নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৩শ’৭৩ জন এতিম শিশু শনাক্ত করা হয়েছে। এক জরীপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বুধবার (৮ নভেম্বর)ও বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দু’দিনেই শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮শ’১৫ জন। সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ধারণা করছেন এখনও যেভাবে এতিম শিশু সনাক্ত হচ্ছে- তাতে এ সংখ্যা ক’দিনের মধ্যে ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল অরফান চাইল্ড’ কার্যক্রমের আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এদিকে এখনও রোহিঙ্গারা আসছে। গত ৮-১০ দিন ধরে গড়ে এক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬ লাখ ২৬ হাজার।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ও ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল অরফান চাইল্ড’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী সৈয়দা ফেরদাউস আখতার বলেন,‘আমরা ভাবছি এ মাসের মধ্যে এতিম রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করার কাজ শেষ করতে পারবো।’ তবে রোহিঙ্গারা এখনও আসছে- এ স্রোত আরও বাড়লে প্রকল্পের কাজ কিছুটা দীর্ঘায়িত হতে পারে। এতিমদের সংখ্যাও ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে- জানালেন ফেরদৌস আক্তার।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৮০ জন কর্মী ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে খুঁজে খুঁজে অনাথ শিশু শনাক্তকরণের দায়িত্ব পালন করছেন। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে শিশুর অভিভাবক ও মাঝিদের মাধ্যমে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে শনাক্তকরণের কাজটি করছেন। যারা বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে,যারা শুধু বাবা হারিয়েছে,যারা প্রতিবন্ধী,আর যারা মা-বাবার খোঁজ পাচ্ছে না- এমন চারটি শ্রেণিতে এদের ভাগ করা হচ্ছে। শিশু আইন অনুযায়ী ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সীদের শিশু হিসেবে গণনা করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
‘ইতোমধ্যে টেকনাফের ৫টি ক্যাম্পে সনাক্তকরণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে বড় দু’টি ক্যাম্প- কুতুপালং এবং বালুখালীতে। শনাক্ত হওয়া সকল এতিম শিশুকে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে পক্ষ থেকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে।’ জানালেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক প্রীতম কুমার চৌধুরী।
তিনি বলেন,‘এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের শনাক্ত হওয়ার হার কিছুটা কমলেও এখনও প্রতিদিন ৮-৯শ’এতিম শিশুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। এ সংখ্যা ৪০ হাজার ক্রস করতে পারে।’
এদিকে এতিম রোহিঙ্গা শিশুদেরের সুরক্ষার জন্য আবাসস্থল-‘শিশুপল্লী’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে উখিয়ার নিবন্ধিত কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধুছড়া এলাকায় ২শ’একর জমিও নির্ধারণ করা হয়েছে। অনাথ রোহিঙ্গা শিশুদের শনাক্ত করার কার্যক্রম শেষ হলে আগামী মাসে শিশুপল্লীর কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত,২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতায় খুন হয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা দম্পতি। তাদের বেঁচে যাওয়া সন্তানরা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। এসব পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি বিশেষ সুরক্ষা অঞ্চল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই বিশেষ অঞ্চলে বিশেষ যতে দেখভাল করা হবে এসব শিশুদের। (বাসস )
নিউজ ডেস্ক আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬:১০ পিএম,১০ নভেম্বর ২০১৭,শুক্রবার
এজি