চাঁদপুরে চলতি রবি মৌসুমে বোরো চাষাবাদ-উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০২৪-’২৫ এর আসন্ন রবি মৌসুমে ব্যাপক বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,খামারবাড়ি চাঁদপুর। চাঁদপুর দেশের অন্যত্তম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জরবায়ু কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। ফলে ব্যাপক বোরোর আবাদ লক্ষ্য করা গেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সবুজ মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্যকৃষকদের মনক উদ্দেলিত করছে। চাঁদপুরে উপজেলাভিত্তিক বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে।

জেলার ৮ উপজেলায় ২০২৪-’২৫ অর্থবছরের ইরি-বোরো চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৬৩ হাজার ২শ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২শ ৫০ মে.টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৯ অক্টোবর এ তথ্য জানিয়েছে। হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়। এদিকে চাঁদপুরের সোনালী ,রুপালী , অগ্রণী ,জনতা ও কৃষি ব্যাংকের শাখাগুলোতে এ বছর ১শ ৯৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা কৃষিঋণ হিসেবে বরাদ্ধ দিয়েছে।

চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬৩ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২শ ৫০ মে. টন চাল। এর মধ্যে এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৪৮ হাজার ২শ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪শ ১০ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ ২ লাখ ৪ হাজার ৮শ ৫০ মে.টন চাল। হাইব্রিড ১৫ হাজার হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪৯৫ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৪শ’ মে.টন।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, উপজেলা ভিত্তিতে চাঁদপুর সদরে আবাদ ৫ হাজার ১শ ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার ৪শ ৮৭ মে.টন্। মতলব উত্তরে আবাদ ৯ হাজার ৯শ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ১শ ২১ মে.টন্। মতলব দক্ষিণে আবাদ ৪ হাজার ৪শ ৪৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৬শ ৫৮ মে.টন। হাজীগঞ্জে আবাদ ৯ হাজার ৪ শ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪১ হাজার ৮শ ৪৬ মে.টন্। শাহারাস্তিতে আবাদ ৯ হাজার ৩শ ৮৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৭শ ৬৩ মে.টন । কচুয়ায় আবাদ ১৩ হাজার ২শ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৬ হাজার ৮শ ৬৫ মে.টন্। ফরিদগঞ্জে আবাদ ৯ হাজার ৯শ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ৩শ ৪৮ মে.টন্ । হাইমচরে আবাদ ৬শ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯৬ মে.টন্।

এদিকে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় চলতি ২০২৪-’২৫ বছরের রবি মৌসুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আগাম চাষাবাদের জন্যে ২শ মে.টন বোরো ও ৮ মে টন সরিষাবীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বীজগুলো সরকারি নির্দেশিত মোড়কে পাওয়া যাবে। জেলার সব উপজেলার ১শ ২৮ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব বীজ স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারে ইতোমধ্যেই পৌঁছানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ খামার বাড়ি,চাঁদপুরের বীজ সরবরাহ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো.খায়রুল বাশার ২২ সেপ্টেম্বর আমাদের এ প্রতিনিধিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্ব-স্ব উপজেলার হাট-বাজারের অনুমোদিত ডিলারগণ এ বীজ কৃষকগণের নিকট বিক্রি করবে বলে চাঁদপুর বীজ বিতরণ কেন্দ্র জানান। বিত্রডিসির জেলা বীজ সরবরাহ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক (বীজ) বলেন ,‘চাঁদপুরে বরাদ্দের বীজ ইতোমধ্যেই পৌঁছা শুরু হয়েছে। ডিলারদের মধ্যে বিতরণ চলছে। প্রতিটি প্যাকেটে নির্ধারিত মূল্য সংযোজন করা হয়েছে। ক্রয়ের সময় কৃষকবন্ধুদের তা’দেখে নিতে তিনি অনুরোধ জানান্। কৃষক সরসরি বীজ কেন্দ্র থেকে সরকারিভাবে বেঁধে দেয়া মুল্যে ক্রয় করতে পারবে।’ এদিকে বন্যাত্তোর পুর্নবাসন কল্পে ও উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত জেলার সকল উপজেলার ১৫ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে ।

চলমান রোপা আমন চাষাবাদের জন্যে ১০ হাজার স্ব স্ব উপজেলার তালিকাভুক্ত কৃষককে ৫ কেজি করে বীজ ধান, ১০ কেজি করে ডিএফপি সার, ১০ কেজি করে এমওপি সার,ও নগদ ১ হাজার টাকা করে বিকাশে প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ি চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ঠ কৃষিবিদ মো. মোবারক হোসেন ২২ সেপ্টেম্বর এ তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, বসতবাড়িতে উচুঁ স্থানে শাক-সবজি চাষাবাদে ৫ হাজার কৃষককে বিভিন্ন উন্নত জাতের শাক-সবজির বীজও প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হবে। উপজেলা কমিটি কর্তৃক বাছাইকৃত কৃষকগণ এ সুবিধা পাবেন। এবারের বন্যায় চাঁদপুরের ৪৭ হাজার ৬শ ৮৪ জন কৃষক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাই কৃষকগণের কথা ভেবে কৃষিবিভাগ প্রাথমিক ভাবে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে ঔ কৃষিবিদ জানান।

প্রসঙ্গত , সাড়ে ২৬ লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবি। ধান,গম, আলু, সরিষা পাট,সয়াবিন, আখ, অভিন্ন শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১০,১৬,১৭,১৯ এর আওতাভুক্ত। জেলার বর্তমান ফসলের নিবিরত ১৯১%। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্প জেলার ৪ উপজেলা সদর,ফরিদগঞ্জ,মতলব উত্তর,হাইমচরে ২৩ হাজার ৩ শ’৯০ হেক্টর জমি রয়েছে। জেলায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪শ ৮৯টি কৃষি পরিবার রয়েছে।

জেলার খাদ্যের প্রয়োজন গড়ে ৪ লাখ ১২ হাজার মে.টন। বিগত দিনে খাদ্য ঘাটতি ছিলো। উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি চালুকরণ ও আধুনিকতার আবাদের মাধ্যমে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ মে. টন। খাদ্য উৎপাদনে সরকার বিদ্যুৎ ও সার ভর্র্তূ’কি এবং ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে কৃষিঋণ বিতরণ করছে। স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারের অনুমোদিত ডিলারগণ এ বীজ কৃষকগণের নিকট বিক্রি করবে বলে চাঁদপুর বীজ বিতরণ কেন্দ্র জানান।

ধান,গম,আলু,পাট,আখ,ভূূট্টা,পেঁয়াজ,রসুন,তিল,মুগ-মুসারি,মিষ্টি আলু,সোয়াবিন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। চাঁদপুরে ১২ টি হিমাগার ও ১ টি বীজভান্ডার রয়েছে। যাতে ৬০ হাজার মে. টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাকি আলু সংরক্ষণে আলুচাষীদের কৃত্রিম প্রযুক্তি দেয় কৃষিবিভাগ দেশের খাদ্য বিভাগের গবেষণালদ্ধ জ্ঞান ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ,সরকারের প্রদত্ত কৃষির উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার,সেচ সুবিধা,সার ও বিদ্যুৎ ভর্তূকি, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে দিন দিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

বর্তমানে চাঁদপুরের কৃষক ও কৃষক পরিবারও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে খুবই আগ্রহী। জলবায়ূ পরিবর্তনে ফলে তাদের যথাসময়ে ও সঠিকভাবে প্রদর্শিত পথ দেখাতে পারলে খাদ্য ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হতে পারবে। প্রতি বছর গড়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ মে.টন। এক সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রকট। চাঁদপুর জেলাকে ২৭৪ টি কৃষিব্লকে ভাগ করে সকল প্রকার প্রযুক্তি উপজেলাভিক্তিক প্রদান করা হয়ে থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে । চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা-চাঁদপুর সদর, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে ২৩ হাজার ৩শ’ ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দু’টোতে। জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন।

প্রতিবেদক :আবদুল গনি
১০ অক্টোবর ২০২৪
এজি

Share