রাতের ট্রেনভ্রমণ নিয়ে অমূলক ভীতি ছড়ানো হচ্ছে

রাতের ট্রেন জার্নি নিয়ে একটি অমূলক এবং ভিত্তিহীন সংবাদ ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে আতংকের সৃষ্টি করতে পারে। যথাযথ তথ্য ছাড়া ভিত্তিহীন এসব অপপ্রচার প্রকারান্তরে রেলের ক্ষতি বয়ে আনবে এবং মানুষের মনে অমূলক ভয় এবং আশঙ্কার সৃষ্টি হতে পারে।

রাতের ট্রেনগুলোতে ছিনতাইকারী চক্র যাত্রী সাধারণকে টয়লেটের সামনে একা পেয়ে সুযোগ বুঝে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে, ট্রেনের দরজা খুলে লাশ বাইরে ফেলে দিচ্ছে বিধায় রাতের ট্রেন জার্নিতে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য বারবার পোস্ট দেয়া হচ্ছে।

প্রচার করা উপরের সংবাদ ভিত্তিহীন ও অসত্য।
গত এক বছরে টঙ্গি থেকে লাকসাম পর্যন্ত রেল লাইন সংলগ্ন মোট ১৪৫ জনের মৃত দেহ পাওয়া গেছে। রেল লাইনের উভয় পাশে ১০ মিটার করে ২০ মিটার এলাকায় কোন দুর্ঘটনা হলে তা রেলওয়ে পুলিশ বা জিপই’র আওতাধীন হিসেবে মামলা হয়ে থাকে।

টঙ্গি থেকে ভৈরব ব্রিজ এবং কিশোরগঞ্জ জেলার সরারচর স্টেশন পর্যন্ত এক বছরে মারা গেছে ৫৫ জন। ভৈরব ব্রিজের অপর পাড় হতে আখাউড়া কুমিল্লার মধ্যবর্তী সালদা নদী পর্যন্ত এক বছরে লাশ পাওয়া গেছে ৩৬ জনের। সালদা নদী হতে লাকসাম পর্যন্ত মারা গেছে মোট ৫৫ জন

গত এক বছরে রেল লাইনের পাশে পাওয়া মোট ১৪৫ জনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এদের কেউই শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। অর্থাৎ তাদেরকে কেউ শ্বাসরোধ করে হত্যা করেনি।

কাজেই ট্রেনের ভিতর গলা টিপে বা গলায় গামছা পেঁচিয়ে মেরে ফেলে লাশ বাইরে ফেলে দেবার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমি এলাকা সংলগ্ন সব উপজেলার ইউএনও এবং ওসি সাহেবদের সাথে কথা বলেছি। তাঁরা সবাই বলেছেন, তাঁরা এমন কোন খবর পাননি এবং কোন অসমর্থিত বা গোয়েন্দা সূত্র থেকেও ট্রেনের ভিতর থেকে মেরে ফেলে লাশ ফেলে দেবার কোন নিউজ তাঁরা কেউই পাননি।

মৃত্যুর কারণ হিসেবে আত্মহত্যা, ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া বা ফেলে দেয়া, চলন্ত ট্রেনে ওঠা বা নামার সময় চাকার নিচে পড়ে যাওয়া, কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইলে গান শুনতে শুনতে লাইনের উপর দিয়ে যাওয়া, বা কথা বলতে বলতে লাইন পার হওয়া ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কারো স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও জিআরপি থানায় মামলা হয়। এ ধরণের অনেকেই আছেন ঐ ১৪৫ জনের ভিতর।

সকলের প্রতি অনুরোধ, শান্তি ভঙ্গকারী এবং আতংক ছড়াতে পারে এ ধরণের ভিত্তিহীন এবং অসত্য সংবাদ প্রচার না করার জন্য। এই ডিজিটাল যুগে কোন তথ্য যাচাই করা অত্যন্ত সহজ। অহেতুক বিভ্রান্ত না হয়ে আগে তার যথার্থতা পরীক্ষা করুন।

রাতের ট্রেন জার্নি নিয়ে একটি অমূলক এবং ভিত্তিহীন সংবাদ ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে আতংকের সৃষ্টি করতে পারে। যথাযথ তথ্য ছাড়া ভিত্তিহীন এসব অপপ্রচার প্রকারান্তরে রেলের ক্ষতি বয়ে আনবে এবং মানুষের মনে অমূলক ভয় এবং আশঙ্কার সৃষ্টি হতে পারে

লেখক : মাহবুব কবির মিলন, যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ সরকার। (বাংলামেইল )
||আপডেট: ০৫:১২ অপরাহ্ন, ২৩ মার্চ ২০১৬, বুধবার

চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর

Share