বাংলাদেশে ৮০টি প্রজাতির সাপ রয়েছে। সাপ ও সাপের বিষ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির প্রধান অধ্যাপক এমএ ফায়েজ বলেছেন, দেশে যেসব সাপ রয়েছে, তার মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়।
সাপে কাটার ঘটনা গ্রামাঞ্চলে এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশি ঘটে থাকে। স্থলভূমিতে থাকা সাপ পায়ে বেশি দংশন করে। সামুদ্রিক সাপও অত্যন্ত বিষাক্ত হয়। বাংলাদেশে ২৩ ধরণের সামুদ্রিক সাপ রয়েছে, সেগুলো মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের দংশন করে।তবে সমুদ্রের গভীরে তাদের অবস্থান হওয়ায় সাধারণত এই সাপের কামড়ের ঘটনা বিরল।
তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যত মানুষ সাপের দংশনে মারা যায়, তার চারগুণ মানুষের নানা রকম অঙ্গহানি ঘটে, কেউ শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে যান, এবং কেউ দীর্ঘদিন মানসিক ট্রমা ভোগ করেন।
বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী যে সাত প্রজাতির বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়
১. নায়া নায়া : এটি কোবরা বা গোখরা প্রজাতির সাপ, এর বৈজ্ঞানিক নাম নায়া নায়া।এটি স্থলভূমির সাপ, এটি ফণা তোলে এবং এর ফণায় চশমার মত দু টি বলয় থাকে। দেশের পশ্চিম অংশেই অর্থাৎ রাজশাহী অঞ্চলের দিকে প্রধানত এ সাপের বসবাস।
২. নায়া কাউচিয়া : এটিও গোখরা প্রজাতির সাপ, স্থানীয়ভাবে একে জাতি সাপ বা জাত সাপও বলে থাকে। এ সাপ ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকায় থাকতে পছন্দ করে।
৩. কিং কোবরা বা শঙ্খচূড় : একে রাজ গোখরাও বলা হয়। ভয়াবহ বিষধর এ শঙ্খচূড় অন্য গোখরার তুলনায় আকৃতিতে বেশ লম্বা। এর ফণায় অন্য গোখরার মতো চশমার মত বলয় থাকে না। শঙ্খচূড় বাংলাদেশ, ভুটান, বার্মা, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এসব দেশে বেশি দেখা যায়।
৪. ক্রেইট বা শঙ্খিনী : এ সাপকে শঙ্খিনী এবং শাঁকিনী সাপ নামেও ডাকা হয়। পৃথিবীতে ক্রেইট বা শঙ্খিনী জাতের সাপের মোট ৮টি প্রজাতি রয়েছে, এর মধ্যে ৫টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এ ক্রেইট জাতের সাপকে স্থানীয়ভাবে কেউটেও বলা হয়। এ সাপ বাড়ির আশপাশে বা লাকড়ির মধ্যে শুকনো জায়গায় থাকে।
৫. কালো নাইজার : এটিও শঙ্খিনী জাতের সাপ এবং বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যায় রয়েছে এ সাপ। এটি চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল, নোয়াখালী এবং সুন্দরবন অঞ্চলে দেখা যায় বেশি।
৬. চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার : চন্দ্রবোড়ার আরেক নাম উলুবোড়া। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বিষাক্ত। এই সাপটি প্রায় একশো বছর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, অর্থাৎ পরপর কয়েক দশকে এর কোন একটি সাপেরও দেখা মেলেনি। কিন্তু গত ১০/১২ বছর আগে থেকে আবার এই সাপে দংশনের ঘটনা ঘটার প্রমাণ দেখা যায়।
টক্সিকোলজি সোসাইটির অধ্যাপক ফায়েজ বলছিলেন, প্রথমে রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপের অস্তিত্বের প্রমাণ মিললেও, এখন এই সাপ বেড়ে ক্রমে ফরিদপুর অঞ্চল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই সাপ হঠাৎ করে কেন আর কিভাবে ফেরত এসেছে, তা নিয়ে এখন বাংলাদেশে গবেষণা চলছে। এ সাপ কাটলে স্নায়ু অবশ হয়ে আসে, রক্ত জমাট বেধে যায়।
৭. সবুজ বোড়া : সবুজ বোড়া বা গ্রিন ভাইপার সাপকে স্থানীয়ভাবে গাল টাউয়া সাপও বলে। এর মাথার অংশ মোটা বলে এ নামকরণ। এ জাতের মোট ছয়টি প্রজাতি বাংলাদেশে দেখা যায়। এ সাপ সুন্দরবন এবং পাহাড়ি এলাকার জঙ্গলে থাকে বলে এটি মানুষের মুখে মাথায় এবং গায়ে দংশন করে। এর দংশনে স্নায়ু ও মাংসপেশীতে রক্তপাত হয় এবং মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। এই সাপটিকে জউরা নামেও ডাকা হয়। এ সাপ ফণা তোলে। এটি মূলত দেশের পূর্ব অংশ অর্থাৎ সিলেট, নোয়াখালী এলাকায় বেশি থাকে। দেশে যত সর্প দংশনের ঘটনা ঘটে, এর কামড়ে ঘটে সর্বোচ্চ। সূত্র: বিবিসি
২১ জুলাই ২০২৩
এজি