রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি বাংলা সাহিত্যে অমরসৃষ্টি

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি । বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ রচনা গীতাঞ্জলি আর নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা বিশ্বে বাংলা ভাষাকে সুমহান আসনে নিয়ে গেছে। বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে আরোও এক ধাফ এগিয়ে দেন। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির শতবর্ষ অতিবাহিত হয়েছে আর ২০২২ সালে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ চলছে।

বাংলা সাহিত্যে বিশ্বে কবি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলী লিখে আর বাংলাদেশের জাতীয়কবি কাজী নজরুল ইসলাম‘ বিদ্রোহী কবিতা ‘র মাধ্যমে সর্বপ্রথম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা চান।

বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৮-১৯০৯ সালে বাংলা ভাষায় এ গীতাঞ্জলি লেখা শুরু করেন । বেশিরভাগ গীতকবিতা ও গানগুলো রবীন্দ্রনাথের নিজের সুরারোপ এবং ব্রাহ্ম-ভাবাপন্ন ভক্তিমূলক রচনা ছিল। প্রথমেই ১৯১০ সালে বাংলা ভাষায় প্রকাশ হয়। এরপর তিনি ও ইংরেজ কবি ম্যাক মিলান সর্বপ্রথম ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ১৯১২ সালে ।

বিশ^কবি রবীন্দ্র ঠাকুর প্রথম ইংরেজি অনুবাদটি তাঁর শিল্পী বন্ধু ইংল্যান্ডের রোদেনস্টাইনকে পড়তে দেন। তিনি তা পড়ে অবিভূত হয়ে যান। পরে রোদেনস্টাইন প্রখ্যাত ইংরেজ কবি ইউলিয়াম বাটলার ইয়েটসকে দেন। এর পরবর্তীতে কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস ইংরেজিতে অনুবাদ করে এর নাম দেন ‘ সংস অফারেরিং তবে কেউ কেউ বলেছেন-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই গীতাঞ্জলি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।

উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস গীতাঞ্জলির ১৬ পৃষ্ঠার একটি ভূমিকাও রচনা করেন। লন্ডনে ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলি প্রথম ইংরেজিতে সংস্করণ করেন ইন্ডিয়ান সোসাইটি। এটির ইংরেজিতে অনুবাদ কফি ৭৫০ টি ছাপানো হয়। বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল ২৫০ কপি। পাঠক চাহিদার কারণে ১৯১৩ সালে আরো ১৩ বার ছাপানো হয়েছিল। তবে সংখ্যা কতটি তা জানা যায় নি।

কবি ম্যাক মিলানসহ উভয় কবি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে রবীন্দ্রনাথকে পাশ্চাত্য জগতে পরিচিত করেন। এর পর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামটি সুইডিশ নোবেল কমিটির কাছে প্রস্তাব করেছিলেন ইংরেজ কবি ম্যাক মিলান। সুইডিশ নোবেল কমিটি ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর রবীন্দ্রনাথকে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা দেন। বিশ^ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি যখন লিখেন তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।

প্রখ্যাত কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্য উৎসর্গ করেন। ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বও যখন তিনি গীতাঞ্জলি রচনার জন্যে বিশ্ব বিখ্যাত সবচেয়ে সম্মানিত নোবেল পুরস্কার পান তখন তিনি জোড়াসাকোর বাড়িতে অবস্থান করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির আগে দীর্ঘদিন ভ্রমণে কাটিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। দেশে ফেরার কিছুদিন পর তাঁর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন বিদেশি ও প্রবাসী বন্ধু।

তাদেরকে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাহিরের বেড়োনের- ঠিক সে সময়ে স্থানীয় ডাকবিভাগের একজন তাঁর হাতে তুলে দিলেন টেলিগ্রামটি। তিনিই প্রথম এশিয়ার নোবেল বিজয়ী ব্যক্তি। বিশ্ব বিখ্যাত অনেক কবি ও সাহিত্যিকগণ নোবেল পুরস্কার পাননি। এর বেশীরভাগ গীতকবিতাগুলো রবীন্দ্রনাথের নিজের সুরারোপ এবং এগুলো ব্রাহ্ম-ভাবাপন্ন ভক্তিমূলক রচনা ছিল।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দ্বারা সন্মানিত হওয়ার সুবাদে এশিয়া মহাদেশের জ্ঞানী ও সন্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার জয়ের একমাত্র গৌরব অর্জন করেন। অথচ মহাত্মা গান্ধী, টলস্টয়, শেক্সপিয়ার, ফেরদৌস, হাফিজ, রুমি, টমাস হার্ডি, এমিল জোলা,কাফকা, চেখভ, উর্মিলা লরেন্স, ব্লাদমির,সার্ভান্তেস, দস্তয়েভস্কি, ইবসেন, হোর্হে লুই,জেমস জয়েজ, মার্সেল, বেথেলহেম, ভার্জিনিয়া উলফ ও লরেন্স প্রমুখ বিশ্ব বরেণ্য কবি-সাহিত্যিকরা নোবেল পুরস্কার পান নি। কিন্তু তাঁদের রচনায় তাঁরা বিশ্বে অমর হয়ে আছেন। কবিগুরুর সৃষ্ঠিশীল প্রতিভারগুণে গীতাঞ্জলি লিখে তিনি নোবেল পুরস্কার পান ।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ যে-গীতাঞ্জলি’র পুরস্কার হিসেবে পাওয়া নোবেল পুরস্ক্রটি ২০০৪ সালের ২৪ মার্চ দিবাগত রাতে শান্তিনিকেতন থেকে চুরি হয়ে যায়। আবার তিনি ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপরেশন ( বিবিসি)’র রির্পোট অনুযায়ী তাঁেক দ্বিতীয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পরেই তাঁর নামটি ঘোষণা করেন। বিশ্বব্যাপি অনেক খ্যাতিমান ও প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব নোবেল পুরস্কার পাননি। অথচ বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি কাব্য লিখে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ।

রবীন্দ্রনাথের (১৯৬১-১৮৪১) ৮০ বছরের জীবদ্দসায় ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্য সংকলন তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। সবমিলিয়ে তাঁর ৯৫টি ছোটগল্প, ২, ১৭৪ টি গান ও ২,২৬৬ টি কবিতা লেখেন্। যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়াও তিনি প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ছবি অঙ্কন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনাগুলো বিশ্বের বহু ভাষায় অনূবাদিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এ বিশ্ববরেণ্য মহান মানুষটি ছিলেন একাধারেএকজন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক,সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার,চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, দার্শনিক সমাজসংস্কারক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলিলেও অত্যুক্তি হবে না। তিনি পৃথিবীর ৩০টি দেশ ভ্রমণ করেন । কবিগুরুর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রবন্ধটি উৎসর্গ করা হলো ।

লেখক : আবদুল গনি , শিক্ষক , সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক , চাঁদপুর টাইমস , চাঁদপুর – ৩৬০০ । সেলফোন : ০১৭১৮-২১১০৪৪

Share