উত্তাল পদ্মা-মেঘনার ভয়াল স্রোতে ভাঙ্গনের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে চাঁদপুরের নব-নির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার। সাইড সিলেকশনে ক্রুটি থাকলেও কাজের গুণগত মান ভালো হওয়ায় চারপাশে প্রায় ৪০ ফুট পনিতে এখনো ৭৮ ফুট পাইলের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ৩ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ভবনটি। আর এমন সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে নদীতে বিলিন হবার মুখে থাকা ভবনটির দরোজা-জানালা চুরি করতে আসে স্থানী এবং বহিরাগত একদল চোর।
এ যেনো ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। এমন ঘটনায় ভবনটির ঠিকাদার প্রতিনিধি ও ইউপি সদস্য পারভেজ রনি এবং তার ছোট ভাই সেলিম গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় হাতেনাতে ১০ চোরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
১৮ জুলাই শনিবার শেষ বিকেলে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪ নং রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইনেসপেক্টর আব্দুর রব আমামীদের আটক করে চাঁদপুর মডেল থানায় প্রেরণ করে।
আটককৃতরা হলেন, মো. শাহীন (৩৮), আব্দুর রহিম (২০), মানিক (১৯), ইদ্রিস খলিল (২৬), মো. জামাল গণি (১৮), ফরিদ জোয়ান (১৮), তারেক দেওয়ান (১৮), শামসুদ্দিন (১৮), মামুন (১৯), শরীফ (২০)। পুলিশ জানায়, আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে ঘটনায় সাইক্লোন সেন্টারের ঠিকাদার প্রতিনিধি ও ইউপি সদস্য পারভেজ রনি জানান, শনিবার শেষ বিকেলে আমি এবং আমার ছোট ভাই সেলিমসহ কয়েকজন মিলে ভবনটির কি অবস্থায় আছে তা দেখতে যাই। এসময় দেখতে পাই একদল লোক সাইক্লোন সেন্টারের জানালার থাইগ্লাসগুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছে। তখন স্থানীয় দিলা মাঝি, দেলোয়ার মাঝি, ডা. আনোয়ার, নাজমুল, মনির সর্দারসহ এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় চোরদের ঘেরাও করে ফেলি।
তিনি আরো জানান, সাথে সাথে বিষয়টি আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী, স্থানীয় মেম্বার, ওরম আলী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সদর উপজেলার মাননীয় নির্বাহী কর্মকর্তা, এবয় পিআইও এবং মডেল থানার ওসি সাহেবকে ফোন করে জানাই। পরে এলাকাবাসী মিলে চোরদের লক্ষীচর বাজারে এনে আটকে রেখে রাত ৯টায় রাজরাজেশ্বরের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইনেসপেক্টর আব্দুর রব সংঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে এলে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এদিকে রোববার আটক চোরদের থানায় নিয়ে এলে একটি চক্র তাদের ছাড়িয়ে নিতে মডেল থানার আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে। এলকাবাসীর দাবী এমন দুর্যোগের দিনে যারা এমন অমানবিক কাজ করতে চেয়েছিলো তাদের যেনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত,গত দুই সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চল থেকে নেমে আসা বন্যার পানির প্রবল স্রোতে নদীবেষ্টিত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের পদ্মা-মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তীব্র নদী ভাঙনে এখন পর্যন্ত ৪টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া প্রায় ৪শতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে আরো প্রায় ৫শ’ বাড়িঘর ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
শুক্রবারের ভাঙনে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যায়ে নব-নির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টারটি পানিতে চলে যায়। সাইড সিলেকশনে ক্রুটি থাকলেও কাজের গুণগত মান ভালো হওয়ায় চারপাশে প্রায় ৪০ ফুট পনিতে ৭৮ ফুট পাইলের উপর এখনো ভবনটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,১৯ জুলাই ২০২০