সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে তুলনামূলক ভালো সাফল্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) বিভাগ। অর্থবছর শেষে ভ্যাট বিভাগে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। যেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। ওই বছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১.১৯ শতাংশ।
অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রার ৯২ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হওয়ায় ভ্যাট অনুবিভাগ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কার্যসম্পাদন মানদ- অনুযায়ী ‘অসাধারণ’ হিসেবে মন্তব্য পেয়েছে। যদিও ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে। ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৪ কোটি টাকা ভ্যাট বেশি আদায় করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অর্থবছরের শেষ মাস জুন মাসের ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের অর্জন লক্ষ্যণীয়। ১৭.৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে জুন মাসে আহরিত ভ্যাটের পরিমাণ ১৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের আদায় করা ভ্যাটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে সিগারেট থেকে। যার পরিমাণ ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। এর পর মোবাইল ফোন অপারেটর্সের অবস্থান। যেখান থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। এ বিষয়ে ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগের সদস্য ড. মইনুল খান বলেন, গেল অর্থবছরে অনেকটা বিরূপ পরিস্থিতি ছিল। ব্যয় সংকোচন নীতিমালার কারণে বেশ কিছু প্রকল্প থেকে ভ্যাট পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এলসি খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
এ ছাড়া ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দিতে হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশনায় ভ্যাটের ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বড় অর্জন বলে মনে করি। তিনি বলেন, তিনটি কারণে আমাদের এই অর্জন। প্রথমত, এনবিআর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা; দ্বিতীয়,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ-উৎপাদন হালনাগাদকরণ জোরদার এবং তৃতীয়ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ। এনবিআর সূত্র আরও জানায়, এনবিআরের ভ্যাট উইংয়ের মাঠ পর্যায়ে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা দক্ষিণ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থবছরের তাদের অর্জন যথাক্রমে ৩৮.৭১ শতাংশ, ২৪.৭১ শতাংশ এবং ১৯.৮৯ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ ভ্যাট আহরণ করেছে এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট। এই কমিশনারেটের আহরণ ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা।
যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বেশি। প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের আমদানি-রপ্তানি খাত অর্থাৎ কাস্টমস বিভাগ থেকে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ২.৫৬ শতাংশ। অন্যদিকে আয়কর খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ৯.৬২ শতাংশ।
২৮ জুলাই ২০২৩
এজি