জাতীয় পুরস্কারের খবর শুনে রাইসার হাত–পা কাঁপছিল। প্রথমে তো সে বিশ্বাসই করতে পারছিল না। মায়ের কাছ থেকে এই খবর শোনার পরে রাইসা বারবার মাকে বলেছে, ‘মা, সত্যি আমি পুরস্কার পাচ্ছি?’ মেয়ের খুশিতে মায়ের চোখে পানি চলে আসছিল বারবার। পরে বিভিন্নজন ফোনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা জানালে খুশিতে ভাসতে থাকে রাইসার পরিবার। রাইসা বলে, ‘মা যখন বলছিলেন আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে যাচ্ছি, তখন মনে হচ্ছিল আমি স্বপ্ন দেখছি। আম্মুকে কিছুক্ষণ পরপর জিজ্ঞেস করেছি, মা, আমি কি এখনো স্বপ্ন দেখছি?’
ছোট্ট রাইসার স্বপ্ন দেখত অভিনয় দিয়ে একদিন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। সেই ইচ্ছের কথা বন্ধুদের বললে অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানাত। আবার অনেকেই মজা করে বলত, তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। পরক্ষণেই অন্য বন্ধু বলত, না না, তোকে দিয়েই হবে। বন্ধুদের এসব কথায় মনোবল বাড়ত তার। নিজের সেরাটা দিয়েই অভিনয় করত রাইসা। রাইসার সেই স্বপ্ন এবার সত্যি হয়ে ধরা দিল। জাফরীন আক্তার রাইসা পাচ্ছে ২০১৯ সালের শিশুশিল্পী হিসেবে সেরা অভিনয়ের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। রাইসা জানাল, বড় হয়ে সে নুসরাত ইমরোজ তিশার মতো অভিনেত্রী হতে চায়।
রাইসা পুরস্কার পেয়েছে ‘যদি একদিন’ ছবিতে অভিনয় করে। ছবিটি পরিচালনা করছেন মোস্তফা কামাল রাজ। ছবিতে তাহসানের মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এই খুদে অভিনয়শিল্পী। এটি রাইসার তৃতীয় চলচ্চিত্র। পাঁচ বছর আগে প্রথম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে সে। শখের বশে অভিনয় শুরু করলেও এখন সে বড় হয়ে অভিনেত্রী হতে চায়। সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছে রাইসা। বলল, ‘ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ডায়লগ দিতে আমার খুব ভালো লাগত। নিয়মিত যখন অভিনয় শুরু করলাম, তখন আমার কাছে মনে হতো, ইশ্, আমি যদি তিশা (নুসরাত ইমরোজ তিশা) খালামণির মতো অভিনয় করতে পারতাম! তিনি খুব সুন্দর অভিনয় করেন। আমি ছোট, তবে তাঁর অভিনয়ের বড় ভক্ত।’
পুরস্কার পাওয়ার খবরে অনেকেই বায়না ধরেছেন খাওয়াতে হবে। রাইসা জানাল, শুটিংয়ের সময় তাহসানের সঙ্গে বাবা–মেয়ের মতোই সম্পর্ক ছিল তাদের। তাহসান শুটিংয়ের সময় তাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। দৃশ্যধারণের সময় তাহসানকে বাবা বলেই ডাকতেন রাইসা। তাহসান তাকে ‘রূপকথা’ নামে ডাকত। এটি তার ‘যদি একদিন’ ছবির চরিত্রের নাম। এই অর্জনের জন্য নির্মাতা ও তাহসানকে কৃতজ্ঞতা জানাল রাইসা।
রাইসা এখন নিয়মিত নাটকে অভিনয় করছে। তার অভিনীত ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নাটকটি বেশ জনপ্রিয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সে টিভিতে নিয়মিত নাটকটি দেখে। অভিনয়ের কারণে লালবাগের চৌধুরী বাজার এলাকায় সবার কাছে পরিচিত। বাসার গলিতে প্রায়ই সাইকেল চালাতে গেলে রাইসা এই জনপ্রিয়তা বুঝতে পারে। বিভিন্ন সময় নাটকের দর্শকেরা তাকে ঘিরে ধরে। একবার পেছন থেকে এক ভক্ত দৌড়ে তার সাইকেল টেনে ধরেছিলেন। সেবার বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন রাইসা। সে বলে, ‘আমি সাইকেল চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন দৌড়ে এসে আমার সাইকেল থামালে আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। পরে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তুমি ফ্যামিলি ক্রাইসিস নাটক করো? তোমার নাম তুলি? তখন আমর ভয় কাটে। লোকটি আমার অভিনয়ের প্রশংসা করে আমার সঙ্গে সেলফি তোলেন।’
দর্শকদের এই ভালোবাসা ভালো লাগে রাইসার। ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নাটকের পুরো দল তার আরেকটি পরিবার। সেই পরিবারের অনেকেই তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এই নাটকের সবাই তাকে খুব ভালোবাসেন। রুনা খান রাইসাকে ডাকেন মা বলে। অন্যরা তাকে নাটকের চরিত্র ‘তুলি’ বলে ডাকেন। তবে শবনম ফারিয়া নাকি তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।
ডিএইচ