নবীকূল শিরোমণি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হতে বর্ণিত ২০টি হাদীস উপস্থাপন করা হল:
(১) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘বিজ্ঞজনদের মাঝে গর্ব করার উদ্দেশ্যে, মূর্খদের সাথে তর্ক করার উদ্দেশ্যে, সভায় প্রশংসা কুড়ানোর জন্য, জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, নেতৃত্ব লিপ্সুতার জন্য ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের উদ্দেশ্যে জ্ঞানের সন্ধান করো না। যদি জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে কারো উদ্দেশ্য এমন হয় তবে তার স্থান হবে জাহান্নাম’। [লি-আলীল আখবার, পৃ. ১৯৩]
(২) মহানবী (স.) বলেছেন: ‘তোমরা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য সৃষ্টি হওনি, বরং তোমরা অবশিষ্ট থাকার জন্য সৃষ্টি হয়েছো। আর তোমরা [মৃত্যুর মাধ্যমে] এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হবে’। (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৩, পৃ. ১৬১)
(৩) আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন: ‘আশা-আকাঙ্খা আমার উম্মতের জন্য একটি রহমত স্বরূপ, যদি আশা না থাকতো তবে কোন মা তার সন্তানকে দুধ পান করাতো না এবং কোন মালিই গাছ লাগাতো না’ (তথা কোন কৃষকই চাষাবাদ করতো না)। (সাফিনাহ, আমাল, পৃ. ৩০)
(৪) হযরত (স.) বলেছেন: ‘ঈমানদার ব্যক্তিদের সম্মান জনগণ হতে তাদের অমুখাপেক্ষীতার মাঝে নিহীত, আর মুক্তি ও আত্মমর্যাদা অল্পে তুষ্টতার মাধ্যমে অর্জিত হয়’। (আদাব ওয়া আখলাক দার ইসলাম, পৃ. ৩১৮)
(৫) নবি করিম (স.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি ঘুমানোর পূর্বে আয়াতাল কুরসী পড়ে, মহান আল্লাহ্ তাকে রক্ষার জন্য একটি ফেরেশতা নিযুক্ত করেন যাতে সে সুস্থ অবস্থায় সকালে পৌঁছায়’ (বা জাগ্রত হয়)। (তাফসিরে মিনহাজুস সাদিকীন, খণ্ড ২, পৃ. ৯২)
(৬) রাসূলে (স.) বলেছেন: মহানবী (স.) কে জিজ্ঞেস করা হল, কেয়ামতের দিনের পরিত্রাণ কোন জিনিসের মাঝে নিহীত?
তিনি উত্তরে বললেন: ‘পরিত্রাণের একমাত্র পথ তোমরা হচ্ছে মহান আল্লাহকে ধোকা দিও না, এমনটি করলে মহান আল্লাহও তোমাদেরকে ধোকা দিবেন। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহকে ধোকা দেয় মহান আল্লাহও তাকে ধোকা দেন এবং তার হতে ঈমান কেড়ে নেন, যদি সে বুঝতে পারে তবে [বুঝবে যে] প্রকৃত অর্থে সে নিজেকেই ধোকা দিয়েছে’। বলা হল হে আল্লাহর রাসূল কিভাবে আল্লাহকে ধোকা দেওয়া হয়? তিনি বললেন: ‘মহান আল্লাহ্ যে কর্ম সম্পাদনের নির্দেশ তোমাদেরকে দিয়েছেন তা তোমরা সম্পাদন করো কিন্তু তোমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে [আল্লাহ ব্যতীত] অন্য কেউ’। অতঃপর বললেন: তাকওয়া অর্জন কর এবং লোক দেখানো হতে দূরে থাকো, কেননা লোক দেখানো বা রিয়া হচ্ছে মহান আল্লাহর সাথে শিরক করা। লোক দেখিয়ে কর্ম সম্পাদনকারীকে কেয়ামতের দিন ৪টি নামে ডাকা হবে: হে কাফের, হে পাপাচারী, হে ধোকাবাজ, হে ক্ষতিগ্রস্থ, তোমার সকল কর্ম ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তোমার সকল সওয়াব বাতিল হয়ে গেছে’। (আমালিয়ে সাদুক, পৃ. ৫৮২)
(৭) আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন: ‘নিশ্চয়ই আমি উত্তম নৈতিকতার পরিপূর্ণতা দানের জন্য প্রেরিত হয়েছি’। (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৬৭, পৃ. ৩৭২)
(৮) মহানবী (স.) বলেছেন: ‘সর্বোত্তম নৈতিকতার অধিকারী ব্যক্তিরা হচ্ছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম; যারা জনগণকে ভালবাসে এবং জনগণও যাদেরকে ভালবাসে’। (মিশকাতুল আনওয়ার ফি গুরারিল আখবার, পৃ. ১৮০)
(৯) নবি করিম (স.) বলেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে বৃদ্ধদেরকে সম্মান কর এবং ছোটদেরকে স্নেহ করো’। (আমালিয়ে সাদুক, পৃ. ৯৪)
(১০) আল্লাহর রাসুল (স.) বড় ও বয়োজেষ্ঠ্যদের সম্মান সম্পর্কে বলেছেন: ‘মহান আল্লাহর পবিত্র সত্ত্বার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি রূপ হচ্ছে মুসলিম বৃদ্ধ ও বয়োজেষ্ঠ্যদের প্রতি সম্মান করা’। (আল-কাফী, খণ্ড ২, পৃ. ১৬৫)
(১১) মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম বৃদ্ধকে সম্মান করে, মহান আল্লাহ্ তাকে কেয়ামতের দিনের ভয় হতে নিরাপত্তা দান করেন’। (লি-আলি’ল আখবার, পৃ. ১৮১)
(১২) এক বৃদ্ধ ব্যক্তি মহানবী (স.) এর সমীপে উপস্থিত হল, কিন্তু উপস্থিত ব্যক্তিরা কেউই তার সম্মান করলো না এবং তাকে জায়গা দিতে অলসতা দেখালো। (উপস্থিতদের এহেন আচারণে অসন্তুষ্ট হয়ে) মহানবী (স.) বললেন: ‘যারা আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করেনা এবং বৃদ্ধদের প্রতি সম্মান দেখায় না, তারা আমাদের হতে নয়’। (মিশকাতুল আনওয়ার ফি গুরারিল আখবার, পৃ. ১৬৮)
(১৩) দুই জাহানের রহমতের নবী (স.) হতে বর্ণিত: ‘তোমাদের সন্তানদেরকে সম্মান করো এবং তাদের সাথে আদবের সাথে আচরণ করো’। (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ২৩, পৃ. ১১৪)
(১৪) আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন: ‘তিনটি এমন জিনিষ আছে যাতে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হয়নি; প্রথম: প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, চাই অপর পক্ষ মুসলমান হোক বা কাফের। দ্বিতীয়: পিতা মাতার প্রতি দয়াশীল হওয়া, চাই তারা মুসলমান হোক বা কাফের। তৃতীয়: আমানত রক্ষা করা, চাই অপর পক্ষ মুসলমান হোক বা কাফের’। মাজমুয়াতুল ওয়ারাম (তানবিহুল খাওয়াতের), খণ্ড ২, পৃ. ১২১)
(১৫) হযরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি কথায় অধিক সত্যবাদী, আমানত রক্ষায় অধিক সতর্ক, প্রতিশ্রুতি রক্ষায় অধিক ওয়াফাদার, যার চরিত্র অধিক উত্তম এবং তোমাদের মধ্য হতে জনগণের সাথে যার সম্পর্ক অতি নিকটের, সে কেয়ামতের দিন তোমাদের মধ্য হতে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী ব্যক্তি’। (তারিখে ইয়াকুবী, খণ্ড ২, পৃ. ৬০)
(১৬) মহানবী (স.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তির অধিকার রক্ষার বিষয়ে তুমি সতর্ক কিন্তু সে তোমার অধিকার রক্ষায় সতর্ক নয়, সে তোমার জন্য উত্তম বন্ধু নয় এবং সে তোমার সাথে ওঠাবসার যোগ্য নয়’। (নাহজুল ফাসাহাহ, পৃ. ৬৭৬)
(১৭) নবি করিম (স.) বলেছেন: ‘আমি এবং আমার উম্মতের মধ্যে পরহেজগার ব্যক্তিরা, অন্যের উপর কষ্টসাধ্য কোন কাজ চাপিয়ে দেওয়া হতে অনেক দূরে’ (অন্যের উপর চাপিয়ে দেই না)। (এহইয়াইল উলুম, পৃ. ২)
(১৮) আল্লাহর রাসূল (স.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি জনগণের মাঝে সবচেয়ে প্রিয় হতে চায়, তার উচিত গুনাহ হতে দূরে সরে মহান আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করা’। (কানযুল ফাওয়ায়েদ, খণ্ড ২, পৃ. ১০)
(১৯) প্রিয় নবী (স.) বলেছেন: ‘নম্রতা, বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে; সুতরাং নম্র হও যাতে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের শামিল হতে পারো’। (নাহজুল ফাসাহাহ, পৃ. ২৭৭)
(২০) মহানবী (স.) এমন একদল লোকের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যাদের মধ্যে শক্তিধর এক লোক ছিল। যে বড় বড় পাথর উত্তোলন করছিল এবং উপস্থিত লোকেরা তাকে ভারউত্তোলনের বীর হিসেবে বাহবা দিচ্ছিলো। আর ঐ ক্রীড়াবিদের কর্মকাণ্ডে সকলে অবাক হচ্ছিল। আল্লাহর নবী (স.) জিজ্ঞেস করলেন: এখানে লোক সমাগমের কারণ কি? জনগণ ভারউত্তোলক ঐ ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের কথা সম্পর্কে মহানবী (স.) কে অবগত করলো। রাসূলে আকরাম (স.) বললেন: ‘তোমাদেরকে কি বলবো না যে, এ ব্যক্তির চেয়ে শক্তিশালী কে?
তার চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে সে, যাকে গালী দেওয়া হয় কিন্তু সে ধৈর্য্য ধারণ করে নিজের প্রতিশোধ পরায়ন নফসের উপর নিয়ন্ত্রন রাখে এবং নিজের শয়তান ও তাকে গালি দানকারী শয়তানের উপর বিজয়ী হয়। (তারায়েফুল হেকাম, পৃ. ৪০০)।
ইসলাম ডেস্ক
১১ মে ২০১৯