করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে চলমান সাধারণ ছুটি আর না বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমিতভাবে গণপরিবহন (বাস, নৌযান ও ট্রেন) চালু হতে যাচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৩১ মে থেকে সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সড়কে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। লঞ্চে যাতায়াতে যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী সকল নৌযান ও ট্রেনও চলাচল করবে।
মোটকথা স্বাস্থ্যবিধি মেনে, স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলবে। সেক্ষেত্রে গণপরিবহন চালালে তো ঠাসাঠাসি করে চালানো যাবে না। সামাজিক দূরত্ব মেনেই চালাতে হবে। অবশ্যই যাত্রীদের মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। এগুলো নিশ্চিত করেই মালিকদের গণপরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় ধারণক্ষমতার চেয়ে কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল করতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আর কী কী করণীয় এবং লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে ঠিক করা হবে। সেই সঙ্গে সদরঘাটে প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মাল মিটারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে সদরঘাট সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ এবং লঞ্চমালিক পক্ষের বৈঠকে লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক নীতিমালা, কর্মকৌশল ঠিক করা হবে। আমাদের মূল টার্গেট হলো সংক্রমণরোধ করে কীভাবে লঞ্চ চলাচল করানো যায়। এছাড়া যাত্রীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার পাশাপাশি বিআইডাব্লিওটিএর কর্মরত, লঞ্চের স্টাফ, সবারই নিজেদের সুরক্ষায় রাখতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে গেছে, একটা লঞ্চে যদি ৫০০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২০০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়বে। সেক্ষেত্রে ভাড়াটা বেড়ে যেতে পারে মনে করছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে সদরঘাট, বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌ চলাচলের নির্দেশনা পেয়েছেন। ঘাটে প্রবেশ করতে যেই ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা দরকার তার সবই ব্যবস্থা তারা করবেন।
এছাড়া লঞ্চের কেবিনের চাদর, কাভার প্রতি ট্রিপের পর পরিবর্তন, পাশাপাশি লঞ্চের ভেতর কী কী উপায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায় তা নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে বিআইডাব্লিওটিএ বৈঠকে বসবে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, ঢাকায় হয়তবা সব ধরনের প্রস্তুতি থাকবে। তবে ঢাকার বাইরে স্থানগুলোতে লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কতটা তদারকি করা হবে সেটাই চিন্তার বিষয়। এছাড়া ডেকে যারা শুয়ে-বসে যান, তাদের ক্ষেত্রে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে সেটাই দেখার বিষয়।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে চলমান সাধারণ ছুটি আর না বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমিতভাবে গণপরিবহনও চালু হতে যাচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ মে থেকে সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সড়কে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে।
করোনা মোকাবিলায় সড়কপথে গণপরিবহনে বেশকিছু নির্দেশনা মানতে হবে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এসব কারিগরি নির্দেশনা তথ্য অধিদফতরের এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত করার নির্দেশনাগুলো হচ্ছে :
যাত্রীবাহী পরিবহন স্টেশনে জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, নিরাপত্তা এবং জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি মানসম্মত করতে হবে, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে এবং মাস্ক, গ্লাভস ও জীবাণুমুক্তকরণ দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত মজুত থাকতে হবে।
কর্মীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করুন, প্রতিদিন কর্মীদের স্বাস্থ্যবিষয়ক অবস্থা নথিভুক্ত করুন এবং যারা অসুস্থতা অনুভব করবে তাদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
বাস স্টেশনে আগত এবং নির্গত যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপার জন্য স্টেশনের তাপমাত্রা নির্ধারক যন্ত্র স্থাপন করতে হবে। যথাযথ শর্তাবলি মেনে একটি জরুরি এলাকা স্থাপন করতে হবে; যেসব যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৯ ফারেনহাইটের উপরে থাকবে তাদের ওই জরুরি এলাকায় অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনমতো চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
বায়ু নির্গমন পদ্ধতি যেন স্বাভাবিক থাকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বাস চলাচলের সময়ে সর্বোচ্চ বায়ু চলাচল করতে দিতে হবে; যথাযথ তাপমাত্রায় বায়ু চলাচলের জন্য বাসের জানালা খুলে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জনগণের জন্য ব্যবহার্য এবং জনসাধারণের চলাচলের স্থানগুলোকে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্তকরণের হার বাড়াতে হবে। টয়লেটগুলোতে তরল সাবান (অথবা সাবান) থাকতে হবে, সম্ভব হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হাত জীবাণুনাশক যন্ত্র স্থাপন করা যেতে পারে।
যাত্রীদের অপেক্ষা করার স্থান, বাস কম্পার্টমেন্ট ও অন্যান্য এলাকা যথাযথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
প্রতিবার বাস ছেড়ে যাবার পূর্বে বাসের ভেতরে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জনগণের জন্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন সিটগুলোকে প্রতিনিয়ত পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে, সিটকভারগুলোকে প্রতিনিয়ত ধোয়া, পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
যাত্রীদের অপেক্ষা করার স্থানে, টিকিট কাউন্টার এবং সকল রুটের বাসগুলোতে মাস্ক, গ্লাভস ও জীবাণুমুক্ত করণ দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত মজুত থাকতে হবে।
সম্ভব হলে সকল বাসে এবং অবশ্যই লং রুটের সকল বাসে হাতে-ধরা থার্মোমিটার থাকতে হবে; যথাযথ স্থানে একটি জরুরি এলাকা স্থাপন করতে হবে যেখানে সন্দেহজনক উপসর্গগুলো যেমন জ্বর ও কাশি আছে এমন যাত্রীদের অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাবে।
যাত্রীদের এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে, মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং হাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখতে হবে।
যাত্রীদের অনলাইনে টিকিট ক্রয় করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, সারিবদ্ধভাবে ওঠার সময় এবং নেমে যাওয়ার সময় যাত্রীদের পরস্পর হতে এক মিটারেরও বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।
যাত্রীদের স্বাস্থ্যসচেতন করার জন্য রেডিও, ভিডিও ও পোস্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান করতে হবে।
যুক্তিসঙ্গতভাবে পরিবহনের ধারণক্ষমতা সজ্জিত করতে হবে এবং সীমিত আকারে টিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে যাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেসব বাস মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন এলাকা হতে ছেড়ে যাবে অথবা পৌঁছাবে অথবা ওই এলাকা দিয়ে যাবে সেসব ক্ষেত্রে যাত্রীদের আলাদা সিটে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বসতে হবে।
যদি নিশ্চিত কোভিড-১৯ এর রোগী পাওয়া যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইডলাইন অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।