করোনায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে রোজা রাখুন
পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন করছেন পুরো বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। রমজান মাস মুসলিমদের কাছে অন্যতম পবিত্র একটি মাস। এই মাসে মুসল্লিরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের খাবার ও পানাহার থেকে বিরত থাকেন।
প্রতি বছরই রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। তবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও রমজান মাসের স্বাস্থ্যগত কিছু সুফলও রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, রমজানের এক মাস রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ সুফল বয়ে আনে।;
তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মুসল্লিদের কাছে রমজানের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এ বছর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে প্রতি বছরের মতো উৎসবের আমেজ আর চোখে পড়ছে না। বিশ্বের কোথাও মুসল্লিদের মধ্যে রমজানের কোনো আমেজ নেই।
গত ২৩ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রমজান শুরু হয়েছে। বেশ কিছু দেশে তার একদিন পরে শুরু হয়েছে রমজান। মহান আল্লাহ তা’লা এই মাসেই পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন।
সে কারণে এই মাসে রোজা রাখা ছাড়াও মুসল্লিরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং নফল নামাজ আদায় করেন।
রমজান মাস মুসল্লিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে, তারা দরিদ্রদের পাশে এগিয়ে আসে, তাদের কষ্টের সমান ভাগিদার হয়। এই মাসে মুসল্লিরা বেশি বেশি দান করেন, দরিদ্রদের খাবার দেন।
রমজানে মসজিদগুলোও মুসল্লিদের সমাগমে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যদিও এ বছর একেবারেই ভিন্ন চিত্র দেখছে বিশ্বের মুসল্লিরা।
মানুষ থেকে মানুষে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। সে কারণে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সে কারণে ইতোমধ্যে অনেক দেশে মসজিদে নামাজ আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান দেওয়া হলেও মুসল্লিরা এখন আর দলে দলে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারছেন না।
করোনার হানায় বিশ্বব্যাপী মসজিদগুলো বন্ধ, চলছে কারফিউ, একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। ফলে এবারের রমজানে ঘরে বসেই নামাজ আদায় করতে হচ্ছে এবং লোকজন শুধু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই ইফতার করতে পারছেন।
এবার আর অন্যদের সঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করে খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না মুসল্লিরা। সে কারণে এবারের রমজান বিশ্বের মুসল্লিদের কাছে একেবারেই নিষ্প্রাণ, একেবারেই ভিন্ন।
এ তো গেল রমজানের সামাজিক বন্ধন আর ভ্রাতৃত্বের কথা। এবার রমজানের স্বাস্থ্যগত সুফলগুলোর কথা জানি।
চিকিৎসকরা বলছেন, রোজা রাখলে শরীরে অনেক ধরনের সুফল ঘটে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
শরীরে সাধারণ প্রদাহ কমাতেও সহায়তা করে রোজা। আমরা রোজা রাখলে বাইরে থেকে শরীরে কোনো পুষ্টি প্রবেশ করতে পারে না। এ সময় শরীরের ভেতরেই শক্তি সংরক্ষণের একটি প্রক্রিয়া তৈরি হয়। এক্ষেত্রে শক্তি সংরক্ষণের জন্য শরীর তার ভেতরে থাকা পুরাতন এবং ক্ষতিগ্রস্ত রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে পুনরায় ব্যবহার করে।
এই প্রক্রিয়ায় আমরা যখন রোজা শেষ করি তখন আমাদের শরীরের ওই পুরোনো ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো আরও বেশি নতুন ও স্বাস্থ্যকর রোগ প্রতিরোধক কোষে পরিণত হয়।
এই নতুন কোষগুলো আরও দ্রুতগতিতে এবং বেশি দক্ষভাবে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়।
বেশ কিছু গবেষণা বলছে, অন্যান্য উপবাসের চেয়ে রোজা রাখার স্বাস্থ্যগত বেশ কিছু সুফল রয়েছে। তবে সারাদিন রোজা রাখার পর তেলে ভাজা খাবার যেমন, সমুচা বা পাকোড়ার মতো খাবারগুলো কখনওই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে না। সারাদিন রোজা রাখার পর আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।