কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
গত ১৪ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে ইসির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে অনুরোধও জানিয়েছেন।
যদিও গত ২০ ডিসেম্বর সেই চিঠিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। সেদিন ইসি শাহাদাত বলেন, এটা হয়তোবা কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এগুলোর কোনোটার ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। এরকম একটা বিষয় উপস্থাপন করা সুধীজনের জন্য বিবেচনা প্রসূত নয়।
এর চারদিন পর বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ৪২ নাগরিকের তোলা অভিযোগের বক্তব্য দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো প্রশ্ন নেননি সিইসি নূরুল হুদা। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অসদাচরণের’ যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলোকে ভিত্তিহীন, অসত্য ও অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। ছিলেন না নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
ইসির ভাষ্য, ৪২ নাগরিক ভার্চুয়াল সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। অভিযোগটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করানোর জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। বিষয়টি কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে আজকের (বৃহস্পতিবার) এ সংবাদ সম্মেলন।
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য
১. নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য বক্তৃতা না দিয়ে বিশেষ বক্তা হিসেবে সম্মানী গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করণ, নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালন, মনোনয়নপত্র বিতরণ, গ্রহণ ও বাছাই, আইনানুগভাবে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দ্বারা ভোট গ্রহণ এবং ফলাফল ঘোষণা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন পূর্বের এক যুগের অভিজ্ঞতার আলোকে সব স্তরের প্রায় ৬-৭ লাখ জনবলের দক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৫ জন বিশেষ বক্তা, কোর্স উপদেষ্টা ও অন্যান্য প্রশিক্ষকসহ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন করে, যা কমিশন অনুমোদন করে।
কর্মপরিকল্পনায় ১৫ জন বিশেষ বক্তার সম্মানী ভাতা বাবদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ কোটি চার লাখ টাকার এবং ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারগণ (পারিশ্রমিক এবং সুবিধাদি) ১৯৮৩ অধ্যাদেশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ন্যায় অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্য বিধায় অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাদের জন্য নির্ধারিত হারেই এই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ জন বিশেষ বক্তা প্রশিক্ষণ প্রদান করে সম্মানী গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও প্রশিক্ষণ কোর্সের উপদেষ্টা হিসেবে ইসি সচিব সম্মানী নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ খাতের অব্যবহৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট আয়-ব্যয় কর্মকর্তা কর্তৃক ট্রেজারিতে ফেরত দেয়া হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৮৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রশাসনিক ব্যয় সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর ৭(১) ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এই খাতে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত বরাদ্দ ব্যয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০৯ এর ৭(২) ধারা অনুযায়ী সব ব্যয় অডিট যোগ্য। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি না হলে ব্যয়কৃত অর্থ কোষাগারে ফেরত যাবে। সমস্ত প্রক্রিয়া দালিলিক প্রমাণ ভিত্তিক, এ ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ১৫ জন বিশেষ বক্তার জন্য কর্মপরিকল্পনায় ২ কোটি টাকার বরাদ্দই ছিল না। সেখানে নির্বাচন কমিশনারদের ‘বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেয়ার নামে ২ কোটি টাকার মতো আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম’ মর্মে অভিযোগটি অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে, যা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৭(৩) অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু প্রশিক্ষণ প্রদানের সম্মানীর সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। ফলে সংবিধানের ১৪৭(৩) অনুচ্ছেদ লংঘনের প্রশ্নই উঠতে পারে না এবং সংবিধানের এ ধরনের অপব্যাখ্যা কোনো ক্রমেই কাম্য নয়।
২. কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কেএম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ৩৩৯টি শূন্য পদে টেলিটকের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন আহ্বান করে ৫টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। টেলিটকের মাধ্যমে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭২৮টি আবেদন পাওয়া যায় এবং পিপিআর ২০০৮ অনুসরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদকে নৈর্ব্যত্তিক ও লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। অতঃপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে যেখানে জনপ্রশাসন, অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম-কমিশনের ৩ জন বহিঃসদস্যের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কর্তৃক ৪১দিনব্যাপী মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষে যথানিয়মে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কোনো মহল থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ওয়েবসাইটসহ ৫টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদকে নৈর্ব্যত্তিক এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ক্রস চেকের মাধ্যমে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ৯২২ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে। প্রার্থীদের কাছ থেকে ফি বাবদ আদায়কৃত ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার ৪৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে মর্মে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত।
৩. নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করার অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, একজন কমিশনারের প্রাধিকারে ১টি জিপ ও ১টি কার রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এ কমিশন শপথ নেয়ার দিন অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ২২ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৩ (তিন) বছর ৬ মাস প্রাধিকারভুক্ত জিপ গাড়িটি দিতে পারেনি। আইডিয়া প্রকল্প থেকে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই অফিসের কাজে ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশনের ৪ জন ড্রাইভারের দায়িত্বে ৪টি জিপ গাড়ি প্রদান করে। সচিবালয় থেকে কমিশনারদের প্রাধিকারভুক্ত জিপ গাড়িটি পাওয়া না যাওয়ায় কমিশনাররা সচিবালয়ের কাজের পাশাপাশি জিপ গাড়িটি অফিসে আসা যাওয়া ও ভ্রমণের কাজে ব্যবহার করেছেন মাত্র।
চলতি বছরের গত ১২ নভেম্বর নতুন গাড়ি ক্রয়ের পর থেকে কমিশনাররা তাদের প্রাধিকারভুক্ত ২টি গাড়িই ব্যবহার করছেন। প্রকল্প থেকে গাড়িটি অফিসের কাজে ব্যবহারের জন্য কমিশন সচিবালয়কে দেয়া হয়েছে, নির্বাচন কমিশনারদেরকে নয়; তাই নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক গাড়ি ফেরত দেয়ার প্রশ্ন উঠে না। অফিসের কাজে প্রকল্প থেকে দেয়া গাড়িগুলো সচিবালয়ের কর্মকর্তারাই আগের মতো এখনও ব্যবহার করছেন।
নির্বাচন কমিশনাররা তাদের প্রাধিকারভুক্ত একটি জিপ (পাজেরো স্পোর্টস) ও একটি কার (টয়োটা করোলা) এবং এর জন্য নির্ধারিত পরিমাণ জ্বালানীই ব্যবহার করেন। নতুন গাড়ি বিলাসবহুল তাতো নয়ই অতি সাধারণ মানের। নির্বাচন কমিশন গাড়ি বিলাস করেনি বরং ৩ বছর ৬ মাস প্রাধিকারভুক্ত গাড়ি পায়নি, তারা প্রকল্প থেকে সচিবালয়ের কাজের জন্য দেয়া গাড়ি শেয়ার করে ব্যবহার করেছেন মাত্র। কাজেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
৪. ইভিএম ক্রয় ও ব্যবহারে অসদাচরণ ও অনিয়মের অভিযোগের জবাবে কেএম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে গতিশীল ও ত্রুটিমুক্ত করার লক্ষ্যে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে ভোটদান সহজ হয়েছে এবং দ্রুত ফলাফল প্রচার সম্ভব হচ্ছে। ভোটদান পদ্ধতিকে সহজ, স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করার জন্য বর্তমানে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সফলতার সঙ্গে ইভিএম ব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত উপেক্ষার বিষয়ে ইসির ভাষ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে কতিপয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। তাতে ভোটারদের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে দেশের সব জেলায় সাধারণ ভোটারদের জন্য ইভিএম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে অংশীজনদের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া হয়। উপস্থিত প্রদর্শনী ও মতবিনিময় করা হয়। প্রদর্শনীতে সবার জন্য ইভিএমকে উন্মক্ত পরীক্ষণ ও ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া হয়। সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ইভিএম সম্পর্কে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়। বাংলাদেশে নিযুক্ত একাধিক রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক আমাদের ইভিএম পরীক্ষা করেছেন এবং তারাও ইভিএ ও ইভিএমের প্রশংসা করেছেন।
পেপার ট্রেইল ছাড়াই ইভিএমের বিষয়ে কমিশন বলছে, ইভিএমে ভোটার যাচাইযোগ্য কাগজ নিরীক্ষার ট্রেইল (ভিভিপিএটি) ব্যবহারের যান্ত্রিক সমস্যার কারণে পুরো ইভিএম সিস্টেম বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় ভিভিপিএটির আধুনিক সংস্করণ ভোটার যাচাইযোগ্য ডিজিটাল অডিট ট্রেইল (ভিভিডিএটি) সংযুক্ত রয়েছে। ভিভিডিএটির ফলে ভোটার ভোট প্রদানের পরে তার নির্বাচিত প্রতীক দেখে নিশ্চিত হতে পারেন এবং প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের (ডিজিটাল ব্যালট) তথ্য ইলেকট্রনিক্যালি সংরক্ষিত থাকে, যা পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক পুনঃগণনা করা যায়।
ইভিএম ক্রয়ের বিষয়ে ইসি বলেছে, নির্বাচন কমিশন ইভিএম আমদানি করেনি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক কর্তৃক ইভিএম প্রকল্প অনুমোদনের পর পিপিআর ২০০৮ এর ‘অর্পিত ক্রয়কার্য’ বিধান পদ্ধতি অবলম্বন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তা ক্রয় করা হয়। ‘অর্পিত ক্রয়কার্য’-এর শর্তানুসারে ইভিএম সরবরাহ করা হয়। ইভিএম ক্রয়ের কোনো তহবিল কমিশনের কাছে ন্যস্ত হয় না। এর বিল সরকারিভাবে সরাসরি সেনাকর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়। এ কাজে নির্বাচন কমিশন কোনো আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে না। এখানে দুর্নীতির কোনো প্রশ্ন ওঠে না।
আমাদের ইভিএমের কনফিগারেশন/স্পেসিফিকেশন ভারতের ইভিএমের তুলনায় আধুনিক। ভারতে ব্যবহৃত ইভিএম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট কিংবা স্মার্টকার্ড কিংবা ভোটার নম্বর ব্যবহার করে ভোটারের বৈধতা যাচাই করতে পারে না। তাছাড়া, ভারতের ইভিএম কেন্দ্রের ভোটার তালিকার (বায়োমেট্রিকসহ) ডাটাবেজ সংরক্ষণ করতে পারে না। বাংলাদেশের ইভিএমে ওই ফিচারগুলো সংযুক্ত করার নিমিত্ত মেশিনের সঙ্গে উন্নতমানের ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, কার্ড রিডার, পোলিং এজেন্টদের সুবিধার্থে ভোটারের ছবিসহ তথ্য এবং ভোটারের প্রদর্শনযোগ্য তথ্য প্রদর্শনের জন্য ডিসপ্লে ইউনিট ইত্যাদি সংযুক্ত। কারিগরি বিনির্দেশ তুলনা করলে দেখা যাবে দুটি সম্পূর্ণ পৃথক সক্ষমতার ইভিএম। সুতরাং দুটি ইভিএমের দর/মূল্য তুলনাযোগ্য নয়।
৫. জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ ২০১৮ সালে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। নির্বাচন নিয়ে তারা অভিযোগ তোলেননি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ দল সংবাদ সম্মলেনে উল্লেখ করেছেন। ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রচারেও কোনো গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের কোনো বিষয় প্রচার করা হয়নি।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অনেকগুলো ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করা হয় এবং পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বাতিল করে সেখানে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২০ সালে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বাতিল করা হয়। অভিযোগ সঠিক হলে যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভোটে অনিয়ম সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
ভোট অনুষ্ঠানের পর রিটার্নিং অফিসাররা ফলাফল নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচনী ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের পর আদালতের আদেশ ব্যতিত ওই ফলাফল বাতিল বা পরিবর্তনের কোনো এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অথবা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফলাফলে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি আদালতের দারস্থ হয়ে থাকলেও আদালত থেকে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল বা পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো আদেশ নির্বাচন কমিশনে অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। অতএব এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে যে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে- তা অনভিপ্রেত এবং আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি পদে ২-৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট পড়ে ৬০-৮০ শতাংশ। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা চলে গেছে এমন মন্তব্য ভিত্তিহীন বলেও মন্তব্য করেছে নির্বাচন কমিশন।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,২৪ ডিসেম্বর ২০২০