মিয়ানমারের ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের’ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মিয়ানমারের সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং।
সোমবার জান্তার ক্ষমতা দখলের আট দিন পর প্রথম টেলিভিশন ভাষণে জেনারেল মিন এ প্রতিশ্রুতি দেন। তবে অতীতের মতোই ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি তিনি।
সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিপুল গণজমায়েতে বিক্ষোভ হয়। এদিন সর্বাত্বক ধর্মঘটও পালন করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে কিছু কিছু স্থানে কারফিউসহ জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে,ভাষণে জেনারেল মিন অং হ্লাইং দমনপীড়নের ভয়ভীতি দেখানোর বদলে ক্ষমতা দখলের কারণ ব্যাখ্যার দিকে মনোযোগী ছিলেন। নাগরিকদের প্রতি ‘আবেগের বশবর্তী না হয়ে সত্য তথ্য-উপাত্ত দেখার আহ্বান’ জানান তিনি।
জেনারেল বলেন,`তার শাসনামল ২০১১ সাল পর্যন্ত চলা ৪৯ বছরের সামরিক নিয়ন্ত্রণের মতো হবে না। ‘সত্যিকারের এবং নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ অর্জনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মিন অং হ্লাইং।’
তবে সেই ভাষণ কাজে আসেনি। বিবিসি বলছে, জেনারেলের ভাষণ অভ্যুত্থান বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ছবি দেখা গেছে যেখানে মানুষজন টিভি স্ক্রিনের সামনে থালাবাসন পিটিয়ে প্রতিবাদ করছেন।
ভাষণে জেনারেল মিন রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করে বাংলাদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয়ে একটি টুইট বার্তাও শেয়ার করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেছেন,‘আইডিপি ক্যাম্প থেকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কাজও অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হবে।’ অবশ্য তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার ক্যাম্প অথবা ভাসানচরের কথা উল্লেখ করেননি।;
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র, কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ, কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড,কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রং-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে।
ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে। রোহিঙ্গাদের পরিচয় এখন একটাই: পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন শরণার্থী জনগোষ্ঠী।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক , ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur