বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই। সরকার হীন উদ্দেশ্যে দেশনেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারকে বলব- রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি কখনো ভালো হয় না। তাই দ্রুত দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিন। অন্যথায় একজন গুরুত্বপূর্ণ, জনপ্রিয় প্রবীণ নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার না দিয়ে তার প্রতি বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করার জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।
মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর কোনো দৃষ্টান্ত নেই। অথচ সত্য হলো শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তৎকালীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আ স ম আব্দুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে ১৩ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে ১/১১’র সরকার ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ কারাগারে অসুস্থ হলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।
‘কাজেই খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে তা কোনো নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে না, বরং প্রতিষ্ঠিত মানবিক ও আইনানুগ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হবে‘।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের তৃতীয় ভাগে নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। খালেদা জিয়া দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। সংবিধান তাকে বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যে রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। প্রকৃতপক্ষে খালেদা জিয়াকে সংবিধানের দেওয়া চিকিৎসা সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; যা অন্যায়, অমানবিক ও অসাংবিধানিক।
২০০৮ সালে শেখ হাসিনাও এমন সুযোগ ব্যবহার করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জরুরি আইনের সরকারের সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। একাধিক মামলায় সুপ্রিমকোর্টেও শেখ হাসিনা পরাজিত হয়েছিলেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে তখন বলা হয়েছিল মামলাগুলো বিচারে কোনো বাধা নেই। এর মধ্যে ছিল মিগ ২৯ ও ফ্রিগেট ক্রয়ে দুর্নীতির মামলা। এছাড়া বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে। মামলাগুলোতে চার্জশিট দিয়ে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। বিচারে সাক্ষীও শুরু হয়েছিল একাধিক মামলায়। এমন অবস্থায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তাকে। অসুস্থাতার কথা বলেই বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দিয়েছিল জরুরি আইনের সরকার। যদিও সাবজেল থেকে নির্বাহী আদেশে মুক্ত হওয়ার দুই/তিন দিনের মধ্যেই তিনি বিদেশে যান চিকিৎসার জন্য।
তিনি আরও বলেন, নির্বাহী আদেশে শেখ হাসিনার মুক্তির পরও একটি চাঁদাবাজির মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছিল। এ মামলাটিতে জামিনের আবেদন হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগেও খারিজ করা হয়েছিল। তিনি নির্বাচনের আগে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন একজন ওয়ারেন্টের আসামি হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-ি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
টাইমস ডেস্ক/ ৩ অক্টোবর ২০২৩