জাতীয়

রামপাল ইস্যুতে সুন্দরবন পরিদর্শনে আসছে ইউনেস্কো : জবাব দিতে প্রস্তুত সরকার

আগামী ডিসেম্বরে ইউনেস্কোর সুন্দরবন পরিদর্শনে কোনো ‘নেতিবাচক’ প্রতিবেদন যেন না হয়, তা নিশ্চিতে সব ‘জবাব’ নিয়ে তৈরি আছে সরকার।

আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ইউনেস্কোর চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আসছে। এই পরিদর্শনে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি বিশ্ব ঐতিহ্যের পূর্বশর্তগুলো কতটুকু মেনে চলা হচ্ছে তা দেখবে ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে।

এনিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, “পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে ইউনেস্কোর কর্মকর্তারা বাংলাদেশে আসছেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর তাদের আসার কথা রয়েছে।”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, “৯ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের আসার কথা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কয় তারিখে আসছে তা বলা যাচ্ছে না। কখন আসবে, কী শিডিউল এখনো জানায়নি এভাবে।”

চার সদস্যের প্রতিনিধি দল আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সুন্দরবনের ওই সাইটটা দেখার জন্য আসবে; আসুক। প্লাস আমাদের সঙ্গে কথা বলবে। তারা দেখুক কী অবস্থায় রয়েছে, পজিশনে আছে দেখে যাক।

“তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে যায়, দেখে হেরিটেজের কী অবস্থা। সেটা দেখার জন্যে তারা আসবে। এখন এসে তারা কতটুকু কী দেখবে, কী প্রশ্ন করে- ডিপেন্ড করবে আমাদের জবাবের ওপরে।”

ইউনেস্কো প্রতিনিধি দল সুন্দরবন এলাকা পরিদর্শন করে ‘নেতিবাচক’ কিছু পাবে না বলে মনে করেন বিল্লাল।

“আমাদের থেকে জানবে, জবাব চাইবে। যদি কোনো রিপোর্ট দেয়, আমরা জবাব দেব। বন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর- আমরা আমাদের মতো কাজ করে যাচ্ছি সুন্দর মতো, যাতে কোনো সমস্যা না হয়, কোনো নেগেটিভ রিপোর্টও যাতে করতে না পারে।”

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চে ইউনেস্কোর তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

পরে তাদের প্রতিবেদনে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রকল্পটি অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়। তা না হলে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা বাতিল করে একে ‘বিপন্ন’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে পোল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির অধিবেশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়।

এরপর মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি প্যারিসে ইউনেসকো সদর দপ্তরে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যুক্তিগুলো তুলে ধরেন এবং প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে ইউনেসকোর সমর্থন প্রত্যাশা করেন।

শেষ পর্যন্ত এ বছর জুলাই মাসে আজারবাইজানের বাকুতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম সভায় ‘বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের’ তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের অন্তর্ভুক্তি আপাতত এড়াতে পারে বাংলাদেশ।

সুন্দরবন সুরক্ষায় তারা কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব।

বিল্লাল হোসেন বলেন, “খারাপ কিছু করছি না; যা কিছু করছি দেশের জন্যে, মানুষের জন্য করছি। পরিবেশ যাতে ভালো থাকে সেজন্য করছি; সুন্দরবনও যাতে সুরক্ষা হয়, সেভাবে কাজ করছি। (ইউনেস্কো প্রতিনিধি দল) নেগেটিভ তেমন কিছু দেখতে পারবে না।”

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্বের বর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’র তালিকাভুক্ত করে।

সুন্দরবনে রয়েছে হরিণের অবাধ বিচরণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলে এই সুন্দরবনে।

২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে।

চুক্তির পর থেকেই তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।

তাদের ভাষ্য, এই প্রকল্প সুন্দরবন ও সেখানে থাকা বণ্যপ্রাণীদের জন্য ‘ভয়াবহ হুমকি’র কারণ হয়ে উঠবে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ও উন্নতমানের আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করা হবে। এতে সালফার, ফ্লাই অ্যাশ ও অন্যান্য উপাদানজনিত বায়ুদূষণের পরিমাণ ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ থাকবে, যার ফলে পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।

Share