রাষ্ট্রীয় শোক পালনে আজ মসজিদে-মন্দিরে প্রার্থনা : ফিলিস্তিনের পাশে বাংলাদেশ

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা ও ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা ও ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ। শোক পালনের অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার দেশের সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। যুদ্ধ বন্ধের সঙ্গে গাজায় জরুরি ওষুধ, শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠানোর ঘোষণার মাধ্যমে শক্তভাবে শান্তির পক্ষে দাঁড়াল বাংলাদেশ। শুধুমাত্র ফিলিস্তিন ইসরাইল সংঘর্ষ নয় এর আগে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের জন্যও বিশ্ববাসীর কাছে জোর আহ্বান জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। বিশ্বে মানবতার পক্ষে সোচ্চার পশ্চিমা বিশ্বসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশও যখন নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে দ্বিধায় ভুগছে সেখানে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

বারবার মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফিলিস্তিনের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বাংলাদেশ পাশে থাকবে। কারণ ফিলিস্তিনের ওপর বারবার হামলা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান হলো অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। ইসরাইলের দখল করা ভূমি ফিলিস্তিনের জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। ফিলিস্তিনের জনগণকে তাদের ভূমি ফিরিয়ে দিতে হবে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার দিন বৃহস্পতিবার সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। আজ শুক্রবার বাদ জুমা ফিলিস্তিনে হতাহতদের জন্য বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। শনিবার সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি, বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য বাংলাদেশ ওষুধ, শুকনো খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানোর চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নারী ও শিশুদের জন্য ওষুধ, শুকনো খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে বুধবার বাংলাদেশ দায়িত্বপালনরত ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনে জরুরি ওষুধ, জিনিসপত্র পাঠানোর ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত গাজায় সহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। মূলত ইসরাইলি বাধার কারণে গাজাতে ত্রাণ পাঠানোতে বিপত্তির সামনে পড়তে হচ্ছে। সেই কারণে বাংলাদেশ থেকে এখনো ত্রাণ পাঠানো যায়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেখানে জরুরি ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে বুধবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে ইসলামি সহযোগী সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ইসরাইলের বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ গোটা মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি ভূখ-ে ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানায়। কেননা এ আগ্রাসনে ৩ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু।

তিনি বলেন, গাজায় ইসরাইল যে অভিযান চালাচ্ছে তা শুধু অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটি মানবাধিকার ও মানবিক আইনের সমস্ত মৌলিক নীতিকে লঙ্ঘন করে। বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গাজায় জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়।

মোমেন বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। কারণ সেখানে সহায়তা দিতে দিচ্ছে না ইসরাইল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজুলেশন এনেছিল রাশিয়া। কিন্তু সেটি গৃহীত না হওয়াকে দুঃখজনক হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশ।

গাজায় একটি হাসপাতালে বর্বর

মোমেন বলেন, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সংঘাতের মূল কারণ সমাধানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানায়। আমরা বিশ্বাস করি, এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি জনগণের আত্ম-অধিকার উপলব্ধির মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরাইলে হাজার হাজার রকেট ছোড়ে হামাস। একইসঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলের ভূখ-ে প্রবেশ করে হামলা চালান হামাসের যোদ্ধারা। জবাবে ওইদিন থেকেই পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইল। এরপর থেকে তারা অবরুদ্ধ গাজায় টানা বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

হামাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি বিমান হামলায় ৩ হাজার ৫০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, হামাসের হামলায় ইসরাইলের ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

Share