মুর্খতা হচ্ছে সমাজের অভিশাপ , জীবনের বোঝা। আর সেই বোঝা এবং অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে সারাদিন রিকশা চালিয়ে রোজগারের টাকা দিয়ে প্রতিদিন ক্রয় করছেন কোন বই কিংবা পত্রিকা। রিকশা চালানোর ফাঁকে সুযোগ পেলেই অবসরে কোন নির্জনে বসে পড়ছেন ইংলিশ কিংবা বাংলা ডিকশনারী অথবা কোন গল্পের বই।
মূর্খতা ঝেড়ে ফেলে শিক্ষিত হয়ে বইয়ের আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচেন চাঁদপুরের অসহায় রিকশা চালক আবুল খায়ের।
চাঁদপুরের শহরের বিভিন্নস্থানে প্রায়ই বই কিংবা পত্রিকা হাতে দেখা মিলে রিকশা চালক আবুল খায়েরের। রিকশা থামিয়ে সিটের উপর বসে বইয়ের পাতা খুলে মগ্ন থাকেন জ্ঞান অর্জনে। নিজ খেয়ালে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে পড়তে থাকেন ইংলিশ ও বাংলা বই কিংবা পত্রিকা।
গত ১৪ মার্চ শনিবার রাতে চাঁদপুর শহরের গুয়াখোলা এলাকায় একটি বিদুৎতের খুঁটির নিচে লাইটের মৃদু আলোতে রিকশা থামিয়ে সিটের উপর বসে একটি ইংলিশ বই পড়তে দেখা যায়।
আবুল খায়েরের সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে নিজের টাকায় বিভিন্ন বই, পত্রিকা ক্রয় করে প্রতিদিন নিয়মিত পড়ছেন। তার রোজগারের টাকায় প্রতিদিন স্থানীিয় ও জাতীয় দৈনিক পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকাও কেনেন।
বই পড়ার প্রতি কেন তার এত আগ্রহ এমন প্রশ্নে আবুল খায়ের চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘ছোট বেলায় সহপাঠীরা আমাকে মুর্খ বলে অনেক অপমান করে ছোট করে কথা বলেছেন। তার পর এলাকায় গণশিক্ষা পড়তে গিয়ে সেখান থেকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও আবুল খায়েরের মনে অনেক বড় কষ্ট রয়েছে। কারণ আজ থেকে ৩০/৩৫ বছর আগে যখন তিনি বিয়ে করে সংসার পাতেন তার কিছু দিন পর স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক করে তার সংসার জীবন থেকে চলে যায়। আবুল খায়েরের আক্ষেপ যে তিনি যদি শিক্ষিত হতেন তাহলে হয়তো তার স্ত্রী তাকেএভাবে ছেড়ে যেতেন না। সেই থেকে তার প্রতিক্ষা জীবনে যতোদিন বাঁচবেন ততোদিন বই পড়ে অর্জন করে চলার প্রতিজ্ঞা করেন।
বই পড়ে কোন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আবুল খায়ের বলেন, আমি বই পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। অনেক কিছু শিখেছি। প্রতিদিন পত্রিকা পড়ে দেশের অনেক ঘটনাও জানতে পাড়ি। আমি মনে করি সমাজে মুর্খতার কোন দাম নেই। শিক্ষাই জীবনের সব।
চাঁদপুর সদর উপজেলার উত্তর দাসদী গ্রামের মৃত সেকান্দর গাজীর ছেলে রিকশা চালক আবুল খায়ের (৬০)। বৃদ্ধা মাকে নিয়েই তার জীবন। প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে শহরে বের হন। সারাদিন বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে রিকশা চালিয়ে যা রোজগার হয় তা দিয়েই বৃদ্ধা মায়ের মুখে অন্য তুলে দেন। রোজগারে তেমন কোন চাহিদা নেই তার।
তিনি জানান দুই বছর পূর্বে চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দেয়া রিকশা চালিয়েই তার রুটি রুজি হয়। প্রতিদিন কখনো ৫,শ টাকা কখনো ৩/৪,শ টাকা রুজি হয়। এ থেকেই সংসারের খরচের পাশাপাশি বই পত্রিকা ক্রয় করেন আবুল খায়ের। এই অল্প আয়ের মধ্য থেকেই প্রতিদিন বই পত্রিকা ক্রয় করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচেন আবুল খায়ের।
প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ১৭ মার্চ ২০২০