সারাদেশ

লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বৃদ্ধা জামেনার শেষ আশ্রয়টুকু

‎Wednesday, ‎29 ‎April, ‎2015  11:02:34 PM

জাহিদুর রহমান তারিক :

ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বৃদ্ধ জামেনা খাতুনের শেষ আশ্রয়স্থল। চোখের কোনায় পানি নিয়ে ৬২ বছরের বিধবা জামেনা খাতুন বললেন আর মনে হয় কখনও নিজ ঘরে ফিরতে পারবো না। নিঃসন্তান জামেনা খাতুনের মাথা গোজার শেষ ঠিকানা ছিল একটি টিনের ঘর।

সারাদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন আর রাতে এসে সেই ঘরেই আশ্রয় নিতেন। গত ৬ এপ্রিল প্রচণ্ড ঝড়ে বিধবার সেই ঘরটি ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ১৬ দিনেও তিনি ভেঙেপড়া ঘরটি আর মেরামত করতে পারেননি। এখন তার রাত কাটছে অন্যের বাড়ির বারান্দায়।স্বামী হারা এই বিধবা ঝড়ে হারিয়েছেন শেষ আশ্রয়টি।

বিধবা জামেনা খাতুনের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ব্রক্ষ্মপুর গ্রামে। বৃদ্ধ জামেনা জানান, একই উপজেলার আউশিয়া গ্রামের কেসমত আলীর কন্যা তিনি। ছোট বয়সে যুগিপাড়া গ্রামের রমজান আলীর সাথে তার বিয়ে হয়। কিছুদিন সংসার করার পর স্বামী মারা যান। তাদের কোনো সন্তান ছিল না।

এরপর থেকে তিনি বাবার বাড়িতে থাকতেন। বেশ কয়েক বছর সেখানে থাকার পর বাবা ব্রক্ষ্মপুর গ্রামের করম আলীর সাথে আবার তাকে বিয়ে দেন। করম আলীও আগে বিয়ে করেছিলেন। সন্তান প্রসবের সময় তার স্ত্রী মারা যান। দ্বিতীয় স্বামীর সাথে ২০ বছর সংসার করলেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। আনুমানিক ১০ বছর আগে স্বামী করম আলীও জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এরপর থেকে তিনি অসহায় জীবন-যাপন করছেন।

অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। স্বামীর রেখে যাওয়া ৪ শতক জমির ওপর টিনের একটি ঘর ছিল। সেটিই ছিল তার আশ্রয়স্থল। এখানেই তিনি বসবাস করতেন। তিনি জানান, সকালে-দুপুরে গৃহকর্তার বাড়িতে দেয়া খাবার খান, আর রাতের খাবার নিয়ে আসেন। বাড়ি ফিরে ওই টিনের ঘরে ঘুমিয়ে রাত কাটান। এভাবে চলছিল তার জীবন। জামেনা খাতুন জানান, ৬ এপ্রিল প্রচণ্ড ঝড়ে তার টিনের ঘরটি ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে পাড়ার মানুষের ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে রাত কাটান।

ঘর নির্মাণের সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলেছেন, তারা ৩০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন। এই টাকা তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না হওয়ায় ঘর সংষ্কার করতে পারছেন না। প্রতিবেশী ব্রক্ষ্মপুর গ্রামের মশিয়ার রহামন জানান, ঝড়ের সময় বৃদ্ধা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না দেখে তারা ছুটে যান। তাকে বের করার চেষ্টা করেন। তারা দেখেন বৃদ্ধা ঘরের একটি খুঁটি চেপে ধরে কান্নাকাটি করছেন। এই অবস্থায় তারা বৃদ্ধাকে বাঁচিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন ওই দিনের ঝড়ে তাদের এলাকার আরো অনেক ক্ষতি হয়েছে। যাদের দেখার বা সহযোগিতার কেউ নেই। এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সরকার জানান, এই ঝড়ে ৪ হাজারের অধিক পরিবারের ক্ষতি হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করেছেন। যারা এখনও সহযোগিতা পাননি তাদের কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

চাঁদপুর টাইমস/ডিএইচ/জেআরটি/২০১৫

নিয়মিত আপনার ফেসবুকে নিউজ পেতে ক্লিক করে লাইক দিন :

https://www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes

Share