লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি, যাত্রী অসন্তোষ বাড়ছে

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী,চাঁদপুর , শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা।

লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন পেয়ে লঞ্চ-মালিকরা খুশি হলেও বাড়তি ভাড়ায় হতাশ যাত্রীরা। গত দুই দিন চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায় যাত্রীসংখ্যা পূর্বের তুলনায় কিছুটা কম। বেশি ভাড়া আদায় করায় লঞ্চের স্টাফদের সাথে যাত্রীদের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে।
 
চাঁদপুর থেকা ঢাকার সাধারণ (ডেকের) ভাড়া পূর্বে ছিল ১০০ টাকা। করোনাকালীন ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৫০ টাকা। আর এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে এই ভাড়া ২০০ টাকা করা হয়েছে।

আর নিচতলার চেয়ার সিটের ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা, এসি প্রথম শ্রেণির চেয়ার ৩৫০ টাকা থেকে এখন ৪০০ টাকা করা হয়।  পূর্বে সিঙ্গেল এসি কেবিনের ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা। দুই দফা ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০০ টাকা।  এখন নেওয়া হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। 

জ্বালানি তেলের দাম পুননির্ধারণের ফলে সমন্বয় করে নৌযানের যাত্রী ভাড়া ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে গত ১৬ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্ডের পর থেকেই বাড়তি ভাড়া আদায় কার্যকর শুরু হয়ে যায় লঞ্চগুলোতে।

ঢাকাগামী যাত্রী পুরাণবাজারের ব্যবসায়ী ইমদাদ শেখ (৪৫) জানান, তিনি ভোর ৬টা চাঁদপুর ঘাটে আল বোরাক লঞ্চে উঠেন। তিন তলায় প্রথম শ্রেণির চেয়ার টিকেট ৪০০ টাকা নেওয়া হয়। আগে এ ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা ছিল। এটি আমাদের ওপর জুলুম।
 
রায়পুর লক্ষ্মীপুরের আবু ইউসুফ (৬৫) নামে আরেক যাত্রী বলেন, জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি যে টাকা বেড়েছে, লঞ্চ-মালিকরা তার থেকে দেড়গুণ ভাড়া বাড়িয়েছে। আমরা যাত্রীরা সবসময় ভাড়া নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছি। নানা ছুতোয় ভাড়া বাড়ানো হয়। অথচ আমাদের আয় বাড়ছে না। 

বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুর নদীবন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। প্রথম ১শ’ কিলোমিটারের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়ার ফলে এখন ২.৩০ টাকার সঙ্গে .৭০ টাকা যোগ হয়ে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা। 

চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে পূর্বে ডেকের ভাড়া ছিল ১৫০ টাকা। এখন ৫০ (৩০ শতাংশ) টাকা বাড়িয়ে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। প্রতিদিন চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ২৪টি বিলাসবহুল লঞ্চ এবং চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে ১৪টি এবং দক্ষিণাঞ্চল ও শরীয়তপুরের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি ছোট-বড় লঞ্চ চলাচল করছে। এসব এলাকার লোকজন ভাড়া বাড়ার কোনো নোটিশ কিংবা ঘোষণা পায়নি।

এদিকে ভাড়া বাড়ানোর কারণে যাত্রীরা বিশেষ করে স্বল্প বেতনের যারা ঢাকায় চাকরি করেন বা আত্মীয়-স্বজন রয়েছে তাদের সাথে দেখা করতে এবং চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষগুলো চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তারা লঞ্চের অতিরিক্ত ভাড়ায় বিপাকে পড়েছেন। সরকারের কাছে তারা সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ভাড়া কমানোর দাবি জানান।

লঞ্চের কেরানীরা জানান, সরকারিভাবে ৩০ ভাগ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আমরা সেভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছি। ডেকের ভাড়া ২০৪ টাকা, প্রথম শ্রেণী এসি চেয়ার ৩৫০ টাকা, বিজনেস ক্লাস এসি চেয়ার ৪০০ টাকা এবং নিচতলার চেয়ার ২৭০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সরকারি ভাড়া আরও বেশি; কিন্তু আমরা কিছু কম নিচ্ছি।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ১৯ আগস্ট ২০২২

Share