কষ্ট নেবে কষ্ট। হরেক রকম কষ্ট আছে। লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট। পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট। আলোর মাঝে কালোর কষ্ট। কবির মনের কষ্টগুলো হয় তো কবিতার মাঝে প্রকাশ পায়। তবে এমন অনেক কষ্টের গল্প আছে। যেগুলো অপ্রকাশিত রয়ে যায়। যে কষ্ট কথাগুলো শুনে না কেউ। পৌঁছায় না কোন উপর মহলে। সেই কষ্টের গল্পগুলো মস্ত বড় আকাশে বাতাসের সাথে ঘুরে বেড়ায়।
এটু ঘুমাতে গেলেই বাতাসগুলো কানে কাছে এসে ফিসফিস করে মনে করিয়ে দেয়, দারিদ্র্যতা দুঃখ যন্ত্রণা আর না পাওয়ার গল্পগুলো।
একজন দুঃখ ওয়ালা অসহায় হতভাগা দারিদ্র্য ভূমিহীন জেলে জামাল মিজি (২৯)। তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৯নং ওয়ার্ড ভাটিয়ালপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত ২৬ বছর ধরে ভাটিয়ালপুর মুন্সি বাড়ির পূর্ব পাশে জেলা পরিষদের পুরাতন রাস্তায় ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছে। অসহায় দারিদ্র্য ভূমিহীন জামাল মিজির পরিবার ।
মাথাগজার ঠাঁই নাই। নিজের বলতে কোন ভূমি নেই। সেই কষ্টটা গত ২৬ বছর ধরে হৃদয়ে বন্দী করে রেখেছে। ধীরে ধীরে সেটা পাহাড় সমান কষ্ট পরিনত হয়েছে। প্রতিনিয়ত সেগুলো বয়ে চলতে চলতে। আজ সে অসুস্থ। কষ্টের গল্পটার সূচনা হয়। ২৬ বছর আগে।
এ-বিষয় জামাল মিজি(২৯) বলেন’ আমার বাবা লুনি মিজি ২৬ বছর আগে ঋনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে। নিজের ভিটামাটি বিক্রি করে দিয়েছে। সেই থেকে আমার বাবা মা এবং চার ভাই কামাল মিজি, শামসল মিজি, বাবুল মিজি এবং আমি। সরকারি এই রাস্তায় বসবাস করছি। প্রথমে বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে ছোট ছোট ঘর করে থাকতাম। তারপর মানুষের সহযোগিতায় পুরান টিন আর বাশঁ দিয়া চাপ দিয়া কোন মতে ছোট ঝুপড়ি ঘরে করে আছি।
জানতে চাওয়া হয়, সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা দেওয়া হয় কি না? জামাল মিজি বলেন’ আমরা গরীব মানুষ। আমাগো থাকার মত ঘর নাই থাকার মত কোন জায়াগা নাই । এত গরীব হওয়া শর্তেও। সরকারের কোন সাহায্য সহযোগিতা পাই না। মানুষ কয় সরকার নাকি মানুষ ঘর দেয় বাড়ি দেয়। আমাগো তো কিছুই দেয় না।
হালকা বাতাসের শীতলতার ছোঁয়ায় সবার হৃদয় ছুয়ে যায়। অথচ এটু বাতাস আসলেই জামাল মিজির পাঁচ বছর বয়সে ছোট শিশু কন্যার আমেনার (৫) হৃদয় ভয়ে শক্ত হয়ে যায়। এই বুঝি ঘরে টিন বাতাসে উড়ে গেল। কিংবা ঘর ভেঙে মাথায় উপর পড়লো। বৃষ্টি এলে টিনের ছিদ্র দিয়ে টপটপ করে ঘরে মধ্যে পানি পড়ে। আর আমেনার মা সালমা বেগম (২৬) পলিথিন দিয়ে টিনের রন্ধ্র গুলে বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে থাকে।
জামাল মিজি পেশায় একজন দারিদ্র্য জেলে। ডাকাতিয়ার নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। নদীতে মাছ তেমন পাওয়া যায় না। আর নদীতে কচুরিপানা থাকায় মাছ ধরতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়৷ ফলে দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করে বেচেঁ থাকতে হয় জামালের পরিবার । কখনো একবেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়েই। জীবন যুদ্ধ করে যাচ্ছে জেলে জামাল মিজি ।
স্থানীয় সমাজসেবক আলহাজ্ব মোহাম্মদ রসু মিয়া বলেন “সদ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে গনসংযোগে করতে গেলে জামালের স্ত্রী আমাকে তাদের দুর্দশার কথা জানান। আমি উদ্যোগ নিয়েছি একটা ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য। আমি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করছি। আপনাদের নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী। ভূমিহীন জামালের থাকার জন্য একটি ঘর ও পারলে একটু জমির বন্দোবস্ত করে দিতে চেষ্টা করুন। এতে জামাল তার স্ত্রী ও ৫ বছর বয়সী মেয়েটিকে নিয়ে সুন্দর ভাবে বাঁচতে পারবে।
প্রতিবেশি সোলেমান মুন্সি বলেন ‘ জামাল একেবারে অসহায়। সে প্রথমে এখানে বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরি করে। তারপর বিভিন্ন সময়ে মানুষের সাহায্য নিয়ে টিনের ঘর তুলেও এটু জোরে বাতাস আসলে ঘর ভেঙে যায়। সরকারে কাছে জোর দাবি করছি। তাদেরকে একটা ঘরে ব্যবস্থা করে দিন ।
শুধু মাত্র বেঁচে থাকতে প্রতিটি মূহুর্তে জীবন যুদ্ধ করে যাচ্ছে। জেলে জামাল মিজি। জামাল-সালমা দম্পতির পাঁচ বছর বয়সের একজন কন্যা সন্তন আছে। মেয়ের ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করতেই দুচোখ অশ্রুতে ভরে যায় মা সালমা বেগমের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সরকারের কাছে দাবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিহীন গৃহহীন মানুষকে গৃহ দেওয়ার প্রকল্প থেকে সরকার যদি তাদেরকে একটি ঠিকানা হিসেবে। এটু ভূমির ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে জামাল মিজির একটি আপন ঠিকানা হতো।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি বলেন ‘আমি প্রতি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে বলেছি। যদি ভূমিহীন ঘরহীন কেউ থাকে। তাদের তালিকা দিতে। তারা যদি না দেয়। তাহলে আমার করার কি আছে? আমি কি করবো?
স্টাফ করেসপন্ডেট,১৬ জুন ২০২১