রাজধানীতে র্যাবের ক্যাম্পে যুবক আত্মঘাতী হওয়ার পরের দিন ওই বাহিনীর একটি চেকপোস্টে বোমাবহনকারী এক যুবক গুলিতে মারা গেছে। গতকাল ভোর পৌনে ৫টার দিকে খিলগাঁও এলাকার শেখের জায়গা নামে একটি সংযোগ সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে বসানো র্যাব-৩ এর একটি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় নম্বর প্লেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহী ওই যুবক সিগন্যাল অমান্য করে চলে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করা হয়। র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, ওই যুবক মোটরসাইকেলে করে চেকপোস্টের কাছাকাছি আসে।
এ সময় র্যাব সদস্যরা তাকে থামতে বলেন। কিন্তু তিনি নির্দেশ অমান্য করে অতিক্রম করার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় পরিস্থিতির কারণে তাকে গুলি করে র্যাব। র্যাব বলছে, অজ্ঞাত ওই যুবক দুটি বোমা বহন করছিল।
এর মধ্যে একটি বোমা ছিল তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের মধ্যে। অপর বোমাটি পাওয়া যায় তার পকেটে। পরে সেগুলো উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে নিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে এ ঘটনার পরপরই সেখানে উপস্থিত হন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশের বিশেষ টিম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে, ক্রাইম সিন ইউনিটের সিনিয়র এএসপি আবদুস সালাম জানান, তারা সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করতে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। যুবকের ডিএনএ সংগ্রহ এবং যেখানে বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে সেখান থেকেও আলামত সংগ্রহ করেছেন। আবদুস সালাম বলেন, নিহত যুবকের শরীরে ৬-৭টি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত যুবকের শরীরে ৪টি গুলি বিদ্ধ হয়েছে।
র্যাবের চেকপোস্টটির অবস্থান শেখের জায়গা ও নন্দীপাড়ার সংযোগ সড়কে। আশপাশে ধানখেত ও খালি জায়গা। এখনো জনবসতি গড়ে ওঠেনি। ঘটনাস্থলের পাশে একটি মাত্র টিনের ঘর। সেখানেই র্যাবের চেকপোস্ট। সকাল থেকেই ওই রাস্তার দুই পাশের মুখ চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ সময় দূর থেকে ঘটনাস্থলে নিহত ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার মাথার কাছে একটি ব্যাগ এবং পাশে একটি লাল রঙের মোটরসাইকেল পড়েছিল। পরনে শার্ট ও জিনসের প্যান্ট। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে ব্রিফ করেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ওই যুবক মোটরসাইকেলে করে চেকপোস্টের কাছাকাছি আসেন। এ সময় র্যাব সদস্যরা তাকে থামতে বলেন। কিন্তু তিনি নির্দেশ অমান্য করে না থেমে ‘ক্রস’ করার চেষ্টা করে।
এ অবস্থায় পরিস্থিতির কারণে তাকে গুলি করে র্যাব। এতে তিনি নিহত হন। আহত হন দুই র্যাব সদস্য। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খিলগাঁও পুলিশ একটি পিকআপে যুবকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে যায়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুস সালাম বলেন, তারা নিহত যুবকের শরীরে ৬-৭টি গুলির চিহ্ন দেখেছেন। লাশ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
বোমা নিষ্ক্রিয় করার জায়গা থেকেও নমুনা নেয়া হয়েছে। পুলিশকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিতেও সিআইডি সহায়তা করছে। এটা র্যাবের নিয়মিত চেকপোস্ট কি না জানতে চাইলে তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, নির্জন জায়গা হওয়ায় এখানে অসাধু লোকজন যাতায়াত করে। এ কারণে চেকপোস্ট বসানো হয়। হামলাকারী কোথা থেকে এসেছিল, জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা জানা যায়নি।
এদিকে বিবিসি বাংলাকে তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ভোরবেলায়, সূর্য উদয়েরও পূর্বে খিলগাঁওয়ের শেখের জায়গা’ নামে একটি সড়ক সংযোগে বসানো র্যাবের চেকপোস্ট অতিক্রম করছিল ওই মোটরসাইকেল আরোহী।
এ সময় র্যাব তাকে থামার সংকেত দিলে সে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। পরে র্যাব সদস্যরা পেছন থেকে তাকে গুলি করে। গুলিতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মোটরসাইকেলটির কোনো নম্বর প্লেট ছিল না বলেও তিনি জানান।
গুলির পর তার সঙ্গে থাকা ব্যাগটি দূরে ছিটকে যায়। তাতে একটি বোমা পাওয়া যায়। নিহত যুবকটির শরীর তল্লাশি করে আরো একটি বোমা মেলে। নিহত যুবকটির পরিচয় এখনো জানা যায়নি। মোটরসাইকেলটির মালিকানা সম্পর্কেও নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি।
র্যাব বলছে, শেখের জায়গা নামক মোড়টি থেকে ডেমরার দিকে যে রাস্তাটি চলে গেছে, সেটি অপরাধপ্রবণ একটি সড়ক। এই সড়কটি মাদক আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়, এমন সন্দেহর ভিত্তিতে প্রায়ই সেখানে চেকপোস্ট বসানো হয়। গত রাতেও একই কারণে চেকপোস্ট বসিয়ে রাতভর সেখানে সন্দেহভাজন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়।
এদিকে লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, গুলিতে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে ৪টি গুলি বিদ্ধ হয়েছে।
এর মধ্যে তিনটি বুকে এবং ১টি ডান পায়ে লেগেছে। প্রত্যেকটা গুলি বের হয়ে গেছে। ডা. সোহেল মাহমুদ আরো জানান, তার ডিএনএ, চুল, থাই মাসল, ব্লাড এবং ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। এতে সে শক্তিবর্ধক কিছু খেয়েছিল কিনা তা জানা যাবে।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ৫৯ পিএম, ১৯ মার্চ ২০১৭, রোববার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur