বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সন্দেহভাজনদের টেলিফোন কথোকপথন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিপাইন সিনেট কমিটি।
ব্যাংক চুরির ইতিহাসে সাড়া ফেলে দেয়া এ ঘটনায় সিনেট কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রিজার্ভ চুরির ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিপাইনের ব্যাংকিং সিস্টেমে নিয়ে আসায় কারা জড়িত, এখানে কারা এ টাকা পেয়েছেন এবং কারা টাকা বিলি-বন্টনে নির্দেশ নিয়েছেন তা নিশ্চিত হতে পারছে না সিনেট কমিটি। সিনেট শুনানির শুরু থেকে সন্দেহভাজন যাদের ডাকা হয়েছে তারা একে-অন্যকে এ নিয়ে দোষারোপ করে আসছিলেন।
মঙ্গলবার সিনেটের ষষ্ঠ দফা শুনানিতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারি প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের ম্যাসেঞ্জার মার্ক পালমারেসের বক্তব্যে রিজার্ভ চুরি নিয়ে আরো ধোয়াশার সৃষ্টি হয়।
জটিলতা অবসানে সন্দেহভাজনদের ফোনালাপ শোনার প্রস্তাব করেন সিনেট সদস্য বাম অ্যাকুইনো। শুনানিতে উপস্থিত ক্যাসিনো জাংকেট অপারেটর কিম অং, রিজাল কমাশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগুইতো, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারি প্রতিষ্ঠান ফিলরেম প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতুস্তা সিনেটরের এ প্রস্তাব মেনে নেন।
গত দেড় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে সিনেট কমিটি ৬ দফা শুনানির আয়োজন করে। সর্বশেষ শুনানিতে ফিলরেম সার্ভিসের ম্যাসেঞ্জার মার্ক পালমার্স বলেন, স্থানীয় মুদ্রায় যে ৬’শ মিলিয়ন পেসো এবং ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তিনি ফিলরেম প্রধানের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন সেটা সত্যি সত্যি ক্যাসিনো জাংকেট উইক্যাং জু’কে দেয়া হয়েছিল কি-না তা তিনি বলতে পারছেন না। সিনেটের আগের শুনানিতে ফিলরেম সার্ভিসের প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতিস্তা এবং তার স্বামী ওই প্রতিষ্ঠানের কোষাদক্ষ মাইকেল বাতিস্তা জানিয়েছিলেন যে, ওই টাকা ক্যাসিনো জাংকেট উইক্যাং ঝু’কে দেয়া হয়েছে। বিশাল অংকের এ টাকা উইক্যাং ঝু’কে দেয়া হয়েছে রিজাল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগুইতোর টেলিফোন নির্দেশে।
কিন্তু রিজার্ভ চুরির অন্যতম অভিযুক্ত কিম অং সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেছিলেন, চুরির ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উল্লেখযোগ্য অংশ তিনি পেয়েছেন এবং ফিলরেম সার্ভিসের দুই স্বত্বাধিকারি ওই টাকা তার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
উইক্যাং ঝু’র কাছে টাকা পৌঁছানো নিয়ে বাতিস্তা দম্পতির বক্তব্য সত্য নয় বলে সিনেট শুনানিতে উল্লেখ করেন রিজাল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোষ দেগুইতোও।
ফিলরেম সার্ভিসের ম্যাসেঞ্জার মার্ক পালমার্স সিনেট কমিটির শুনানিতে আরো জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি নগদ স্থানীয় মুদ্রা পেসো এবং মার্কিন ডলার সোলারি ক্যাসিনো এবং ৯ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি দফায় দফায় বাতিস্তা দম্পতির বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ টাকার ৮১ মিলিয়ন ডলার যায় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখায় ক্যাসিনো জাংকেট কিম অংয়ের অ্যাকাউন্টে।
বাকি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলঙ্কার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে। প্রাপক সংস্থার নামের বানানে ভুল থাকায় ওই টাকার পেমেন্ট আটকে দেয় ব্যাংক কর্মকর্তারা।
নিউজ : আপডেট ৩:৪২ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ