রাশিয়ার সাথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্পেন্ট ফুয়েল (বর্জ্য) রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত আরেকটি আলাদা চুক্তি হতে যাচ্ছে। এ চুক্তির ব্যাপারে কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছে।
আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ চুক্তিটি সম্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল চুক্তিতেই বর্জ্য রাশিয়ার নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তারপরও বিষয়টি আরো স্পষ্ট করতেই আলাদা চুক্তিটি (আইজিএ-ইন্টার গভর্নমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট) করা হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা বর্জ্য রাশিয়া নিয়ে যাবে কি-না, তা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে কোনো কোনো দিক থেকে কথা ওঠে। এ নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরিরও চেষ্টা হয়েছে। নতুন চুক্তিটির মাধ্যমে এ অপচেষ্টা রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সরকার।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান গত মাসে রাশিয়া সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলাদা চুক্তি করতে রাশিয়া সম্মত হয়েছে। চুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ খসড়া তৈরির কাজ শেষ হলে চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) আইন অনুসারেই এ চুক্তি সম্পাদন করা হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) বাংলানিউজকে বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি হলে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য জায়গায় চলে যাবে। এতো বড় প্রকল্প নিয়ে লুকোচুরির কিছু নেই। বর্জ্যের বিষয়টি নিয়ে আমি রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি। এ প্রকল্পের আইজিএ’তেই (মূল চুক্তি) বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার কথা আছে। এ চুক্তির এদিক সেদিক হলেও স্পেন্ট ফুয়েল (বর্জ্য) তারা নিয়ে যাবে’।
‘তারপরও আমরা এ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর করতে আলাদা একটি চুক্তির কথা বলেছি। রাশিয়া রাজি হয়েছে। রাশিয়া বলেছে, বাংলাদেশের মানুষের সন্দেহ যেন দূর হয় এবং এ ব্যাপারে আস্থা পায় সেজন্য তারা এ চুক্তি করবে। এর জন্য প্রস্তুতি চলছে’।
রাশিয়ার সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু করা হবে প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজ। এ সময় প্রকল্পের কংক্রিট ঢালাই দেওয়া শুরু হবে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের আগস্টে প্রকল্পের মূল কাজের উদ্বোধন করার প্রস্তুতি চলছে। উদ্বোধনের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আনার চেষ্টা করবে সরকার। সে সময় আইইএ’র ডিজিও (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) আসতে পারেন।
তবে তার আগেই একবার প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম ও মূল কাজ শুরুর প্রস্তুতি দেখতে আইইএ’র ডিজি আসছেন।
পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন ও গাইডলাইন অনুসরণ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউকে বলেন, ‘আগস্টের প্রথম সপ্তাহে মূল কাজ উদ্বোধনের প্রস্তুতি রাখছি। আমরা সে সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আনতে চাই। তিনি এ প্রকল্পের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখেন। যে কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাশিয়ানরা বিশেষভাবে কাজ করছেন। উদ্বোধনের আগেই আইইএ’র ডিজি দেখতে আসবেন’।
‘রাশিয়ার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি নিয়ে ভয় বা সন্দেহের কোনো কারণ নেই। ইতিপূর্বে রাশিয়া ভারতে পারমাণবিক যে প্রকল্পগুলো তৈরি করেছে, তার চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে করা হচ্ছে রূপপুরের প্রকল্প। এ প্রযুক্তি দিয়ে ভারত আরো ৫টি প্রকল্প তৈরির চুক্তি করেছে’।
নিউজ ডেস্ক
।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৯ : ৩০ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ শনিবার
ডিএইচ