Monday, 06 April, 2015 09:42:58 PM
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায়ের কপি এখনো কারাকর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছেনি। তবে রায়ের কপি না পৌঁছালেও ফাঁসির সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জেলসুপার ফরমান আলী সোমবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অফিস চলাকালীন অর্থাৎ বিকেল ৫টার মধ্যে কামারুজ্জামানের রায়ের কপি হাতে পায়নি জেল কর্তৃপক্ষ।’
‘রায়ের কপি হাতে না পেয়ে থাকলে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কেন ডাকা হয়েছে?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আদালত রায় দিয়েছেন, সে কারণে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়েছে।’
আজ রায়ের কপি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জেলসুপার বলেন, ‘আদালত যেহেতু রায়ের কপি পাঠিয়েছেন সেহেতু যে কোনো সময় তা কারাগারে আসতে পারে।’
রাতে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর কারাকর্তৃপক্ষের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরপরই কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হবে। সেই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। যদি তিনি প্রাণভিক্ষা চান তাহলে সে অনুযায়ী তাকে সুযোগ দেয়া হবে। আর যদি না চান তাহলে আইনানুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’
প্রাণভিক্ষা না চাইলে আজ রাতে তাকে ফাঁসি দেয়ার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই কারাগারের ভেতর চলে যান।
আবারও প্রস্তুত আলোচিত সেই জল্লাদ শাজাহান। জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, এরশাদ শিকদার, বঙ্গবন্ধুর খুনি, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে এই শাজাহানের হাতেই।
জামায়াতে ইসলামির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়া পর সোমবার রাতেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে পাওয়া গেল জল্লাদ শাজাহান, রাজু ও জনির প্রস্তুত থাকার খবর।
কাশিমপুর কারাগার থেকে জল্লাদ শাজাহানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে রোববার। শাজাহানের সঙ্গে জনিকেও আনা হয়েছে কাশিমপুর থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে। তাদের সঙ্গে প্রস্তুত আছেন কেন্দ্রীয় কারাগারে আগে থেকেই অবস্থান করা আরেক জল্লাদ রাজু।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরীণ একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে আজ রাতেই কামারুজ্জামানের দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হবে নিশ্চিত করে এমন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এছাড়া রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ এখনো হাতে রয়েছে এই যুদ্ধাপরাধীর।
সূত্রমতে, জল্লাদ শাজাহান হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দেশের ৬৮টি কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের জন্য রয়েছে ২০/৩০ কয়েদি, যারা জল্লাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দেশের জল্লাদদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত দু’জন হলেন- জল্লাদ শাজাহান ও কালু। এদের হাতেই কার্যকর হয় বহুল আলোচিত রিমা হত্যা মামলার আসামি মুনীরের ফাঁসি। ২০০৭ সালে জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইকে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য শাজাহানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ময়মনসিংহ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এরপর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেয়া হয়। এসময় শাহাজানকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। নির্ধারিত তারিখের দুই দিন আগেই তাকে আনা হয়েছিল।
কারা সূত্রমতে, জল্লাদদের প্রত্যেকেই খুনের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত। একটি ফাঁসির কাজে অংশ নিতে পারলে তাদের দুই মাসের কারাদণ্ড মওকুফ হয়। এ সুযোগ নিতে কয়েদিরা ফাঁসির রায় কার্যকর করার কাজে অংশ নিয়ে থাকেন।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫