শীর্ষ সংবাদ

যে কারণে সাধারণ মানুষের প্রিয়জন হয়ে ওঠছেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক

একজন সাধারণ মানুষের মতোই খুব সকালে এবং পড়ন্ত বিকেলে তিনি হাঁটতে বের হন। তাঁর হাটারস্থানগুলো প্রায় প্রতিদিনই পরিবর্তন হয়। এসব স্থানগুলো কোনো কৃত্রিম সোন্দর্যে মোড়ানো পার্ক কিংবা খেলার মাঠ নয়। তিনি হাঁটেন একেবরে খেটে-খাওয়া কিংবা অসহায় মানুষেরা যেখানে বসবাস করে সেখানে। হাঁটতে হাঁটতে তিনি এসব সাধারণ মানুষের খুব কাছে চলে যান।

তাদের জীবন-জীবিকার গল্প শোনেন, সমস্যা আর অভাব অনটনের কথাগুলো শোনেন। অসহায় মানুষের সমস্যার কথাগুলো আবার সাথে থাকা নিজের প্যাডে লিপিবদ্ধ করেন। এরপর হঠাৎ করেই তিনি পূণরায় স্ব-শরীরে (দু-একদিনের মধ্যে) ওই অসহায় পরিবারের জন্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। টি সার্ট, ট্রাউজার আর সু পরা কে এই ভদ্রলোক? সাধারণ মানুষ প্রথমে জানতে না পারলেও দু’একদিন পরেই তারা তা জেনে যান।

২৯ এপ্রিল (২০১৮) এক পড়ন্ত বিকেলে তিনি মেঘনা নদীর পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে চাঁদপুর শহরতলীর দোকানঘর এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে নদী পাড়ে বসবাসরত মেঘনার করাল গ্রাসে সর্বশান্ত হওয়া গৃহহীন কিছু পরিবারের সাথে কথা বলেন। শুনলেন তাদের দুর্দশার কথা। ঝড় বাদলে তাদের সংগ্রামী জীবনের কথা। এরপরে নিজের হাতে ভাগ্যাহত এই গৃহহীনদের তালিকা করেন।

অতঃপর বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে পূণরায় সেখানে উপস্থিত হন। জেলা প্রশাসকের নিজের হাতে তালিকা করা ১৫ পরিবারকে ঘর নির্মানের জন্যে ৬ বান টিন, ১২০ কেজি করে চাল এবং নগদ ৪৩ হাজার টাকার সহায়তা তুলে দেন ঐসব অসহায় পরিবারের হাতে।

এটি কোনো গল্প বা উপন্যাস নয়, এটি বাস্তব জীবনে চাঁদপুরের ১৯ তম জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানের একটি ঘটনার কথা। ফরিদপুরের সদরের এই কৃতী সন্তান গত ৪ মার্চ নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং ৬ মার্চ থেকে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন।

বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণকালে তিনি তার বক্তব্যে বলেছিলেন, একজন গুণি মানুষ তার কাজকে একটি ধন্য ইবাদত হিসেবে দেখেন। আর তখনই ওই মানুষের কর্ম তাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যায়। আমি সবার সহযোগিতায় চাঁদপুরকে এক নতুন ক্যানভাসে আঁকতে চাই’।

জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে আরো বলেছিলেন, চাঁদপুরকে নিয়ে কি কি কর্মপরিকল্পনা আছে তা আমি বলছি না, তবে এখানে দায়িত্বকালিন সময়ে যা কিছু মঙ্গলকর তার সাথে আমি আছি এবং থাকবো। ছোট ছোট কাজ করেও মানুষের মন জয় করা যায়। জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান তার কথা রাখতে শুরু করেছেন।
প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ছোট ছোট ভালো কর্মকান্ড দিয়ে তিনি জেলাবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিসি চাঁদপুর পেজে এসব ছোট ছোট ভালো কাজগুলো দেখে চাঁদপুরবাসী জেলা প্রশাসকের ভূয়শী প্রশংসা করছেন। সাধারণ মানুষের এতোটা কাছে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা শুনে তার সমাধানে সহযোগিতা করায়, কমেন্টে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি ডিসি চাঁদপুর ফেইসবুক পেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আরো দেখা যায়, ২ এপ্রিল শহরের বাবুরহাট এলাকায় ঝড়ের কবলে দূর্ঘটনায় ইমান হোসেন নামের স্কুটার চালকের মৃত্যুর খবর পেয়ে সাথে সাথে তিনি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ছুটে যান। এসময় তিনি চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করে বিনা ময়না তদন্তে নিহতের লাশ দাফনের ব্যাবস্থা করেন এবং নিহতের ভাইকে প্রথামিক পর্যায়ে দশ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।

গত পয়লা মে সকালে হাঁটতে গিয়ে কথা বলেন এক হাত ট্রেনেকাটা বিলাতুননেছা নামের একজন অসহায়র বৃদ্ধার সাথে। অভুক্ত বৃদ্ধাকে সকালের নাস্তা করিয়ে ১০ কেজি চাল, ৫৩০ টাকা, একটি নতুন শাড়ী, ২টি গেঞ্জি এবং তার দেখাশুনা করে যে অসহায় এক মহিলা তার বাড়ীতে যাওয়া এবং তাকে চাল ও কাপড় তুলে দেন। এছাড়াও অসহায় নারীটি যাতে দীর্ঘ দিন খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন সে ব্যাবস্থা করা হয়। এছাড়াও তৎক্ষনাত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাঁদপুর শহরের বস্তিবাসীদের সাহায্যের জন্যে একটি তালিকা করা হয়।

এর আগে সর্বপ্রথম তিনি দায়িত্ব নেয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে চাঁদপুর থেকে লঞ্চযোগে ঢাকা যাওয়ার সময় পরিচয় গোপন রেখে মানুষের সমস্যার কথা শুনে এবং লঞ্চে ভিক্ষা করা একজন অসহায়কে দোকান করার টাকা দিয়ে সবার নজরে আসেন।

মাত্র দু’মাসের কর্মদিবসে তিনি এমন বহু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বহু ভিক্ষুক বা কর্মোক্ষম ব্যক্তিকে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করার জন্যে নগদ অর্থ এবং দোকানের মালামাল ক্রয় করে দিয়েছেন। অসহায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে লেখা-পড়ার জন্যে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। এই ছোট ছোট ভালো কাজের মাধ্যমে একটিদন হয়তো চাঁদপুর বাসীর হৃদয়ে বড় একটা অংশ তিনি জয় করে নিবেন। যা তাঁকে অনন্তকাল মনে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ্যঃ চাঁদপুরের ১৯ তম জেলা প্রাসক মো. মাজেদুর রহমান খান সর্বশেষ যশোর জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের (উপ-সচিব) দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর জন্মস্থান ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায়। পারিবারিক জীবনে তিনি ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কন্যা সন্তানেরর জনক।

২০ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআইতে নিয়োগ পেয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সবশেষে উপ-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৬ সালের ৭ মে যশোরে স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগদান করেন। ২৫ ফেব্রæয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীসহ দেশের ২২ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয়া হয়। এ ২২ জনের মধ্যে মো. মাজেদুর রহমান খান একজন। এ প্রজ্ঞাপনে সধারণত সরকারের উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়।

প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম

Share