মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠিন লকডাউনে এখন আর নৌকায় করে যাত্রী পারাপার করে পেট চলে না মাঝিদের। চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন গুদারাঘাটের মাঝিরা কেমন আছেন এই লকডাউনে তাদের এমন খবর কেউ রাখেনি।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা গুদারাঘাটে নৌকা দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করেন তারা। কখনো যাত্রী মেলে কখনো মেলে না তবুও রুটি-রুজির আশায় তীর্থ কাকের মত যাত্রীদের জন্য দীর্ঘ পথ চেয়ে বসে থাকা। দিন শেষে যা রুজি হয় তা দিয়ে কখনো চাল কিনলে, তরকারি কিনতে পারেননি। আবার তরকারি কিনলে চাল কিনতে পারেননি। এমন টানা পোড়েনের মাঝেই কোনরকমে দিন পার করছেন চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন গুদারাঘাটে থাকা অসহায় মাঝিরা।
গত কয়েকদিনে চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার গুদারাঘাট, প্রেসক্লাব ঘাট, ১০ নং চৌধুরী ঘাট, ৫নং খেয়াঘাট, কয়লাঘাট, ঢালীর ঘাট এবং ইচুলি গুদারাঘাট সহ সব কটি গুদারা ঘাটে ঘুরে দেখা গেছে কয়েক বছর পূর্বেও যেখানে নদী পারাপারের জন্য শত শত যাত্রীদের আসা-যাওয়া ছিল। সেখানে এখন সে পরিমাণের তুলনায় তেমন কোন মানুষের আসা যাওয়া নেই বললেই চলে। এর মূল কারণ হচ্ছে শহরের দুই প্রান্তে ডাকাতিয়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দুটি ব্রীজ এবং মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনের কারণ।
যার ফলে গুদারাঘাটে নদী পারাপার করে আয় রোজ গারে খুব বিপাকে রয়েছেন অসহায় মাঝিরা। এমন পরিস্থিতিতে খুবই অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কোন রকম দিন পার করছেন তারা।
বেশ কয়েকজন মাঝি জানান, লকডাউন ছাড়া অন্যান্য সময়ে কয়েক বছর আগেও তারা যেখানে গুদারাঘাটে নদী পারাপার করে দৈনিক ৭/৮শ’ টাকা রুজি করতেন। লকডাউন থাকায় মানুষজন বাহিরে কম বের হওয়ায় সেখানে এখন দৈনিক ২/৩শ’ টাকা রুজি করতেও তাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর আবার নৌকা ভাড়া মিটিয়ে যা থাকে, তা দিয়ে কোনোভাবেই একটি সংসারের খরচ চালানো যায় না।
বর্তমানে কঠিন লকডাউন পরিস্থিতিতে তারা আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়েছেন। জেলার অন্যান্য গরিব-দুঃখীরা সরকারিভাবে আর্থিক এবং খাদ্য সহায়তার সুবিধা পেলেও এসব ভুক্তভোগী মাঝিরা সকলের অগোচরেই রয়ে গেছেন। তাই তাদের খবর কেউ রাখেনি।
চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার গুদারাঘাটের মাঝি বাচ্চু বেপারী (৫৫) বলেন, আমি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধইরা এই গুদারাঘাটে নৌকা বাইয়া আইছি। আগে যেহানে দৈনিক সাত আটশ টাকা রুজি হইতো। বর্তমানে ২/৩শ’ টিয়াও রুজি করতেও অনেক হিমশিম খাইতে হয়। তা দিয়ে সংসারের জন্য একটি কিনলে আরেকটি কেনার সাধ্য থাহেনা। না আমরা খুবই কষ্টে আছি। “সকালে নৌকা লইয়া নামছি, দুপুর শেষ হইয়া গেছে ১০০ ট্যাহাও ইনকাম নাই। আগে ৬০০-৭০০ ট্যাহা থাকত। অহন এই ট্যাহায় নৌকা ভাড়া দিমু কী? নিজে খামু কী?”
এছাড়াও ওই গুদারাঘাটের মাঝি শুকুর খান, কালু শেখ, ফারুক খান, মোতালেব বেপারী, আলমগীর খানসহ একাধিক মাঝিরা জানালেন একই কথা।
তারা বলেন, লকডাউনে আমরা তেমন ভালো নেই। আমাদের খবর কেউ রাখেনা। নৌকা নিয়ে সারাদিন গুদারাঘাটে বসে থাকি যাত্রীদের অপেক্ষায়। কখনো যাত্রী মেলে কখনো মেলে না, তবুও অপেক্ষায় থাকি ঘাটে যাত্রী আসবে বলে। কিন্তু লকডাউন থাকার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষরা বাইরে বের না হওয়ায় আমাদের তেমন কোন রুজি নেই।
দিনশেষে বাড়িতে গেলে ঘরের বউও আমাদের সাথে অশান্তি সৃষ্টি করে। তারা আক্ষেপ করে বলেন গত এক বছরে করোনা কালীন সময়ে সরকার থেকে অনেক গরীব অসহায়দের টাকা-পয়সা এবং খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দিকে কারো কোন নজর পড়েনি। আমরা কেমন আছি আমাদের খবর কেউ রাখেনি। বর্তমানে কঠিন লকডাউনে আমরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি কাম কেমন নেই তাই সরকার এবং জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ তারা যেন আমাদের প্রতি একটু নজর দেন।
মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বর্তমান এই কঠিন লকডাউনে চাঁদপুরের এসব অসহায় মাঝিদের প্রতি জেলা প্রশাসন খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশা এসব অসহায় মাঝিদের।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি,১১ জুলাই ২০২১