টি-টোয়েন্টি যেন পুরোপুরি থ্রিলার গেম। টানটান উত্তেজনায় ঠাসা, মুহূর্তের মধ্যে রঙ বদলে ফেলার অসাধারণ মোহনীয় ক্ষমতা তার। আইপিএল যেন থ্রিলার গেমের আদর্শভূমি। এর মধ্যে কোনো দল যদি জিততে জিততে একেবারে শেষ ওভারে গিয়ে টানা হারতে থাকে, তখন তাকে কী বলা হবে! নিশ্চিত থ্রিলারের চেয়েও বেশি কিছু।
আইপিএলের বর্তমান মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ক্ষেত্রে ঘটছে ঠিক এই ঘটনাই। টানা তিনটি ম্যাচ হেরেছে তারা একেবারে শেষ ওভারে গিয়ে। শেষ ওভারের রহস্যজট যেন কাটছেই না তাদের। আজ নিজেদের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কী পারবে বিরাট কোহলির রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে সেই রহস্যের জট কাটাতে। পাবে কী এবারের আইপিএলের নিজেদের প্রথম জয়ের দেখা!
এবারের আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই নিজেদের মাঠ ওয়াংখেড়েতে মোস্তাফিজের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স মুখোমুখি হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের। টস হেরে প্রথম ব্যাট করতে নেমে ১৬৬ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল তারা চেন্নাইয়ের সামনে।
জবাব দিতে নেমে চেন্নাইয়ের ব্যাটসম্যানরা ভালোই প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। বিশেষ করে মুম্বাইর বোলাররা রান দেয়ার ক্ষেত্রে যেন কৃপণতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। এক সময় মনে হচ্ছিল, মুম্বাইয়ের জয় একেবারে নিশ্চিত। কিন্তু বিপত্তিটা বাধে ১৮ এবং ১৯তম ওভারে এসে। এই দুই ওভারেই ৪০ রান তুলে নেয় চেন্নাই। ১৮তম ওভারে মিচেল ম্যাকক্লেনঘান দিয়েছেন ২০ রান। ডোয়াইন ব্র্যাভো একাই নিলেন ১৯ রান।
পরের ওভার করতে আসেন জসপ্রিত বুমরাহ। ওভারের শেষ বলে তিনি ব্র্যাভোর উইকেট তুলে নিলেও আগের ৫ বলে দিলেন ২০ রান। একাই এই ২০ রান নিয়েছিলেন ব্র্যাভো। ২ ওভারে ৪০ রানেই তো হেরে গেলো মুম্বাই। শেষ ওভারে চেন্নাইর প্রয়োজন ছিল মাত্র ৭ রান। বোলার মোস্তাফিজ। প্রথম তিন বল তো কেদার যাদবকে ব্যাটেই বল লাগাতে দিলেন না তিনি।
জয়ের প্রত্যাশা আবারও বেড়ে যায় মুম্বাইর। কিন্তু ওভারের চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে একটি করে ছক্কা এবং চার মেরে চেন্নাইকে জিতিয়ে দেন কেদার যাদব। ১ বল বাকি থাকতেই হেরে যায় মুম্বাই। শেষ ওভারে এসে হারতে হলো তাদের। যদিও, এই ম্যাচে মুম্বাই হেরেছে মূলতঃ আগের দুই ওভারে ৪০ রান দেয়ার কারণেই।
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স সফর করেছিল হায়দরাবাদ। এই ম্যাচেও টস হেরে ব্যাট করতে নামতে হয় মুম্বাইকে। লো স্কোরিং ম্যাচে মুম্বাইয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় মাত্র ১৪৭। সামান্য এই পুঁজি নিয়ে প্রাণপন লড়াই করে মুম্বাইর বোলাররা। বিশেষ করে জসপ্রিত বুমরাহ আর মোস্তাফিজুর রহমান। মায়নাক মার্কান্দের বলে শুরুতে মড়ক লেগেছিল। পরে দীপক হুদা আর ইউসুফ পাঠান মিলে যখন ধীরে ধীরে হায়দরাবাদকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন বুমরাহ আর মোস্তাফিজ মিলে মুম্বাইকে নিশ্চিত জয়ের পথে নিয়ে আসেন।
১৮তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন বুমরাহ। পরের ২ ওভারে হায়দরাবাদের প্রয়োজন মাত্র ১২ রান। ১৯তম ওভারে এসে মোস্তাফিজ দিলেন মাত্র ১ রান। উইকেট নিলেন দুটি। শেষ ওভার করার জন্য বল তুলে দেয়া হলো বেন কাটিংয়ের হাতে। রান প্রয়োজন ১১। প্রথম বলেই ছক্কা খেয়ে বসলেন কাটিং। শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে দীপক হুদা জিতিয়ে দিলেন হায়দরাবাদকে। আবারও শেষ ওভারে গিয়ে হারতে হলো মুম্বাইকে।
তৃতীয় ম্যাচে নিজেদের মাঠেই মুম্বাই মুখোমুখি হয়েছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের। এবারও টসে পরাজয়। সুতরাং, অবধারিতভাবেই প্রথমে ব্যাট করতে হবে। মুম্বাই ব্যাটিংটাও করলো ভালো। ১৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড় করিয়ে দিলো দিল্লির সামনে।
দিল্লির ব্যাটসম্যানরা বেশ পরিকল্পনা করেই খেলে যাচ্ছিল। মুম্বাইর অধিনায়ক রোহিত শর্মা বোলার ব্যাবহারের ক্ষেত্রে একটু সাবধানি। শেষ চার-পাঁচ ওভার তো ডেড ওভার। এ কারণে, শেষ চার ওভার তিনি রাখলেন বুমরাহ আর মোস্তাফিজের জন্য। বুমরাহকে আনা হলো ১৭তম ওভারে। এই ওভারে শর্ট থার্ডম্যানে দাঁড়িয়ে দুটি ক্যাচ মিস করলেন মোস্তাফিজ। মুম্বাইর পরাজয় যেন তখনই লেখা হয়ে গিয়েছিল।
তবুও শেষ ওভারে দিল্লির প্রয়োজন ছিল ১১ রান। বোলার মোস্তাফিজ। আগের ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গিয়ে যেভাবে ১ রান দিয়েছিলেন পুরো এক ওভারে, তেমনই প্রত্যাশা ছিল তার কাছে। কিন্তু দুটি ক্যাচ ছাড়ার কারণেই সম্ভবত মানসিকভাবে কিছুটা বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ কারণে জেসন রয়কে প্রথম দুই বলই করলেন একেবারে লুজ। কাটার দিতে গিয়ে হিসাবে গরমিল করে ফেললেন। হয়ে গেলো বাউন্ডারি। পরের বলে মিডল স্ট্যাম্প এবং লেগ স্ট্যাম্পের ওপর বল রাখলেন মোস্তাফিজ। ফ্লিক করে বলটা তুলে দিলেন শুধু জেসন রয়। ছক্কা। ম্যাচ তখনই শেষ।
তবুও টানা তিন বল ডট দিলেন মোস্তাফিজ। রান প্রয়োজন ১। কিন্তু টানা তিন ডটে ম্যাচের উত্তেজনা আবারও বেড়ে যায়। শেষ বলে সিঙ্গেল রান ঠেকাতে খুব ক্লোজ ফিল্ডিং সাজানো হয়। যে কারণে ক্যাচ উঠলেও সেটা ধরতে পারেনি কেউ। জিতে যায় দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। আবারও শেষ ওভারের থ্রিলারে হেরে যেতে হলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে।
নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এসে এবার মুম্বাইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। একেবারে তীরে এসে যেভাবে তরি ডুবছে, তা থেকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কতটা বেরিয়ে আসতে পারবে সেটাই এখন দেখার। এমনিতেই ৩ ম্যাচ হেরে পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানীতে রয়েছে তারা। ব্যাঙ্গালুরুকে হারাতে পারলে নিশ্চিত, সব হতাশা কেটে যাবে মোস্তাফিজের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের।