স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী :
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দুটি ও পবার একটি গ্রামে `চরবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সোলার পাওয়ার দিয়ে সেচ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও স্যানিটেশন` নামে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। গোদাগাড়ী উপজেলার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চরনওশেরা ও মানিকদিয়াড় এবং পবার হরিপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুরে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য চলছে তৎপরতা।
পদ্মার ওপারে চরাঞ্চলের গ্রামগুলো প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় দীর্ঘ সময়েও হয়নি সেখানে কাঙ্খিত উন্নয়ন। পর্যাপ্ত উর্বর জমি থাকা সত্বেও কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও থমকে থেকেছে। তাই বিএমডিএ চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবন এবং জীবিকার উন্নয়নে ইতোমধ্যে একটি পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। পাইলট প্রকল্পটি সফলতা পাওয়ায় বড় আকারে কাজ শুরু করার জন্য প্রায় দুইশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কৃষি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এর ফলে চরাঞ্চলের লাখ খানেক কৃষক সোলার প্যানেলে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন সমৃদ্ধি, সফলতা ও উন্নত জীবনযাপনের।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, বিএমডিএ গত বছরের ডিসেম্বরে পাইলট প্রকল্প হিসেবে জমিতে সেচ দেয়ার জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার শুরু করেছে। শ্যালোমেশিন ও গভীর নলকূপে পানি উত্তোলনে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হবে। এতে জ্বালানি হিসেবে ডিজেলের প্রয়োজন হবে না। সূর্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পানি উত্তোলন করা হবে। ফলে জ্বালানি খরচ লাগবে না। কমবে উৎপাদন ব্যয়। ইতোমধ্যে দুইটি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে সোলার প্যানেল চালু হয়েছে। ফলাফল সন্তোষজনক।
পানি উত্তোলনের একটি পাম্পে ২৪টি সোলার প্যানেল আছে। দুইটি পাম্পের অধীনে ২০ বিঘা করে মোট ৪০ বিঘা জমি সেচ দেয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলের কৃষকরা ইতোমধ্যে ধান, ভুট্টা ও সরিষা চাষ করেছেন সোলার প্যানেল ব্যবহার করে।
বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষামূলকভাবে চালু সোলার প্যানেলে এসব গ্রামে সফলতা পাওয়া গেছে। সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য যা খরচ লাগবে তা বিএমডিএ বহন করবে। প্রাথমিকভাবে একটি সোলার পাম্প স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ লাখ টাকা। পরে কিছু রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রয়েছে। তবে তা বেশি না। তিনটি গ্রামে মোট এক হাজার সোলার পাম্প, ২৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও দুই হাজার স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপন করা হবে।
প্রকল্পের পরিচালক ও বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, চরাঞ্চলের মাটি অত্যন্ত উর্বর। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের দুইটি এবং হরিপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে ডিসেম্বর থেকে একটি পাইলট প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে ধান, ভুট্টা, মসুর ও সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে সফলতাও পাওয়া গেছে। এ কারণে ব্যাপক আকারে একটি পরিপূর্ণ প্রজেক্টের কাজ শুরুর পরিকল্পনা চলছে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই অচিরেই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। এর ফলে চরাঞ্চলের ঘটবে কৃষি বিপ্লব। বৃদ্ধি পাবে এ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক শক্তি ও জীবনযাত্রার মান।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫