বোবা’য় ধরা, কথাটা যেন কেমন শোনায়। কেউ কেউ হয়ত ভাববেন এটা আবার কি, কিন্তু যাঁদের এই বোবা’য় ধরার বিষয় আছে তারা কিন্তু ঠিকই জানে এটা কি।
মধ্যরাতে হঠাত্ ঘুম ভেঙে গেল। অনুভব করলেন, আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে আছে। এত ভারী কিছু যে ঠিকঠাক নিঃশ্বাসই নিতে পারছেন না আপনি। কেমন লাগবে তখন?
নিশ্চয়ই খুব ভয় পাবেন! এটা একটা ভীতিকর পরিস্থিতিই বটে যখন টের পাবেন আপনি চাইলেও শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছেন না, এমনকি চিত্কারও করতে পারছেন না। নিজেকে এমন অসহায়ভাবে আবিষ্কার করলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
আমার নিজের এই সমস্যা ছিল এবং এখনো একটু একটু আছে। আমার যখন এই সমস্যা হয় তখন আমি আগে থেকেই বুঝতে পারি যে সমস্যা আসছে কিন্তু সতর্ক হবার আগেই দেখা যায় আমি জড়িয়ে পরি। আমি সেই সময় সব কিছু শুনতে পাই কিন্তু কিছুই করার থাকে না।
এ অবস্থায় আমি যত সুরা, দোয়া দরুদ জানি সবই পড়তে থাকি মনে মনে আরো চেষ্টা করি ঐ অবস্থা থেকে বের হতে। রীতিমত এক যুদ্ধ চলে ঐ সময় এবং যদি আপনি যুদ্ধে পরাজিত হন তাহলে তার পরিনতি একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন।
অনেক সময় পাশের কেউ যদি খেয়াল করে একটু ধাক্কা দিয়ে দেয় তাহলে বেঁচে গেলাম সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু কেউ যদি না বুঝতে পারে তাহলে বেশ সমস্যাই হয়ে যাই এবং কখনো কখনো মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে এবং এভাবে থাকলে আমি মারা যাব খুব তারাতারি এটাই মনে হয়।
বেশ কিছু দিন আগের কথা, আমি তখন ঢাকায় খুব ছোট একটা রুমে একাই থাকতাম। প্রায় সময় আমি রাতে রেডিওর বিভিন্ন প্রোগ্রাম গুলো শুনতাম। সেই দিন আমি রাতে ভুত এফএম শুনছিলাম। খুবি ভয়ংকর একটা গল্প শোনাচ্ছিল। শুনতে শুনতে হঠাৎ আমার কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছে।
আমি আর আমার হাত, পা এবং কি আমার শরীরের কোন অংশই যেন আর নড়াতে পারছিনা। মুখ দিয়ে যে কাউকে ডাকবো সেই কাজটা ও করতে পারছিনা। অনেক সময় ধরে ঐ অবস্থায় থাকতে হল। বার বার মানে হচ্ছিন আমাকে মনে হয় ঠিক জীনে ধরেছে। প্রায় ২০ মিনিটের মত হবে ।
আবার আমি সেই আগের মত সাভাবিক হয়ে গেলাম। পরে আর সেদিন রাতে ঘুমাতে পারলাম না। এরপরে আমি বিভিন্ন ভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, এবং অবশেষে আমি বের করতে পারলাম এই রকম হলে এটা থেকে বাঁচার সহজ উপায়।
এই সমস্যাটাকে বলে স্লিপ প্যারালাইসিস। সহজ বাংলায় আমরা যাকে বলি বোবায় ধরা। তাহলে আসুন এটা সম্বন্ধে আরো বিষদ জেনে নেয়া জাক- কাকে বলে বোবা ধরা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস স্রেফ একটা ইন্দ্রিয়ঘটিত ব্যাপার। যখন শরীর গভীর ঘুমের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে যায়, তখনই এটা ঘটে থাকে। বোবা ধরলে একেজনের একেক রকম অভিজ্ঞতা হয়।
কেউ ঘরের ভেতর ভৌতিক কিছুর উপস্থিতি টের পান, কেউ দুর্গন্ধ পান, কেউ বা ভয়ানক কোনো প্রাণি দেখতে পান। মোট কথা তখন একটা হ্যালুসিনেশনের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। গভীর ঘুমের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে যাবার সময় মস্তিষ্ক সতর্ক হয়ে ঘুম ভেঙে গেলেও শরীর আসলে তখন ঘুমেই থাকে।
ফলে অভিজ্ঞতাটা অন্যরকম থাকে। বিশেষ করে ইন্দ্রিয় তখন আচ্ছন্ন থাকায় মানুষ অদ্ভুত কিছু দেখে এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। সাধারণত যাদের ঘুমের সমস্যা থাকে তারাই বেশি স্লিপিং প্যারালাইসিসে ভোগে। অনেকেই এটা বিশ্বাস করে অতিলৌকিক কোনো কিছু এ ব্যাপারটি ঘটায়। আসলে এটা স্রেফ একটি শারীরবৃত্তীয় ব্যাপার।
কেন এমন হয়? বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর অন্যতম কারণ হলো চাপের মধ্যে থাকা এবং যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রামের অভাব। অনিয়মিত ঘুমও এর আরেকটি কারণ। ঘুম বিশেষজ্ঞরা এটাও বলেন যে, যখন ঘুমের এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে যাবার সময় শরীর সাবলীলভাবে নড়াচড়া করতে পারে না, তখনই মানুষ বোবা ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়।
এছাড়া আরও কিছু ব্যাপার বোবা ধরার কারণ হতে পারে। যেমন ঘুমের নির্দিষ্টতা না থাকা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ঘুমের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সমস্যা, হাত-পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরা, অনিদ্রা, বিষণ্নতা ইত্যাদি।
পরিত্রাণের উপায়-বোবায় ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিস থেকে বাঁচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজ উপায় হলো ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সমস্যাটা সাময়িক। কিন্তু যদি এটা ঘন ঘন হতে থাকে এবং কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
বার্তা কক্ষ
১০ জানুয়ারি, ২০১৯