরনের শাক-সবজির দাম। গোল আলু, টমেটো, গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, করলা, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢ্যাঁড়শ, লাউশাক, পালংশাক, লালশাক, কলমি শাকসহ সবধরনের শাক-সবজির দাম বেড়েছে।

তালতলা বাজারের সবজি বিক্রেতা মুমিন বলেন, গত সপ্তাহে ঈদের কারণে ঢাকায় মানুষ কম ছিল। এখন মানুষ বাড়ছে তাই চাহিদার সঙ্গে দামও কিছুটা বাড়ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিটি সবজি কেজিপ্রতি ১৯-২০ টাকা বেড়েছে।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পচে সবজি নষ্ট হয়েছে। সে কারণেও সরবরাহ কম, দাম বাড়ছে।

এদিকে ওই বাজারে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৪২০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২৬০-৩২০ টাকা কেজি দরে। আর গেলো প্রায় দুই মাস ধরে বাড়তি আদার দাম। প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৬০ টাকা কেজি দরে।

তালতলা বাজারের ক্রেতা সফিউল আলম বলেন, এখন বাজারে এলেই আতঙ্কে থাকতে হয়। কোনো না কোনো পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। কোনটার প্রয়োজন কতটুকু তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মাথা ঘুরে যায়।

এদিকে মুদি বাজারে নতুন করে কোনো পণ্যের দাম না বাড়লেও তেল-চিনি, আটা-ময়দার দাম আগে থেকে বেড়ে রয়েছে। প্রতি কেজি বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার দরে। খোলা চিনির কেজি ১৩৫-১৪০ টাকা। প্যাকেটজাত আটা ৬৮ টাকা এবং ময়দা ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও ব্র্যান্ডভেদে আটা-ময়দার দামের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

টাইমস ডেস্ক/৭ জুলাই ২০২৩

Share