চাঁদপুরে অত্যাধুনিক রেল স্টেশন প্লাটফর্মের নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

চাঁদপুর অত্যানিক রেল স্টেশনের (বড় স্টেশন) প্লাটফর্মের নব-নির্মানাধীন কাজের ফের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিন্মমানের ইট, পাথর বালি এবং কম সিমেন্ট দিয়ে করা হচ্ছে প্লাটফর্মের ঢালাই কাজ।

বাংলাদেশ রেলওয়ের লাকসাম আইডাব্লিউর ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী (নির্মাণ) আতিকুর রহমান সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সামনেই নির্মান কাজে এমন অনিয়ম করা হচ্ছে।

১৬ অক্টোবর শনিবার দুপুরে চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে বড় স্টেশন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অত্যাধুনিক চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের লক্ষ্যে প্ল্যাটফর্মের যে নির্মাণাধীন কাজ করা হচ্ছে। সেসব কাজে ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। কাজ চলা অবস্থায় সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যেখানে যে পরিমাণে পাথর বালি এবং সিমেন্ট দেওয়ার কথা। সেখানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা সে পরিমান সিমেন্ট না দিয়ে তার চেয়ে অধিক বালি এবং পাথর ব্যবহার করে তার মধ্যে এক বস্তা সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তারা এক বস্তা সিমেন্টের সাথে ৮ টুরকি পাথর এবং ৫ টুরকি বালি দিয়ে প্ল্যাটফর্মের ঢালাই মিশাচ্ছেন। ঢালাই মেশিন দিয়ে এসব মেশানোর ভেতর দিয়েও তারা আরও বাড়তি দুই টুরবি পাথর ঢেলে ঢালাই মিশাতে দেখা যায়। এছাড়াও প্লাটফর্মের সলিংকে ঢালাইর সাথে যে পরিমান রড ব্যবহার করার কথা তাতেও রয়েছে অনিয়ম। সলিংয়ে যেসব ইট বিছানো হয়েছে সেসব ইটগুলো অনেকটা নিম্নমানের। আর এসব নির্মাণ কাজের অনিয়মগুলো রেলওয়ে আই ডব্লিউ,র কর্মকর্তাদের সামনেই হতে দেখা গেছে।

রেলস্টেশনের এমন নির্মাণ কাজের অনিয়মের কারণে এর পূর্বেও নির্মাণের এক সপ্তাহ না পেরুতেই চাঁদপুর অত্যাধুনিক রেল স্টেশনের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে পড়ে যায়। ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণিতীতে নিন্মমানের ইট, বালি, সিমেন্টসহ নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করার কারনে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিলো।

যা পুনরায় মেরামত করে বর্তমানে তরি গড়ি করে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

অথচ এর কিছুদিন পূর্বে গাইড ওয়াল ভেঙে পড়ার ঘটনায় চাঁদপুর বড় ষ্টেশন এলাকার আমির উদ্দিন মিন্টু খান, নুরু বেপারী, মোবারক গাজী, নয়ন ছৈয়াল, ইউসুফ হাওলাদারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘৭-৮ দিন পূর্বে চাঁদপুর রেলওয়ে বড় স্টেশনের প্লাটফর্মের তিন ফুট উচ্চতার গাইড ওয়ালটির কাজ করা হয়েছিলো। ওইসময় গাইড ওয়ালের মাঝখানে ভরাটকৃত বালি বসার জন্য পানি দেয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো ইট বালু সিমেন্ট এবং বালিতে সিমেন্ট কম দেওয়ার কারণে সপ্তাহ না পেরোতেই প্ল্যাটফর্মের নব-নির্মিত এই গাইড ওয়ালটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। তাদের অভিযোগ গাইড ওয়ালটি মাটির গভীর থেকে না উঠানোর কারনে এবং নির্মাণ সামগ্রী নিন্মমানের ও বালিতে সিমেন্ট কম দেয়ার কারনেই এমনটি ঘটেছে।’

এ বিষয়ে চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সোয়াইবুল সিকদার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘স্টেশনের এই কাজের দায়িত্বে রয়েছে রেলওয়ের লাকসাম আইডাব্লিউ। কোন ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এসব তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারা কাজ সম্পর্ণ করে আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করলে তখন আমরা আমাদের কাজ বুঝে নিবো। এছাড়া কারা কাজ করছেন, কি করছেন সে বিষয়ে লাকসাম আইডাব্লিউ বলতে পারবে।’

এবিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাকসাম আইডাব্লিউর ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী (নির্মাণ) আতিকুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে প্ল্যাটফর্মের কাজ নিয়ম মতই হচ্ছে এখানে কোনো নিয়ম নেই। ঢালাইর সাথে ৮ টুরকি পাথর ৫ টুরকি বালি এবং একটি সিমের দেয়া হচ্ছে। যে নিয়মে ঢালাই করার কথা সে নিয়মে ঢালাই নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। তারপরও যদি কোন শ্রমিক ঢালাই মিশাতে গিয়ে বাড়তি পাথর দেয়। তাহলে সব তো আর পাহারা দিয়ে রাখা যায়না। তার এমন প্রশ্নের জবাবে কাজের নিয়ম দেখার জন্য কাজের এস্টিমেটের কাগজপত্র চাইলে তিনি তা দিতে অপারগতা জানান।’

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ১৭ অক্টোবর ২০২১

Share