Tuesday, 07 July, 2015 02:32:34 PM
ডেস্ক:
বিতর্কিত সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের চিঠি প্রাপ্তির কথা অবশেষে স্বীকার করেছেন স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।
এর আগে গত দুইদিন এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলা খেলেন স্পিকার। গত ৫ জুলাই পাঠানো এ চিঠির বিষয়টি আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন তিনি।
কিন্তু দলের পক্ষ থেকে কেউ এই চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বাংলামেইলকে জানান,‘ এখন পর্যন্ত এমন চিঠি পাঠানো হয়নি। আর চিঠি পাঠালে তো আপনাদের জানাবো।’
তবে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন আজ গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত ৫ জুলাই তার কাছে চিঠি পাঠোনো হয়েছে।
লতিফ সিদ্দিকী তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পাবার পর তাকে ঘিরে ইসলামী দলগুলোর আন্দোলন গড়ে ওঠার হুমকির মধ্যে এই চিঠি পাঠানো হলো।
গত ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় জামিনের পর মুক্তি পান সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী।
এসময় তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলের ক্যাবিন ব্লক ৫১২ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ২৬ মে সাত মামলায় ছয় মাসের জন্য হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে গত ২৩ জুন আরো ১০ মামলায় তাকে হাইকোর্ট থেকে জামিন দেয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে টাঙ্গাইল সমিতির এক মতবিনিময় সভায় হজ, তাবলিগ জামায়াত ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয় সম্পর্কে বেশকিছু মন্তব্য করেন। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দেশে তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা দায়ের হয়।
নিউইয়র্কের ওই সভায় লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরবিরোধী। হজে যে কতো ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়।’
তিনি বলেন, ‘হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরব গেছে। তাদের কোনো কাম নাই। তাদের কোনো প্রোডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন করতেছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা নিয়ে ওখানে দিয়ে আসছে। অ্যাভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়, প্রত্যেকের ৫ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।’
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ চিন্তা করলো, এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে। তারা তো ছিল ‘ডাকাত’। তখন একটা ব্যবস্থা করলো যে, তার অনুসারিরা প্রতিবছর একবার এক সঙ্গে মিলিত হবে এবং এর মধ্যদিয়ে একটা আয়ের ব্যবস্থা হবে।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও কটূক্তি করেন ওই সভায়।
মামলা দায়ের পর বিদেশ থাকা অবস্থায় মন্ত্রিত্ব হারান লতিফ সিদ্দিকী। এমনকি তাকে দল থেকেও বহিস্কার করা হয়।
কিন্তু গত আট মাসেও সেই চিঠি স্পিকারের হাতে পৌঁছায়নি।
২৯ জুন মুক্তি পাবার পরই হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলো আবার লতিফ ইস্যুতে সরব হয়ে উঠে। গত শুক্রবার হেফাজতসহ কয়েকটি দল তাকে ফের গ্রেপ্তারের দাবিতে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
৮ মাস আগে দল থেকে বহিস্কারের পর হিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন দলের বিপক্ষে ভোট না দেয়ায় ( ফ্লোর ক্রসিং) লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বাদ পড়লেও সাংসদ পদে থাকতে পারবেন।
এ নিয়ে ওই সময় বিতর্ক সৃষ্টি হলে স্পিকার তখন বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়টি আইন অনুযায়ী সমাধান হবে।
এর আগে চারদলীয় অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের আলোকে তার সংসদ সদস্যপদ রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।
নবম জাতীয় সংসদেও সাতক্ষীরা-৪ আসনে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে।
সংবিধানের ৭০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
ওই অনুচ্ছেদে দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সদস্য পদের কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই।
লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ থাকবে কিনা তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। দলের উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য প্রবীণ সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অভিমত দিয়েছেন, লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র সংসদ থাকবেন।(বাংলামেইল)
চাঁদপুর টাইমস : ডেস্ক/ডিএইচ/২০১৫।
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।