রেমিট্যান্সে হঠাৎ ধাক্কা, বাড়াতে তোড়জোড়

রেমিট্যান্স প্রবাহে হঠাৎ বড় ধাক্কা লেগেছে। কিছুদিন আগেও যেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসছিল, সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময় এক সপ্তাহে এসেছে আট কোটি ডলারের কাছাকাছি। এতে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির জেরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠাতে ক্যাম্পেইন করছে প্রবাসীদের একটি অংশ। এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েকটি ব্যাংককে রেমিট্যান্স সংগ্রহে ডলারের দর নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর মৌখিকভাবে কিছু ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন। রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ পায় এমন ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৮ মে ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম চালু করে।

এ পদ্ধতিতে ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল ১১০ টাকা। এতে ডলারের দর একলাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়। নতুন এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম চালু করার পর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১১৮ টাকায় ডলার কিনেছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক প্রতি ডলার ১১৮.৫০ টাকা থেকে ১১৮.৭০ টাকা দর প্রস্তাব করছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ডলারের দাম বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে, এমন তথ্য তাঁর কাছে নেই।

তবে ব্র্যাক ব্যাংকের সিইও এবং এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন প্রবাসীরা। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার যে শঙ্কা করা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, প্রবাসীদের যাঁরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠান, তাঁরা হুন্ডিতে পাঠাবেন না। আগামী এক সপ্তাহে বোঝা যাবে, রেমিট্যান্স কমবে কি না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ থেকে ২৪ জুলাই দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর চলতি বছরের একই সময়ে এসেছে ১৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রথম ১৮ দিনে আসে ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার, আর ১৯ থেকে ২৪ জুলাই—ছয় দিনে এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিট্যান্স পাঠানো হয় প্রধানত পরিবারের প্রয়োজনে। ফলে সংঘবদ্ধভাবে অনেক দিনের জন্য মানুষ রেমিট্যান্স পাঠাবে না, কিংবা হুন্ডি করবে তা বাস্তবসম্মত নয়। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে জাতিসংঘ যদি তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা নেয়, তখন বিদেশি ঋণ ও অনুদান বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকও সরে দাঁড়াতে পারে। (আজকের পত্রিকা)

Share