প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর)। কিন্তু প্রিয় শিল্পী একদিন আগে থেকেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা সিক্ত হন।
কেউ কেউ ১৬ নভেম্বর জন্মদিন ভেবে তাকে শুভেচ্ছা জানান। এ নিয়ে ফেসবুকে রুনা লিখেন, ‘আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তদের কাছ থেকে জন্মদিনের আগেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেয়েছি। সবার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আমার জন্মদিন ১৭ নভেম্বর। তবুও সবাইকে শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ।’
রুনা লায়লা এখন লন্ডনে কন্যা তানি লায়লার বাসায় রয়েছেন। সেখানে মেয়ে ও দুই নাতিকে নিয়ে এবারের জন্মদিন ঘরোয়াভাবেই উদযাপন করবেন। আগামী ১২ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন রুনা। এদিকে জন্মদিনে প্রিয় শিল্পী দূর দেশে থাকলেও তাকে অনেকেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রুনা লায়লাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেন, ‘বটগাছ যত বড় হয় তত নুয়ে থাকে। তিনি বটবৃক্ষের মতই। যত বিনয় সব তার। তাকে দেখলে মাঝে মাঝে অবাক হই। লজ্জিত হই। আমরা কিছুই না। অথচ মাঝে মাঝে আমরা আমাদের ব্যবহারে লজ্জাবোধ করি। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখি। বুদ্ধির পর থেকে যার গান মুগ্ধ হয়ে শুনে বড় হয়েছি। আজও তার গান হলে বসে পড়ি বা কান খাড়া করি। এত বড় একজন মানুষ দেখা হলেই বলেন, ‘তোমার নাটক, তোমার কাজ ভালো হয়।’ এতেই মাথা নুয়ে আসে। তিনি আমাদের দেশের গর্ব। সারা পৃথিবীতে তিনি অমলিন। কে না চেনে তাকে। এই চমৎকার প্রিয় মানুষটির আর কেউ নন। আমাদের অহংকার, আমাদের দেশের অহংকার রুনা লায়লা। রুনা আপা, আজ আপনার জন্মদিন। আপনার জন্য অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, শুভ কামনা। শুভ জন্মদিন।’
এক নজরে রুনা লায়লা
রুনা লায়লার জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটে। তার বাবার বাড়ি রাজশাহী। রুনার বাবার নাম এমদাদ আলী এবং মায়ের নাম অনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা। রুনার মা সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সুবীর সেন ছিলেন রুনা লায়লার মামা।
ভিন্ন রকম গায়কী আর অসাধারণ সব গান গেয়ে তিনি কোটি কোটি শ্রোতার কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিতি অর্জন করেছেন। তার গাওয়া গান দেশের বাইরেও দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানী চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। পাকিস্তানে তার গান ‘দমাদম মাসকালান্দার’ গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। ব্যক্তিগত জীবনে রুনা লায়লা বিয়ে করেছেন চিত্রনায়ক আলমগীরকে।
রুনা লায়লা ছোটবেলায় একটি নাচের স্কুলে কত্থক, ভরত নাট্যম ও কথাকলি নাচ শিখেছিলেন। তার সঙ্গীতে হাতেখড়ি পিয়া রঙ-এর কাছে। ১৯৬০ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাসকালে তিনি ওস্তাদ হাবিবিদ্দিন খানের কাছে গান শিখেছিলেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত গায়ক আহমেদ রুশদিও তার শিল্পীজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেন।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে করাচিতে বাঙালীদের এক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছিলেন রুনা লায়লা। পরবর্তীকালে বেতারের শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি পুরস্কৃত হন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি প্রথম প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর তিনি করাচি ও লাহোরে অনেক চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৬৮ সালে ‘কমান্ডার’ চলচ্চিত্রের জন্য গান গেয়ে তিনি ‘নিগার ফিল্ম ক্রিটিক পুরস্কার’ পেয়েছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনেও তিনি নিয়মিত গান পরিবেশন করতেন।
১৯৭৪ সালে রুনা লায়লা পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং বেতার টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। তিনি ভারতের অনেক চলচ্চিত্রের জন্যও গান গেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে ‘এক সে বাহরকর এক’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য গান গাওয়া শুরু করেন। পাকিস্তানে তার গান ‘দমাদম মাসকালান্দার’ এখনও সমান জনপ্রিয়। তিনি ১৬টি ভাষায় বিভিন্ন দেশে গান পরিবেশন করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। রুনা লায়লা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি পপ ও আধুনিক গান গেয়েছেন, গেয়েছেন গজল সঙ্গীত।
রুনা লায়লা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি ‘শিল্পী’ নামক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন রুনা লায়লা। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ পুরস্কারে ভূষিত করে। তিনি মোট চারবার চলচ্চিত্রে শ্র্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সঙ্গীতের জন্য তিনি নিজের দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বিদেশেও নানা পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। রুনা লায়লা ভারতে ‘সায়গল পুরস্কার’ পেয়েছেন। পাকিস্তানে দু’বার নিগার পুরস্কার, দু’বার গ্র্যাজুয়েট পুরস্কার এবং ‘জাতীয় সঙ্গীত পরিষদ স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি দেশে ও বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৩:৫০ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
এমআরআর