চাঁদপুর সদর

রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উবি রক্ষায় ভাসমান স্কুল দাবি

৯ম বার ভাঙ্গনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়ানো বিদ্যালয়টির স্থায়ী সমাধানে ভাসমান অবকাঠামো তৈরি হলে বার বার জমি ক্রয় এবং ভবন নির্মাণ ব্যায় করতে হবে না। নতুন করে বরাদ্ধ পাওয়া ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার অর্ধেক ব্যায়ে তৈরি সম্ভব ভাসমান স্কুল। নৌকার সাহায্যে বন্যা বা প্রাকৃতিক যেকোনো দূর্যোগেও স্কুলের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হবে না শিক্ষার্থীরা।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ৬৬ ভাগই গ্রামে বাস করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ থাকেন বিভিন্ন নদী সিকিস্তি চর এলাকায়। চরাঞ্চলের এসব মানুষগুলো ঝড়, বন্যা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিকে বুকে ধরেই বেঁচে থাকেন।

তেমনই একটি চর এলাকা মেঘনার পশ্চিম পারের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন। বর্তমানে সেখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। চাঁদপুর সদরের উপজেলার নদী সিকস্তি এই ইউনিয়নটির চতূর্দিকে পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত। এই সময়ের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত আর অবহেলিত এই ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়।

১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি ৮বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। আর প্রতিবারই বিদ্যালয় ভবন সম্প্রসারণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা করে। এরপরেও নানা সিমাবদ্ধতাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে স্ব-গৌরবে ইউনিয়নবাসীর মাঝে মানসম্মত শিক্ষার আলো বিলিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতিক সময়ে আবারো এই প্রতিষ্ঠানটি ভাঙনের মূখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। মাধ্যমিক এই স্কুলটি সম্প্রসারণের জন্য এবার সরকারের ত্রান ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয় থেকে ফ্লাট সেন্টার, শ্রেণীকক্ষ নির্মানে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। টেন্ডার পক্রিয়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে।

অদুর ভবিষ্যতে আবারো নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে এবার বিদ্যালয়ের জন্য নদীতে ভাসমান স্কুল ভবন করার দাবি উঠেছে সর্বমহলে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবি বার বার ভবন নির্মাণ করে তা নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ার চেয়ে এবার যেনো একটি ভাসমান ভবন করে দেয়া হয়।

এতে করে কয়েক বছর পর পর সরকার এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির কোটি কোটি টাকা ব্যয় থেকে রক্ষা পাবে। আর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, নতুন ভবন নির্মানে সরকার যে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে একটি ভাসমান স্কুল করা হলে এ বরাদ্ধের অর্ধেক টাকা বেঁচে যাবে।

বাংলাদেশে গড়ে ওঠা একটি ভাসমান হাসপাতাল।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্যাহ সরকার জানায়, নানান সমস্যার মধ্যে থেকেও আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মানসম্মত পাঠদান করে যাচ্ছি। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যস্ত ৮বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। প্রতিবার সরকারের সহায়তা এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রায় ১৫ লাখ টাকা করে ব্যয় হয়েছে।

প্রতিবার নতুন করে জমি কেনা, ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন ঝামেলায় শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। যার প্রভাব পরে তাদের রেজাল্টের উপর। আমি মনে করি এবার সময় এসেছে নতুনভাবে চিন্তা করার। সরকার যদি আমাদের একটি ভাসমান ভবন করে দেন তবে সরবারেরই অনেক টাকা বেঁচে যাবে। আর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তন, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্লাস বন্ধ থাকায় স্কুলের পাঠদান বন্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

তিনি আরো জানান, ভাসমান বিদ্যলয়টি হতে পারে একটি বিশালাকার পল্টুনের উপর। দ্বিতল বা তৃতল ভবনের এই বিদ্যালয় ভবনটি নদী পাড় থেকে অনেকটা দূরে নোঙর করা থাকবে। এর সাথে ২ থেকে ৩টি ইঞ্জিন চালিত স্টিল বোর্ড দেয়া হলে বোর্টের সাহায্যে নদীর জলবেস্টিত বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে স্কুলে আসার এবং বাড়ি ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবে। বর্তমানে আমাদের স্কুলের সৌর বিদ্যুৎতের সাহায্যে সিসি ক্যামেরা, কম্পিউটার, ফ্যান, লাইট সহ আধুনিতক সব সুবিধা রয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মুনির ফারুক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি বাংলাদেশেও ভাসমান অনেক স্কুল রয়েছে। আর নদী সিকিস্তি চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এটি এখন যুগোপযুগি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এই বিদ্যালয়টি ৮বার নদী ভাঙ্গনের শিক্ষার হয়েছে। এতে শুধুমাত্র আমরা বা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে তা নয়, সরকারের অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমি আশা করবো সকল দিক বিবেচনা করে কতৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন।

পাবনায় একটি ভাসমান স্কুল

এ বিষয়ে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী হযরত আলী বেপারী বলেন, ভাসমান স্কুল ভবন একটি সময়োপযোগি দাবি। আমি মনে করি কর্তৃপক্ষ চাইলেই এটি করতে পারেন। কারণ বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ভাসমান স্কুল এবং হাসপাতাল নির্মানে সাফল্য অর্জন করেছেন।

আর বর্তমান সরকার তথ্য-প্রযুক্তিসহ সকল দিকে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে একটি ভাসমান স্কুল হলে এটি চাঁদপুরের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করার প্রতিষ্ঠান হবে। তিনি আশা করেন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন।

চাঁদপুরের একজন প্রাক্তন প্রকৌশলী, লেখক ও গভেষক প্রকৌ. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দাবিটি অবশ্যই সুন্দর এবং যৌক্তিক। নদীতীরে একটি ভাসমান স্কুল করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক টাকা খরচ হবে। আর এজন্য কতৃপক্ষ এতোগুলো টাকা একসাথে বরাদ্ধ দিবে কি না, সেটিই বড় বিষয়।

ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় এনে সরকার আমাদের এই দাবিটি মেনে নিবে বলে আমরা আশা রাখি। এ বিষয়ে তারা চাঁদপুর সদর আসনের এমপি ডা. দীপু মনি, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

প্রসঙ্গত ১৯৮৮ সালে ওই এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকার কৃতিজন মরহুম ওমর আলী এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর ২০০০ সন থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যালয়টি সর্বমোট ৮ বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে।

বর্তমানে ৯ম বারের মতো ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে বিদ্যালয়টি। মানসম্মত শিক্ষাদানের এ প্রতিষ্ঠানটি বহুবছর ধরে ফলাফলের দিক থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪৭টি হাইস্কুলের মধ্যে সেরা দশে রয়েছে।

প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম

Share