বিশেষ সংবাদ

রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়নের হাতিয়ার

চাঁদপুর দেশের অন্যতম প্রাবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্জনকারী জেলা। যার অবস্থান দেশের মধ্যে ৬ষ্ঠ। কুমিল্লা হলো প্রথম। বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স বা বৈদেশিক মুদ্রা এখন দেশের উন্নয়নের হাতিয়ার। চাঁদপুরে রেমিট্যান্সযোদ্ধা ২ লাখ ৬৫ হাজার।

বলতে হয় এক সময় আমাদের দেশে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চিংড়ি মাছ ,চামড়া ও চা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার লাভ করত। উন্নত রাষ্ট্রগুলো এখন পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিক বা সিনথেটিকস বা পলিথিন ব্যবহার করে পাটের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

আমাদের দেশের এক সময় ৭৪টি সরকারি পাটকল ছিল। এর মধ্যে চাঁদপুরেই ৩টি। যা কয়েক বছর ধরে এখনও নামস্বর্শ টিকে আছে। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ পাটকলগুলো সরকারি করেছিলেন। কালক্রমে পাটকলগুলোর অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়ার ফলে হাজার হাজার শ্রমিক পথে বসেছে। দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পাশাপাশি হালকা-পাতলা প্লাস্টিক কিংবা পলিথিনের অবাধ ব্যবহারও এ সব দ্রব্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট শিল্পের অস্তিত্ব বিপন্ন করে দিয়েছে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের ২৩০টি ছোট-বড় নদ-নদীতে প্রচুর চিংড়ী উৎপাদন হতো। এ চিংড়ী বিদেশে প্রচুর পরিমাণে রফতানি হতো। এতে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হয়েছে। কী কারণে এ খাতের এখন কোনোই নাম-ডাক নেই। বিশ্ব বাজার এর চাহিদা কতখানি আছে তা আমার আপাতত জানা নেই। চামড়া শিল্পের অবস্থা গত দু’বছর ধরে তথৈবচ। এক কথায় বলা চলে সর্বনাশ। কোরবানীর চামড়া যমুনা নদীতে ছূড়ে ফেলার দৃশ্য দেখেছি গত কোরবানীর ঈদে। মাটিতে পুতে রাখার দৃশ্যও দেখেছি।

দেশের সকল এতিমখানাগুলোও অর্থনেতিকভাবে এতিম হয়ে গেছে চামড়ার দুবস্থা আর দুর্দশায়। এ শিল্পটিও এখন কুড়েঘরের আলোরমত নিবু নিবু করে জ্বলছে । চা আর গার্মেন্টস শিল্পটি টিকে আছে বিশ্ব চাহিদার কারণে। হাজার হাজার শ্রমিক যেভাবেই হউক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেঁচে আছে ।

শুরু হয় অনেক আগ থেকেই বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের চাহিদা সৃষ্টি হয় । গার্মেন্টশিল্প ও প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের প্রধান উন্নয়নের উৎস হিসেবে এখন বিবেচিত হচ্ছে ।

চাঁদপুর জনশক্তি ও কর্মস্থান ব্যুরো দেয়া তথ্য মতে, বর্তমানে সারা দেশের ১ কোটি ২০ লাখ জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে শ্রম বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে। কিন্তু আবহাওয়া জনিত কারণ, প্রশিক্ষণের অভাব ও ভাষাগত সমস্যায় বাংলাদেশের প্রবাসীরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও বেঁচে থাকার লড়াই-সংগ্রামে বিশ্ব বাজার টিকে রেখেছে।

অক্টোবর ২০২০ এর তথ্য মতে, আর চাঁদপুরের বৈধ প্রবাসীর সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪ শ। চাঁদপুরের সোনালী ,অগ্রণী জনতা ও কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এ ৩ মাসে ৪১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা বৈদেশিক রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। চাঁদপুরে অন্যান্য ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় নেই এ অজুহাতে কোনো কোনো ব্যাংক তথ্য দিচ্ছে না। আবার বলেন , আমাদের কাছে এর কোনো তথ্য নেই। ফলে ্ঔ হিসেব এখানে উল্লেখ করা যাচ্ছে না।

আবার কোনো কোনো প্রবাসী সরকারিভাবে নিষিদ্ধ অর্থ লেন-দেনকারী এজেন্সীর মাধ্যমে বিদেশ থেকে যে টাকা পাঠিয়ে থাকে তা ’ ব্যাংকের খাতায় এর কোনোই হিসেব নেই। কোনো কোনো দেশ থেকে বিকাশেও টাকা পাঠানো হয়। তারও হিসেব রেমিট্যান্সের টালিতে আসছে না। আরো প্রবাসী বন্ধুরা বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় নগদ ডলার বা অন্য মুদ্রা নিয়ে আসে। এর হিসেবও নেই ব্যাংকের কাছে। তা ’ নাহলে দেশের মানুষ জানতো কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে আমাদের সোনার ছেলেরা ।

আমরা দেখেছি-ব্যাংকগুলো কাঙ্খিত গ্রাহককে পাঠানোর পর পরই টাকা দিয়ে দিচ্ছে। মোবাইল নাম্বারে ও গোপন পিন কোডে টাকা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে দেশের প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা । গ্রামের প্রবাদ বাক্যে বলা যায়-‘ ভিজা দড়ির বান ; চিৎ হয়ে দে টান’। বর্তমানে ব্যাংক খাতে সেই পুরানো, মরিচাধরা , জরাজীর্ণ পদ্ধতি নেই। সুতরাং ব্যাংকিং খাতেও আমুল পরিবর্তন এসেছে। সর্বক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিতে এখন ব্যাংকিং সকল প্রকার কাজ চলছে। তা নাহলে মধ্যপ্রচ্য থেকে টাকা পাঠানোর কয়েক সেকেন্ডেই তার গ্রাহককে ব্যাংক টাকা দিতে পারছে ।

এক সময় মানুষ কাজকর্ম রেখে ব্যাংকে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্ট বসে থাকতো। আবার অনেক সাধারণ মানুষ ব্যাংকে যেতে ইতস্তত বোধ করত। কিন্তু এখন একজন গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের কর্তা ব্যক্তি বা মহিলা নিজে এসে সরাসরি ব্যাংক থেকে তাদের সন্তান, ভাই, স্বামী কিংবা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের পাঠানো টাকা নিতে ব্যাংকে আসেন। কালক্ষেপণ না করেই ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করছেন । এসবই হচ্ছে প্রবাসীদের অবদান।

প্রবাসীদের টাকায় আজ ব্যাংক ,বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থে ভাসমান। গ্রামের চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। হাট-বাজারগুলো জমজমাট। এমন কোনো বাড়ি নেই যে সেখানে ইটের তৈরি ঘরবাড়ি নেই। মসজিদ, মাদ্রাসা, পারিবারিক ফটক, কবরস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের চিত্র ফুটে উঠেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায় কতটা উন্নয়ন বিদ্যমান। পারিবারিক বন্ধন, আত্মীয়তা, সামাজিকতা, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ড ও ওয়াজ মাহফিল প্রবাসীদের দান-অনুদানে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন , এবারের করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির গতি এখন ফিরতে শুরু করেছে।

আমাদের দেশের গত দু-তিন মাসে যে পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে এসেছে তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে । দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর সহজ উপায়ে করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার। সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো,প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের কাজ করছে। প্রবাসীদের মৃত্যুজনিত কারণে বিশেষ স্বজনহারানো পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এসব টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল প্রকার সহযোগিতা দিচ্ছে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো ।

চাঁদপুরের জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর দেয়া তথ্য মতে,চাঁদপুরের ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪শ প্রবাসী বৈধভাবে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমশক্তি ব্যবহার করে তাদের পাঠানো অর্থ বা বৈদেশিক মুদ্রা চাঁদপুরসহ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স একদিকে উন্নয়নের হাতিয়ার অপর দিকে রির্জাভ বাড়াচ্ছে ও বিশ্ব বাজারে আমাদের মুদ্রা মান ঠিক রাখছে ।

প্রবাসীরা শ্রমবিক্রি করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে আর একশ্রেণির লোভী, দুর্নীতিবাজ তাদের অপতৎপরতা চালিয়েই যাবে এটা কারো কাংখিত নয় । একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেছেন ,‘ আমাদের প্রবাসীগণ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করছে । সেই টাকা দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। সে থেকে কারো কারো দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করার পথ চিরতরে বন্ধ করার চেষ্টা এখনই নিতে হবে।’

নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের অবসান ধীরে ধীরে হ্রাস হচ্ছে প্রবাসীদের কারণেই।’ প্রবাসীরা বিদেশে অবস্থান করছে আর তাদের সহধর্মিনীরা পাঠানো অর্থে শপিং মল থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত তারা নিজ ইচ্ছামত স্বাধীন ভাবে নিজ নিজ পছন্দে বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও সাংসারিক কেনাকাটা করে জীবন যাপন করতে সক্ষম হচ্ছে। গ্রামের হাট-বাজারগুলো সকাল-বিকেল থাকে টইটুম্বুর। সন্তানদের শিক্ষা ব্যয় ও পোশাক ক্রয় তারা নিজেরাই করছে ।

তথ্য ও প্রযুক্তির ফলে বিদেশ থেকেই মোবাইলে , ইমোতে , ই-মেলে ,ভিডিওকলে,হোয়াটসএ্যাপে, টুইটার্রে বদৌলতে প্রতিদিনই প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে সার্বিক সহযোগিতা দিতে ্আজ সক্ষম হচ্ছে প্রবাসীরা। আর্থিক স্বাধীনতা ব্যতীত একটি পরিবার সুখী ও সমৃদ্ধশীল হতে পারে না। প্রবাসীরা তা করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে ।

এদিকে চাঁদপুর-রায়পুর সংযোগ সেতুর পাশের চাঁদপুর ইনস্টিটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির প্রশিক্ষণের পরই গমনেচ্ছুরা মধ্যপ্রাচ্যসহ ৩৮টি দেশে পাড়ি দিচ্ছে নতুন প্রবাসগামীগণ। যে কোনো শ্রমিক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যসহ ৩৮টি দেশে গমনেচ্ছুক কর্মীদের ওরিয়েন্টেশন কোর্স নামে ফিঙ্গার প্রিন্টি দেয়ার পর ৩ দিনের একটি প্রশিক্ষণ ‘ চাঁদপুর ইনস্টিটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি ’ থেকে গ্রহণ করে সনদ নিয়ে যেতে হয়।

সরকারিভাবে চাঁদপুরের ইনস্টিটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুন থেকে প্রত্যেক বিদেশ শ্রমজীবীকে ৩ দিনের ওরিয়েন্টেশন কোর্সটির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে । জুন ২০১৭ হতে ২০১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৩ হাজার ১শ’৬৩ জনকে এ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ৩ দিনের ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণ কোর্সটি সম্পন্ন ব্যতীত কেউ বিদেশে যাওয়ার কল্পনা করাও ভুল হবে। কেননা এখানে তার সকল তথ্য সংগৃহীত থাকে। বিশ্বে এসব দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঔ প্রবাসীর তথ্য ও ফিঙ্গার টেস্ট কম্পিউটারে ক্লিক করা মাত্রই চলে আসবে। সুতরাং যারা অন্যভাবে যাচ্ছে তারা বিদেশে গিয়ে নানাভাবে নিগৃত বা হয়রানিতে পরছে। দালাল বা কোনো আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে যাওয়ার পর বিমান বন্দরেই আটকে যাবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারের চাহিদা মেটাতে প্রবাসী জনশক্তিকে দক্ষ শক্তিতে পরিণত করে বেকার সমস্যা দূরকরা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

তথ্য মতে, কেবলমাত্র ২০১৯ সালের জানূয়ারি হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০ হাজার ৬শ ৮৭ জনকে ৩ দিনের ঔ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আর জনশক্তি ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে ফিঙ্গার টেস্ট দিযেছে ২৬ হাজার ৫শ ৩৯ জন। এদের অনেকেই বিদেশে যাওয়ার পথে রয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার বৈধ প্রবাসীর সংখ্যা দঁড়িয়েছে ৩ লাক ৩২ হাজার ৯শ ৩৬ জন। দেশের মধ্যে চাঁদপুরের অবস্থান ৬ষ্ঠ। কুমিল্লা ১ম, চট্টগ্রাম ২য়, বি.বাড়িয়া ৩য়, টাঙ্গাইল ৪র্থ, ঢাকা ৫ম স্থানে রয়েছে।

চাঁদপুর ইনস্টিটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির তথ্য মতে, দেশগুলো হলো : সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, ওমান, কুয়েত, মালদ্বীপ, ইরাক, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, লেবানন, মরশিস, বাহরাইন, সাইপ্রাস, সেশিল , ভিয়েতনাম , সংযুক্ত আরব আমিরাত, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সোমালিয়া, আলজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালটা, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিজি, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও সুইডেন ইত্যাদি। একজন ফিঙ্গার টেস্ট প্রদানকারী ও প্রশিক্ষণগ্রহণকারীর সার্বিক তথ্য যে কোনো মুহুর্তের মধ্যেই পেয়ে যাবে এবং তার বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে। ফলে কোনো ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

চাঁদপুর কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগের মতে , ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া দেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো হিসেবে কাজ করে আসছে। দেশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও প্রবাসীদের জন্যে ব্যাংক গঠন হলেও এর অধিদপ্তর নেই। ৬৪ জেলার মধ্যে ৪২ টি জেলায় এর কার্যক্রম চলছে। কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগের মতে ফ্রি ভিসা বলে কোনো ভিসা নেই। প্রকৃতপক্ষে ফ্রি ভিসা একটি বিভ্রান্তমূলক প্রচারণা।

তথাকথিত ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবসহ মধ্রপ্রাচ্যে গিয়ে নিজে নিজে কাজ যোগাড় করা অসম্ভব। চাকুরির নিশ্চয়তা ব্যতিত ফ্রি ভিসার নামে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অথবা কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি কোনো কর্মীকে প্রেরণ করলে তার বিরুদ্ধে ‘ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ এর ৩১ ধারা’ মতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে। এ ব্যাপারে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর একটি বিজ্ঞপ্তিও রয়েছে।

অপচয় ও দুর্নীতি অর্থনীতির রক্তক্ষরণ। আমাদের দেশের এ রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই দেশের সকল অর্থনৈতিক অপচয়ের প্রভাব রোধ করে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় ‘ মুজিব বর্ষে ’ এর একটা সুফল সাধারণ মানুষকে পেতে হবে। তাই অপচয় ও দুর্নীতিবাজদের সুযোগ চিরতরে বন্ধ করতে হবে। কবির ভাষায় বলতে হয় ,‘ আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে, কথায় বড় না হয়ে কাজে বড় হবে ’ আমাদের দেশের যে সোনার ছেলেরা মাসের-পর-মাস বৈদেশিক রেমিট্যান্স পাঠিচ্ছে এবং দেশকে তাদের সাথে এগিয়ে নিতে যাঁরা কাজ করে যাচ্ছে তারাই সোনার ছেলে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আবার তারা রেমিট্যান্স অর্জনে ঝাঁিপিয়ে পড়ছে।

কোভিট -১৯ এর কারণে দেশের উৎপন্ন ফসল শ্রমিকের অভাবে এবার ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছো না। এ ব্যাপারে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কৃষকদের সহায়তা করেছে। জেলা প্রশাসন থেকে বাস ভাড়া করে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় করোনা পরিস্থিতিতে ধান কেটে ঘরে তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এক সময় আমাদের দেশে খাদ্য অভাব বা মন্দা লেগে থাকত। এখন তা নেই বললেই চলে। করোনা পরিস্থিতি শুধূ অন্যদেশে নয়-–আমাদের দেশের প্রত্যেকেই নতুনভাবে ঘুড়ে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিচ্ছে।

চাঁদপুরে প্রেম-ভালোবাসা , আন্তরিকতা , দেশপ্রেম, নীতি-নৈতিকতা,উদারতা ও মানবতা অনেকটাই আমরা করোনা কালের এ বিপদে দেখেছ্। চাঁদপুরে যার উদাহরণ হলো- জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ফোন করলেই ‘ ত্রাণ যাবে বাড়ি।’ সুতরাং মানবিকতায় আমরা অনেকটাই এগিয়েছি।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের রোল মডেল এখন । দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নত দেশ হিসেবে পাড়ি জমাচ্ছে । বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখে আমাদের প্রবাসী সার্ভিস সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রযোনীয় উদ্যোগ আরো নেয়া দরকার। পাশাপাশি দেশের যুবকদের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়াতে হবে ।

প্রয়োজনে সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে যে সব দেশে যে চাহিদাসম্পন্ন শ্রম প্রয়োজন সে রকম দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সরকারকে নিতে হবে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে গার্মেন্টস খাতে বিপর্যয় থেকে উত্তরণের পথ বের করতে। দেশের কারিগরি শিক্ষা আরো গতিশীল এবং বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে ।

২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের সাথে এক হতে হলে দেশের বিরাজমান বেকার সমস্যার সমাধান করে টিকে থাকার উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক হানাহানি ,দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ ও হত্যা প্রতিরোধ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ব দরবারে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে আমাদের প্রবাসী দক্ষ জনগোষ্ঠি আরো বাড়াতে হবে।
বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্যে ব্যাংকগুলোর অলস টাকা ব্যবহার করে এর সমাধান বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করার সময় হয়েছে। শিক্ষিত যুবকদের জন্য বেকার সমস্যা সমাধানে সরকারের যুগপৎ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়ম অচিরেই বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য ।

লেখক : আবদুল গনি , সাবেক শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী , ২৭ অক্টোবর ২০২০ ।

Share