জাতীয়

রোহিঙ্গারা নিজ দেশের অধিবাসী হিসেবে ‘মেনে নিয়েছে’ মিয়ানমার

নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের অধিবাসী হিসেবে মেনে নিয়েছে মিয়ানমার। এরই মধ্যে আশ্রিতদের ফেরত নিতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের অন্যতম এ দাবির বিষয়ে রাজি হয়েছে মিয়ানমারের সফররত প্রতিনিধিদল।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ গ্রুপ গঠন করা হয়। এরপরই বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।

বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করতে কাজ করবে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ ওয়ার্কিং গ্রুপ।

এ কমিটি ধাপে ধাপে আরও কয়েকটি সাব কমিটি গঠন করবে। এসব সাব কমিটি ভাগ করে কাজ করবে। পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ছাড়াও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন কমিটিগুলোতে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ১৫ জন করে ৩০ জন প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটির নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব থাকবেন। কিন্তু কাজ করতে লাগবে বেশ বড় একটা টিম।

এর আগে এ বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থো এর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে।

গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা (এমওইউ) সই হয়।

ওই চুক্তি অনুযায়ী, তিন সপ্তাহের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন এবং দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া শুরু করবে মিয়ানমার। তবে তারা কত দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করবে তা বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের নিয়েই কাজ করবে কমিটি।

‘এর আগে যারা এসেছেন তাদের বিষয়ে বিবেচনা করার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, কমিটি গঠনে চুক্তি
সই করা হয়েছে ১৯৯২ সালের চুক্তির আলোকে। ১৯৯২ সালের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নেই।

ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের স্থায়ী অধিবাসী হিসেবে সেখানকার সমাজে অন্তর্ভুক্তির কথা ছিল। রোহিঙ্গাদের অধিকারসহ মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের উল্লেখ ছিল না।

মিয়ানমার ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর ও এ বছরের ২৫ আগস্টের পরে যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের ফেরত নেবে। বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে সাড়ে ১০ লাখ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬ সালের আগে আসা তিন লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার কথা চুক্তিতে নেই। এবারের চুক্তিতে ফেরত নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রথমে অস্থায়ী পুনর্বাসন ক্যাম্পে রাখার কথা বলা হয়েছে। এরপর তাদের ফেলে আসা ঘড়বাড়ি বা অন্যকোথাও পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।

১৯৯২ সালে দু’দেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয় তার অধীনে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে মাত্র দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেয় মিয়ানমার। তবে ১৯৭৮ সালে যে চুক্তি হয়েছিল, তার অধীনে ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়েছিল মিয়ানমার। (বাংলানিউজ)

Share