কমপ্রেসার মেশিনের হাওয়া পেটে ঢুকিয়ে নির্মমভাবে শিশু রাকিব হত্যার দায়ে গ্যারেজমালিক মো. শরিফ এবং তার চাচা মিন্টু খানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর আসামি বিউটি বেগমকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলরুবা সুলতানা রবিবার দুপুর পৌনে ১টায় এ রায় প্রদান করেন।
রায় প্রদানের নির্ধারিত দিন রবিবার সকাল ১০টা থেকে আদালতের প্রাঙ্গণ উৎসুক জনতায় ভরে যায়। বেলা পৌনে ১২টায় কড়া পুলিশ প্রহরায় তিন আসামি মো. শরিফ, মিন্টু খান ও বিউটি বেগমকে আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগেই আদালত কক্ষ আইনজীবীদের উপিস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বেলা সাড়ে ১২টায় আদালতে উপস্থিত হন বিচারক দিলরুবা সুলতানা। জনাকীর্ণ আদালত কক্ষে পিনপতন নীরবতার মধ্যে বিচারক পৌনে ১টায় রায় পড়া শুরু করেন। তিনি ৬৩ পৃষ্ঠা রায়ের শুধু আদেশ পড়ে শোনান। আদেশে প্রথমে মো. শরিফ ও মিন্টু খানকে রশিতে ঝুলিয়ে ফাঁসি কার্যকর এবং অপর আসামি বিউটি বেগমকে খালাস প্রদান করেন।
রায়ে উল্লেখ করা, রায়ের কপি আসামিদের প্রদানের পর তারা উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারবেন। উচ্চ আদালতের বিধান অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে আসামিরা আপিল করতে পারবেন।
এদিকে, বিউটি বেগমের খালাসের কথা শুনে রাকিবের মা আদালত প্রাঙ্গণেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার বোন ও বাবা আহজারি করতে থাকেন। এলাকাবাসী রায় ঘোষণার পর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তারা তার ফাঁসির দাবি করেন।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এ্যাডভোকেট সুলতানা রহমান রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, বিউটি বেগমের খালাস সম্পর্কে রায় দেখে আপিলের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ রায়ে তিনি সন্তুষ্ট বলেও উল্লেখ করেন।
নিহত রাকিবের বাবা মো. নূরল আলম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আসামি বিউটি বেগমের পরাকিয়ার বিষয়টি দেখে ফেলায় রাকিবকে হত্যা করা হয়। আর সেই বিউটি বেগম খালাস পেয়েছে, এটা তারা মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বিউটি বেগমের শাস্তির দাবি করেন।
রাকিবের মা লাকি বেগম জ্ঞান ফিরে আসার পর বলেন, কোনো অবস্থাতেই তারা এই খালাস আদেশ মানবেন না।
রায় ঘোষণার পর আসামি মো. শরিফ ও মিন্টু খানের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তারা পুলিশ প্রহরায় সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে আদালতের প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। তবে এ সময় আসামি মিন্টু খানকে কয়েকজন কিল-ঘুষি মারেন।
খুলনার প্রধান পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) এ্যাডভোকেট কাজী আবু শাহিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সরকার খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ঘটনাটি মনিটরিং করেছে। মাত্র ১০ কার্যদিবসে ৩৮ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এই রায় দেশের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
এদিকে, আসামি পক্ষের কৌঁসুলি এ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম তুষার জানান, তারা আসামিদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
ঘটনার মাত্র তিন মাস পাঁচ দিনের মাথায় রায় প্রদান বাংলাদেশে এই প্রথম।
খুলনা নগরীর টুটপাড়ায় ৩ আগস্ট বিকেলে শরীফ মটরসে কমপ্রেসার মেশিনের নল মলদ্বারে ঢুকিয়ে হাওয়া দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শিশু রাকিবকে। ঘটনাটি মিডিয়াতে গুরুত্বসহকারে প্রচারিত হলে দেশে-বিদেশে সমালোচার ঝড় বয়ে যায়।
ঘটনার পরের দিন রাকিবের বাবা মো. নূরুল আলম বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আর ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী গণপিটুনি দিয়ে ঘাতক মো. শরিফ ও মিন্টু খানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ পরে শরিফের মা বিউটি বেগমকে আটক করে।
খুলনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী মোশতাক আহমেদ তদন্ত শেষে ২৫ আগস্ট মামলার তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
১১ অক্টোবর থেকে এ মামলায় টানা ১০ কার্যদিবসে ৩৮ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত হয়। ১ নভেম্বর উভয় পক্ষের কৌঁসুলিদের শেষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রবিবার (৮ নভেম্বর) মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
এ মামলায় বাদীপক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন পিপি এ্যাডভোকেট সুলতানা রহমান শিল্পী, মানবাধিকার সংস্থার এ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম এবং আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম তুষার ও এ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম।
নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৬:৪৬ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৫, রোববার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur