রাজধানীর বনানী এলাকায় বিপুল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্পের অধীনে ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য এ গাছ কাটা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ুব্ধ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী।
পরিবেশবাদীরা এ ঘটনাকে সিটি করপোরেশনের দ্বিমুখী আচরণ বলে অভিযোগ করেছেন। তবে সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে তারা প্রয়োজনের তাগিদেই এ গাছ কাটছে।
বনানী সোসাইটির অর্থ সম্পাদক মাহমুদ আলম তপু বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজনের সাথে আমাদের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে শুধু প্রয়োজনের তাগিদে গাছ কাটা যাবে, যাতে ড্রেন আঁকাবাঁকা হয়ে না যায় সে জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন তা না করে ফুটপাথ এমনকি ফুটপাথ থেকে অনেক দূরের বড় বড় গাছও কেটে ফেলছে। রাতের আঁধারে সব গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারা কিভাবে কেটে নিয়ে যাচ্ছে তা আমরা জানি না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বনানীর প্রায় প্রতিটি রাস্তা থেকেই গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ এলাকা গাছশূন্য হতে চলেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বনানী ১১ নম্বর রোডের দুই পাশ দিয়ে বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রাস্তার পাশে ফুটপাথে গাছের ডালপালা ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক স্থানে গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ৮ নম্বর রোডের দক্ষিণ দিকের ফুটপাথের বাইরে বড় বড় গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। ডি ব্লকের ১৩/এ সড়কের টিএম গ্রুপের দেয়ালের পাশ থেকে গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন শ্রমিককে গাছ কাটতে দেখা যায়।
শ্রমিকেরা জানান, সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য এসব গাছ কাটা হচ্ছে। এর পাশের টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনে থেকে এক মাস আগে ও দু’টি বিশাল আকারের মেহগনিগাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানান সিকিউরিটি গার্ড হাবিবুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদারের ১৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর বাড়ির সামনের ফুটপাথ থেকে একটি বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হয়েছে গাছের ডালপালা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক ঢাকা নগরীকে সবুজ করার লক্ষ্যে আগামী তিন বছরের মধ্যে পাঁচ লাখ গাছের চারা রোপণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। গত ২ মে উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে এক অনুষ্ঠান থেকে তিনি এ কাজের উদ্বোধন করেন। তিনি গাছ লাগানো কার্যক্রমের সার্বিক দায়িত্ব দেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে। কিছু এনজিওর সহায়তায় তিনি এ কাজ সম্পাদন করবেন বলে মেয়র জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব নয়া দিগন্তকে বলেন, সিটি করপোরেশনের কথার সাথে কাজের কোনো মিল নেই। তারা এক দিকে বলছে গাছ লাগাবে, অন্য দিকে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এটা দ্বিমুখী আচরণ। সিটি করপোরেশনকে এ ধরনের বিপরীতধর্মী আচরণ থেকে সরে আসতে হবে। তারা আসলে কী করতে চায় তা আগে তাদের ঠিক করে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মেসবাহুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কাজের প্রকল্প কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
বনানী এলাকার রাস্তা-ফুটপাথ ও ড্রেন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিবেশ সার্কেল) ড. তারেক বিন ইউসুফ বলেন, কাজের প্রয়োজনেই গাছ কাটা হচ্ছে। বনানী এলাকার কমিউনিটির সাথে কথা বলেই গাছ কাটা হচ্ছে। তবে সিটি করপোরেশন নিজেরা গাছ কাটছে না।
এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বনানী সোসাইটির মাহমুদ আলম তপু বলেন, প্রয়োজনের বাইরেও গাছ কাটা হচ্ছে। রাতের আঁধারে কারা বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তা এলাকাবাসী জানতে পারছে না।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের গাছ কাটা বিষয়ে আলাদা বিভাগ রয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি তার নিজের বাড়ির গাছও কাটেন তাকেও সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হয় এবং সে জন্য ফি দিতে হয়। করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো গাছ কাটতে পারে না। (নয়া দিগন্ত)
: আপডেট ২:০০ এএম, ০৮ মে ২০১৬, রোববার
ডিএইচ