রেলওয়ে কর্মচারী হত্যায় পরকীয়া প্রেমিকসহ স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড

ভৈরবের রেলওয়ে কর্মচারী মাহবুবুর রহমান (৩৮) হত্যার অপরাধে তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার (২৮) ও তার পরকীয়া প্রেমিক আসিফকে (১৯) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক শারমিন হাসনাত পারভিন বিচার শেষে সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

আদালত তার রায়ে বলেছেন, মাহবুবকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী এবং তারই প্রেমিক হত্যা করেছে; যা সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে।

আদালত রায়ে বলেন, নিহত মাহবুবের তিনটি সন্তান ছিল কিন্তু সন্তানের মায়া ত্যাগ করে জঘন্যতম হত্যাটির পরিকল্পনাকারী ছিল তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার। এ কারণে তারা দুজনকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এপিপি সিনিয়র রাখাল চন্দ্র দাস ও আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট বাবু অশোক ঘোষ।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে মাহবুবুর রহমানকে খুন করা হয়। ভৈরব শহরের চন্ডিবের এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মাহবুব। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের এস এস ফিডার (লোকোশেড) পদে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় তার পরিবার ভৈরবের নিজ বাড়িতে বসবাস করত। মাহবুব প্রতি সপ্তাহে ভৈরবে এসে দুই দিন থেকে রোববার ঢাকায় চলে যেতেন।

ঘটনার দিন গভীর রাতে তিনি খুন হলে তার স্ত্রী রোকসানা ভোরে চিৎকার করতে থাকেন স্বামী মাহবুবকে ডাকাতরা খুন করে পালিয়ে গেছে। তার ডাকচিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে এসে দেখেন মাহবুব বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তার বুকে ছুরির আঘাত রয়েছে। এ সময় স্ত্রীর হাতে ছুরির আঘাত দেখা যায়। তখন স্ত্রী বলেছে ডাকাতরা তার স্বামীকে হত্যা করে তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে।

খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এরই মধ্য স্ত্রী রোকসানাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভৈরব থানার তৎকালীন ওসি মো. শাহিন ঘটনাস্থলে এসে ডাকাতির ঘটনায় সন্দেহ পোষণ করে স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে আটক করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী রোকসানা আক্তার পুলিশের কাছে স্বীকার করে তার বাসার কাছে প্রতিবেশী কলেজছাত্র আসিফের (১৯) সঙ্গে তার পরকীয়া ছিল। মাহবুব ঢাকায় থাকলে প্রেমিকের সঙ্গে রাতে মেলামেশা শারীরিক সম্পর্কে জড়াত। পরে একদিন মাহবুব ভৈরবের বাসায় আসলে তারা দুজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাতে পায়েসের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ান। তিনি ঘুমিয়ে যান এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপর গভীর রাতে প্রেমিক আসিফকে ঘরে প্রবেশ করান স্ত্রী। ঘুমন্ত অবস্থায় আসিফ তার বুকে ছুরিকাঘাত করে মাহবুবকে খুন করে।

এরপর কিশোরগঞ্জ আদালতে তারা দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের কথা স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী ও নিহতের বড় ভাই সাংবাদিক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার ছোট ভাইয়ের তিনটি শিশুসন্তান ছিল। তার স্ত্রী মাহবুবের অনুপস্থিতে পরকীয়ায় জড়িয়ে প্রেমিক আসিফকে দিয়ে তাকে খুন করে ডাকাতি বলে প্রচার করেছিল। পুলিশ হত্যার রহস্যটি উদঘাটন করেছে। এখন তিন সন্তানকে নিয়ে আমার চিন্তা থাকবে। সন্তানরা বাবা-মা দুজনকে হারাল।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Share