চার নদীর আর্শির্বাদপুষ্ট ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। যুগে যুগে-এ জেলা তার গর্ভে ধারণ করেছে দেশবরেণ্য বহু সূর্যসন্তানকে। যারা নিজেদের জীবন ও কর্মেে মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ তথা পৃথিবী বিনির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
চাঁদপুরর নতুন প্রজন্মের কাছে এ গুণি মানুষদের পরিচয় করিয়ে দিতে ‘চাঁদপুর টাইমস’এর আয়োজন ‘দ্যুতিময় চাঁদপুর’। ধারাবাহিক এ আয়োজনে আজ থাকছে বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাড.সিরাজুল ইসলাম এর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা। মানুষ নস্বর কিন্তু তাঁর কর্ম অবিনশ্বর।
এ নম্বর পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষকেই একদিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে পরপাড়ে যেতে হয়। এটাই নিয়ম। জগতস্রষ্টার আইনি বিধান। তবে একমাত্র কর্মের মাধ্যমেই কোনো কোনো মানুষ মরেও বেঁচে থাকেন অনন্তকাল। আবার এ মরেও বেঁচে থাকাটা দুভাবে হয়ে থাকে। এক, নন্দিত এবং দুই, ঘৃণিত। ভালো কাজে জীবন উৎসর্গকারি যেমন বেঁচে থাকেন নন্দিত হয়ে,তেমনি বিপরীত কর্মের জন্যে কারো কারো নাম ঠাঁই হয় ইতিহাসের ঘৃণিত পাতায়।
আজকের আলোকিত,সুন্দর ও সমৃদ্ধ চাঁদপুর বিনির্মাণে অগ্রগণ্যদের একজন অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম। তিনি একাধারে বরেণ্য আইনজীবী,রাজনীতিক ও সমাজহিতৈষী। ছিলেন সংসদ সদস্য ও গণপরিষদ সদস্য। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন ভাষা আন্দোলন এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চাঁদপুরে যে ক’জন বরেণ্য ব্যক্তিত্বের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তাঁদের মধ্যে অন্যতম অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম।
কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি সরকারি চাকরিতে করাচী বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে সরকারি চাকরি ছেড়ে আইন পেশা এবং রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। স্বাধীনতা-উত্তর চাঁদপুর মহকুমাকে ঢেলে সাজানোয় অনন্য ভূমিকা রাখেন তিনি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে টানা ২২ বছর চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের একজন কান্ডারী হিসেবে তিনি সর্বদা একনিষ্ঠ ছিলেন। একজন সৎ,আদর্শ ও নীতিবান রাজনীতিবিদ হিসেবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই জনপদের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পত্র ছিলেন।
গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন যে, পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময় এবং জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে-মানুষের জন্য কিছু করা।’অ্যাড.সিরাজুল ইসলাম নিজের জীবন ও কর্মকে মানুষ এবং মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন।
বর্ণঢ্য কর্মজীবনে তিনি চাঁদপুর জেলা আওয়ামীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর রোটারী ক্লাব,জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। একজন দক্ষ উপদেষ্টা হিসেবে ১৯৯২ সালে চাঁদপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার শুরুতে তিনি ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও নিজের জন্মভূমির অর্থ-সামিজ উন্নয়ন,শিক্ষাবিস্তারে তথা সমাজকর্মে প্রশংশিত ভূমিকা ছিলো তাঁর।
আলোকিত এ মানুষটি ১৯৩৫ সালে চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরকুমিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে স্বাধীনতার অনেকে আগে থেকেই তিনি চাঁদপুর শহরের পুরান আদালতপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই কন্যা ও তিন পুত্রসন্তানের জনক। তাঁর বড় মেয়ে অ্যাড. জারজিনা আক্তার ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী,আরেক মেয়ে মাহাবুবা আক্তার আইনজীবী,বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম সেন্টু ঠিকাদার,মেজো ছেলে অ্যাড.সাইয়েদুল ইসলাম বাবু চাঁদপুর বারের অতিরিক্ত পিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ছোট ছেলে অ্যাড জাহিদুল ইসলাম রোমান ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সফল ও জনপ্রিয় সভাপতি ছিলেন। আলোকিত এ মানুষটি ১৯৯৯ সালের ১১ অক্টোবর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
লেখক : আশিক বিন রহিম,সাহিত্য ও সংবাদকর্মী,সাধারণ সম্পাদক : সাহিত্য মঞ্চ, চাঁদপুর। ১১ অক্টোবর ২০২০